পাট রপ্তানিতে উদ্বেগজনক ধস

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৩:২৬
রপ্তানিমুখী পাট খাতের সংকট লইয়া মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট সকলের, বিশেষত নীতিনির্ধারণী মহলের গভীর মনোযোগ দাবি করে বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদনমতে, কাঁচা পাট তো বটেই; পাটের সুতা, বস্তা, পাটপণ্য– সর্বক্ষেত্রেই রপ্তানি হ্রাস পাইতেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুসারে, চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবৎসরের প্রথমার্ধ, অর্থাৎ গত জুলাই হইতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি বিগত অর্থবৎসরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সোয়া ১০ শতাংশ হ্রাস পাইয়াছে, যাহা লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা ১২ শতাংশ কম। উক্ত সময়ে মোট ৪৩ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হইয়াছে, যাহা বিগত অর্থবৎসরের একই সময়ে ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবৎসরের একই সময়ে ছিল ৫৯ কোটি ডলার। পাট চাষ হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন পাটপণ্য প্রস্তুতকার্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ যুক্ত। উপরন্তু এই খাতে মূল্য সংযোজন প্রায় শতভাগ, যাহার নিকটবর্তী অন্য কোনো রপ্তানি পণ্য নাই। অর্থাৎ কর্মসংস্থান এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের নিরিখে পাট খাত যেই বিপুল সম্ভাবনা ধারণ করে; বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উহা নষ্ট হইবার উপক্রম।
আমরা জানি, মোট পাটপণ্য রপ্তানির ৬০ শতাংশই যায় ভারতে। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানির উপর ভারত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক উচ্চ মাত্রায় আরোপের পর হইতেই এই খাতে রপ্তানি আয় হ্রাস পাইতে থাকে। অতএব পাটপণ্য রপ্তানির এই সংকটের জন্য মূলত দুইটা কারণকে দায়ী করা যায়– শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দিল্লির অগ্রাধিকার তালিকায় প্রতিবেশীদের মধ্যে ‘ঢাকা প্রথম’– ভারতের এমন ঘোষণার সুফলপ্রাপ্তিতে আমাদের ব্যর্থতা এবং পাটপণ্য রপ্তানির জন্য ভারতের বিকল্প বাজার গড়িয়া তুলিতে যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়া। পাটপণ্য রপ্তানিকারকদের সরকার ঘোষিত নীতি কিংবা আর্থিক সহায়তা না পাওয়াটাও এই সংকটে অবদান রাখিয়াছে।
আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্যাটি সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে এবং একদার প্রধান রপ্তানি পণ্য সেনালি আঁশের হৃতগৌরব ফিরাইয়া আনিবে।