এতদিন কোথায় ছিলেন?

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৩:২৬
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লিখিত সম্পত্তির বিবরণী খতাইয়া দেখিবার যেই উদ্যোগ দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক গ্রহণ করিয়াছে, উহা আমরা সতর্কতার সহিত স্বাগত জানাই। কোনো কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের উপার্জন পাঁচ বৎসরে দুই সহস্র শতাংশেরও অধিক বৃদ্ধি পাইবার বিষয়টি আর যাহাই হউক, স্বাভাবিক হইতে পারে না। যথায় বিদ্যমান ভূমি আইন অনুযায়ী, কৃষি ও অকৃষি মিলাইয়া কাহারও শত বিঘার অধিক ভূমির মালিক হইবার সুযোগ নাই; তথায় মন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্যগণ আক্ষরিক অর্থেই শত শত বিঘা ভূমির মালিক হইয়াছেন কী প্রকারে? মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য কিংবা প্রার্থীগণের পোষ্যদের সম্পত্তির হিসাব আমলে লইলে চক্ষু চড়কগাছ হইতে বাধ্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীগণের মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ‘নজিরবিহীনভাবে’ বৃদ্ধি পাইবার যেই চিত্র গত মাসের
শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গবেষণায় উঠিয়া আসিয়াছিল, উহার পর দুদকের পক্ষ হইতে এইরূপ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্পও নাই। তথাপি স্বাগত জানাইবার সময় আমাদের সতর্ক থাকিবার হেতু হইল তিক্ত অভিজ্ঞতা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হইতে সম্পত্তির হলফনামা জমা ও উহা প্রকাশ করিবার বিধান প্রবর্তিত হইবার পর প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে আমরা অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে যদিও হলফনামার সম্পত্তির উৎস খতাইয়া দেখিবার তাগিদ দিয়াছি; দুদকের গর্জন ও বর্ষণের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়াছে বৈ কমে নাই। এইবার আমরা দেখিতে চাহিব, নির্বাচনী হলফনামায় ‘অস্বাভাবিক’ সম্পত্তি উল্লেখকারী শতাধিক প্রার্থীর তালিকা তৈয়ার করিয়াই সংস্থাটি ক্ষান্ত হইবে না। দুদক অবশ্য দাবি করিয়া থাকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার সম্পদ অনুসন্ধান শেষে অতীতে যাহাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গিয়াছে; সকলকেই আইনের আওতায় আনা হইয়াছিল। কিন্তু স্মৃতিশক্তি প্রাণপণে খাটাইয়াও কোনো ব্যক্তির শাস্তি হইবার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিতে পাইতেছি না। যদি শাস্তিই না হয়, কেবল আইনের আওতায় আনিবার ভয় দেখাইয়া লাভ কী? হলফনামায় সকল সম্পত্তি এবং উহার সঠিক বাজারমূল্য নির্ধারিত হইয়াছে কিনা– সেই প্রশ্নটিও দুদকের ভুলিয়া যাওয়া চলিবে না।
দুদকের সহিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও আমরা পুনর্বার তাগিদ দিতে চাহি। হলফনামায় উল্লিখিত বিপুল সম্পত্তি ও প্রবৃদ্ধির কত অংশ আয়করের আওতায় আসিয়াছে– বিষয়টি খতাইয়া দেখিলে সরকারের তাহাতে লাভ বৈ লোকসান হইবে না, উহা কাণ্ডজ্ঞান দিয়াই উপলব্ধি করা যায়। নির্বাচনী হলফনামা দেখিয়া দুদক কিংবা রাজস্ব বোর্ডের সক্রিয় হইবার বিষয়টি যে পরীক্ষার পূর্বরাত্রে ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীর ‘সাজেশন’ খুঁজিবারই নামান্তর– উহাও আমরা স্মরণ করাইয়া দিতে চাহি। পাঁচ বৎসর কিংবা ততোধিক কালব্যাপী এই সকল ‘পাবলিক ফিগার’ যখন স্বীয় সম্পত্তি অস্বাভাবিক মাত্রায় বর্ধিত করিতেছিল, তখন তাহারা কোথায় ছিলেন? দুর্নীতি দমন ও রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব যাহাদের স্কন্ধে, তাহারা কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’-এর ন্যায় অকস্মাৎ আসিয়া সাক্ষাৎ দিলে আর যাহাই হউক দেশে সুশাসন আসিবে না।