ভাতাভোগীদের ভোটদান হউক স্বতঃস্ফূর্ত
.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০০:২৯
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করিতে বিশেষত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে রাষ্ট্রীয় ভাতাভোগীদের ভোটকেন্দ্রমুখীকরণে প্রশাসনকে ব্যবহারের উদ্যোগ চলিতেছে বলিয়া শুক্রবার সমকাল যে সংবাদ দিয়াছে, উহা অন্য সকল সচেতন মহলের ন্যায় আমাদেরও উদ্বিগ্ন করিয়াছে। প্রতিবেদনমতে, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার আওতাধীন প্রায় এক কোটি ভোটারকে আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন কেন্দ্রে আনিতে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা গৃহীত হইয়াছে। এমনকি ভোট না দিলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং ভাতা বন্ধ হইবে– এমন কথাও ভোটারদের স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইতেছে। আমরা জানি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রতি বৎসর রাষ্ট্র যে বরাদ্দ দেয়, আমাদের সংবিধান উহা ভোগের এখতিয়ার শুধু সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদেরই দিয়াছে। উপরন্তু সংবিধান অনুসারে জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিদ্যমান আর্থিক বৈষম্য হ্রাসকল্পে রাষ্ট্র বাধ্য বলিয়াই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের উক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। মোদ্দা কথা, ভাতাভোগীদের ঐ অধিকার কোনোদিক হইতেই বিনিময়যোগ্য নহে। অতএব উহা বাতিলের হুমকি দিয়া তাহাদের ভোটকেন্দ্রে যাইতে বাধ্য করা যায় না।
আসন্ন নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য না হইলে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও তাহার মিত্রদের তরফ হইতে নানা নিষেধাজ্ঞা আসিতে পারে বলিয়া গুঞ্জন রহিয়াছে। সম্ভাব্য ওই বিদেশি চাপ সামাল দিবার কৌশলরূপেই সরকার আসন্ন নির্বাচনে যথেষ্ট সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ঘটাইতে চাহে। কিন্তু আমাদের কথা হইল, এহেন পরিস্থিতির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতাভোগীরা দায়ী নহে। অতএব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়ও তাহাদের হইতে পারে না। আমরা জানি, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাধারণত সংসদ নির্বাচন হয় দুই বা ততোধিক শক্তিশালী দলের মধ্যে, যথায় ভোটারদের সম্মুখে পছন্দানুযায়ী ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল বাছিয়া লইবার সুযোগ থাকে। তাই ভোটের দিন যত আগাইয়া আসে, ততই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রমুখী হইবার তাড়না বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিশাল প্রভাবের সম্মুখে দাঁড়াইবার সামর্থ্য রাখে, এমন কোনো দল নাই। ফলে নির্বাচনের মাত্র সাত দিন অবশিষ্ট থাকিলেও বিশেষত উহাতে কে জয়লাভ করিবে বা সরকার গঠন করিবে, তাহা লইয়া কোথাও কোনো আলোচনা নাই। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও অন্তত অদ্যাবধি ভোট লইয়া তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হইতেছে না।
নির্বাচনে গণতন্ত্রপ্রিয় সকলের প্রত্যাশামাফিক বর্তমান শাসক দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাহার সমমনা দলগুলি অংশগ্রহণ করিলে নিঃসন্দেহে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হইত না। তবে ইহার পশ্চাতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে চণ্ডনীতি না বিএনপির ‘নির্বাচনবিমুখ’ রাজনীতির ভূমিকা অধিক– সেই তর্কে প্রবৃত্ত না হইয়া আমরা বরং বলিতে চাহি, উহার জন্য সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বলির পাঁঠা বানানো যাইবে না। আলোচ্য ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যবহার নির্বাচনকেও অধিকতর প্রশ্নের মুখে ফেলিবে। তবে প্রার্থীদের সমর্থকরা যদি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভোটদানে আগ্রহ সৃষ্টি করিতে পারেন, উহাতে নিশ্চয় কাহারও আপত্তি থাকিবে না।