ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

নিশ্চিন্ত মনে দন্তচর্চাও সম্ভব নহে?

নিশ্চিন্ত মনে দন্তচর্চাও সম্ভব নহে?

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০২:২২ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৭:৩৮

দন্তচর্চার রাসায়নিক মিশ্রণ তথা ‘টুথপেস্ট’ খাদ্যপণ্য না প্রসাধনী– সেই প্রশ্নের মীমাংসা এখনও সম্ভব না হইলেও এই ব্যাপারে সন্দেহ নাই যে, ভোক্তা-সংস্কৃতি সম্প্রসারণের সহিত তাল মিলাইয়া উহা দেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছাইয়া গিয়াছে। বহুল ব্যবহৃত এই পণ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি লইয়া পূর্বেও নানা সন্দেহ উত্থাপিত হইলেও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডোর গবেষণায় স্থানীয় বাজার হইতে সংগৃহীত টুথপেস্টে উদ্বেগজনক মাত্রায় প্যারাবেন, সোডিয়াম ও ডাইক্লোরাইডের ন্যায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি মিলিয়াছে। এই সকল রাসায়নিক উচ্চমাত্রায় ব্যবহৃত হইলে হরমোনজনিত ভারসাম্য বিনষ্টসহ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও বৃক্কের জটিলতা সৃষ্টি করিতে পারে। গবেষণায় যদিও হালে জনপ্রিয় হইয়া উঠা ‘হ্যান্ডওয়াশ’ লইয়াও উদ্বেগ প্রকাশ করা হইয়াছে, আমরা মনে করি, মুখগহ্বরে ব্যবহৃত হয় বলিয়া টুথপেস্টে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক অধিকতর ক্ষতিকর হইতে বাধ্য।

আমরা জানি, ভেজালবিরোধী আইনের ফাঁক ও প্রয়োগের ফোকর গলিয়া খাদ্যপণ্য হইতে উদ্ভূত স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বাড়িয়া চলিয়াছে। বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়াছে, মৎস্য ও দুগ্ধে ফরমালিন, শুঁটকিতে ডিডিটি, ভাজা খাবারে তৈলের পরিবর্তে পোড়া লুব্রিকেটিং, মসলাতে কাঠের গুঁড়া, খাদ্য উপযোগী রঙের পরিবর্তে বস্ত্রশিল্পের রং ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কয়েক বৎসর পূর্বে সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনেই দেখিয়াছিলাম বাজারে প্রাপ্ত দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত প্রায় সকল পণ্যেই মিলিয়াছে ক্ষতিকারক মাত্রার রাসায়নিক উপাদান। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান যে টুথপেস্ট পর্যন্ত পৌঁছাইয়া যাইতে পারে, উহা অনেকের নিকট বিস্ময়কর বটে। আমাদের দূরবর্তী প্রত্যাশা ছিল যে, এই প্রকার পণ্য অন্তত যাচাই-বাছাই করিয়া বাজারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দেশি-বিদেশি বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের টুথপেস্টের মোড়ক নকল করিয়া বাজারজাত চলিতেছে তো বটেই; আসল ব্র্যান্ডের টুথপেস্টগুলিতেও ক্ষতিকারক রাসায়নিক মাত্রা ছাড়িয়া গিয়াছে। সমকালের প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় নকল ও ভেজাল টুথপেস্টের সিন্ডিকেট বহাল থাকিবার কথা বলা হইয়াছে। আমাদের প্রশ্ন হইতেছে, অভিযান চালাইয়া নকল ও ভেজাল পণ্য না হয় সংবরিত হইল; রাসায়নিকের ক্ষতিকারক মাত্রা রুখিব কী দিয়া?

খাদ্যপণ্যের মান যাচাই ও নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বিএসটিআই এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখিতে পারিত। কিন্তু সংস্থাটির মুখপাত্র যেইভাবে খোদ গবেষণাটির তথ্যই ‘যাচাই-বাছাই’ করিয়া দেখিতে চাহিয়াছেন, প্রশ্ন জাগে– এতদিন তাহা হইলে কী করিয়াছেন? বহুল প্রচলিত পণ্যটির মান যাচাই না করিয়া বসিয়া ছিলেন? আর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা যদি টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়ে মন্তব্যই করিতে না চাহেন, তাহা হইলে ভোক্তারা যাইবে কোথায়? আমরা কি নিশ্চিন্ত মনে দন্ত মাজনও করিতে পারিব না?

আমরা মনে করি, টুথপেস্টের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থার সহিত মানসম্পন্ন পণ্য বিপণনে আগ্রহী বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিও আগাইয়া আসিতে পারে । কিন্তু স্মরণে রাখিতে হইবে, জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব। জানিয়া শুনিয়া বিষপান লইয়া কবি আক্ষেপ করিয়াই ক্ষান্ত দিতে পারেন, কিন্তু একটি উন্নয়নকামী রাষ্ট্রকে না জানিয়া বিষপান হইতে নাগরিকদের বাঁচাইতে সতর্ক ও সক্রিয় থাকিতেই হইবে।

আরও পড়ুন

×