নৌপথের গুপ্তঘাতক বাল্কহেড
প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ১১:৪৩
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে বুধবার সংঘটিত পণ্যবাহী ফেরিডুবির ঘটনা বিস্ময়কর। ৯টি কাভার্ডভ্যান লইয়া চলার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন বিশাল আয়তনের ফেরিটি নোঙর করা হইলেও, এমনকি পূর্ব হইতে বিপদের আভাস পাইলেও কেন তাহা রক্ষা করা যায় নাই? ফেরিডুবির ক্ষেত্রে বাল্কহেডের ধাক্কার যেই অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহা অধিক গুরুতর।
কারণ, ইতোপূর্বে বাল্কহেডের কারণে নৌপথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। সেই কারণে দেশের সকল নৌপথেই রাত্রিকালে বালুবাহী ‘বাল্কহেড’ চলাচল নিষিদ্ধ। এইগুলিতে যদ্রূপ পর্যাপ্ত আলোস্বল্পতা, তদ্রূপ বেপরোয়া গতির কারণে প্রয়োজনের মুহূর্তে তৎক্ষণাৎ পথ পরিবর্তন বা গতিরোধও সম্ভবপর নহে। বস্তুত রাত্রিকালের নৌপথে বাল্কহেডগুলি যেন মূর্তিমান আতঙ্ক। নিষিদ্ধ থাকিলেও ঘাতক এই যানগুলির অব্যাহত চলাচলে এইরূপ দুর্ঘটনা ঘটিকেই থাকিবে।
পাটুরিয়ার দুর্ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ‘রজনীগন্ধা’ ফেরির দ্বিতীয় মাস্টারের সন্ধান মিলে নাই। আরিচা ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি ইউনিট আসিয়া কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করিতে সক্ষম হইলেও মাস্টারের অনুসন্ধানে তাহাদের অভিযান অব্যাহত ছিল। উদ্ধারকারী জাহাজগুলির মাধ্যমে ফেরিতে থাকা ৯টি কাভার্ডভ্যান হয়তো উত্তোলন করা যাইবে, কিন্তু সেইগুলিতে যে সকল পচনশীল পণ্য রহিয়াছে, তাহার কী হইবে? বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে এক ব্যবসায়ীর কথা আমরা জানিতে পারি, ফেরিতে থাকা দুইটা কাভার্ডভ্যানে যাঁহার প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ভুট্টা ছিল। আমরা মনে করি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণে ব্যবস্থা করা দরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে নৌ দুর্ঘটনা বলা চলে হ্রাস পাইয়াছে। কিন্তু রাত্রিকালের নৌপথ যে এখনও অনিরাপদ– আলোচ্য ফেরি দুর্ঘটনা তাহারই প্রমাণ। আমরা চাহি, দিবারাত্রি ২৪ ঘণ্টাই নৌপথের নিরাপত্তা বিধান করা হউক। ফেরিসহ সকল নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে এইগুলির ফিটনেস দেখাও জরুরি। রাত্রিকালে বাল্কহেড যাহাতে চলিতে না পারে, তজ্জন্য কর্তৃপক্ষকে উৎকর্ণ থাকিতে হইবে। তৎসহিত পাটুরিয়ার ন্যায় ব্যস্ত নৌপথগুলিতে ‘নৌ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ প্রবর্তন বিবেচনা করা যাইতে পারে।