ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

সংসদীয় বিরোধী দল বলিয়া কিছু রহিল কি?

সংসদীয় বিরোধী দল বলিয়া কিছু রহিল কি?

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:৩০

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, সরকারের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার নবায়ন ঘটানো– উভয়ই মোটামুটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা গিয়াছে। এখন প্রশ্ন হইতেছে, টানা চতুর্থবারের মতো একই দলের সরকার ক্ষমতাসীন হওয়া মানে কি অতীতের সকল কার্যক্রমই চলিতে থাকা?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিন্যাসের কোনো পরিবর্তনই আনিতে পারে নাই। ইহার প্রথম কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাহা হইয়াছে তাহা হইয়াছে আওয়ামী লীগেরই প্রতীকধারী এবং প্রতীকবঞ্চিতগণের মধ্যে– ২০২৪-এর নির্বাচনী পরিভাষায় যাহাদের আমরা নৌকা এবং স্বতন্ত্র নামে চিনিয়াছি। ইহার বাইরে জাতীয় পার্টির দ্বিধান্বিত অংশগ্রহণও কোনো আলাদা অর্থ বহন করে না। কেননা, গত সংসদের ন্যায় এইবারও তাহারা সরকারের আনুকূল্য লইয়াই নির্বাচনে দাঁড়াইয়াছিল। এই তিনটি বর্গ আবার একই দল বা জোট এবং একই মতাদর্শের মানুষ। নির্বাচন শুধু ব্যক্তি প্রার্থীর সহিত ব্যক্তি প্রার্থীর প্রতিযোগিতা নহে, ইহা রাজনৈতিক আদর্শ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কর্মসূচিরও প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা যখন হইতে পারে, তখন সকল দল ও মতাদর্শের সমর্থকেরাও ভাবিতে পারেন যে, নির্বাচনের মাধ্যমে তাহাদেরও শক্তিসামর্থ্য ও জনপ্রিয়তা যাচাই হইল। ভোটারেরাও তখন মাথা খাটাইয়া, প্রতিদ্বন্দ্বীদের রেকর্ড যাচাই করিয়া এবং নিজের ও প্রতিপক্ষের আদর্শ ও কর্মসূচি তুলনা করিয়া থাকেন। এই রকম দলীয় ও আদর্শিক প্রতিযোগিতা হইতেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিপুষ্ট হয়, দেশও নূতন নেতৃত্বের জোগান পায়। এই নির্বাচনে এইসবের কিছুই যেহেতু হইতে পারে নাই, সেহেতু ইহাকে নিয়মরক্ষার নির্বাচনের বেশি কিছু বলা যায় না। দ্বিতীয় শুধু বিরোধী দলের অংশগ্রহণই নহে, ভোটারদের অংশগ্রহণের দিক হইতেও নির্বাচনটি দারিদ্র্যসীমার উপরে রাখা যাইতেছে না। সুতরাং ভোটার সংখ্যার ১৯-২০ লইয়া বিতর্কের তেমন কোনো অর্থ নাই।

মূল প্রশ্ন এখন দুইটা: বিরোধী দল কাহারা হইবে এবং নূতন করিয়া দায়িত্ব লওয়া পুরাতন সরকার নূতন কী প্রতিশ্রুতি লইয়া আসিবে। বিগত সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা ২৩ হইতে ১১টিতে নামিয়াছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র তকমার অধিকারীদের সংখ্যা ৬২ এবং তাহারাও ক্ষমতাসীন দলেরই সদস্য অথবা তাহাদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়ধন্য। এই স্বতন্ত্রগণ যদি কোনো রাজনৈতিক জোট বা সংসদীয় ব্লক হিসেবে আবির্ভূত না হন, তাহা হইলে সংসদে বিরোধী দল হইবে ঐ পড়িয়া পাওয়া চৌদ্দ আনার দল জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে নিন্দা করিয়া জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা জি এম কাদের যে ইঙ্গিত রাখিয়াছেন, তাহাতে মনে হইতেছে, তাহারাই হইবে বিরোধী দল। কিন্তু সরকারের অনুগত জাতীয় পার্টির মাত্র ১১ জন এমপিকে কার্যত না হোক নামমাত্র বিরোধী দল বলিয়া মানিয়া লওয়াও কষ্ট। সেই একই কুমিরের ছানাকে আর কতবার প্রদর্শন করা হইবে? সুতরাং রাজনৈতিক সংকট রহিয়াই গেল। তাই জানিতে ইচ্ছা করে, এই সংসদ কি একপ্রকার বিরোধী দলবিহীনভাবেই চলিবে?

আরও পড়ুন

×