গ্যাংগুলি নিছক ‘কিশোর’ নহে

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:৫৯
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে ‘কিশোর গ্যাং’ কীভাবে বিস্তৃত হইয়াছে, আমরা জানি। কিন্তু রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও সাভার এলাকায় ‘দাপাইয়া’ বেড়ানো এই প্রকার অপরাধীচক্রে মধ্যবয়সী কিছু ব্যক্তি ও সদস্য নিয়ন্ত্রক হিসাবে ভিড়িয়াছে। অবশ্য অস্ত্র-মাদক কারবার, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের সুযোগ যথায় অবারিত, তথায় বয়সসীমার কী যুক্তি থাকিতে পারে? সমকালের প্রতিবেদনেই উঠিয়া আসিয়াছে, উল্লিখিত এলাকা হইতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার আটক ১০টি কিশোর গ্যাংয়ের ৫৭ সদস্যের মধ্যে চালক, হেলপার, দোকানকর্মী, শ্রমিক, ভাঙাড়ি ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা রহিয়াছে। গ্যাংয়ের নাম ও পেশায় ভিন্নতা থাকিলেও ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাহারা অভিন্ন হইয়া উঠিয়াছে। খোঁজ লইলে দেখা যাইবে, অন্যান্য এলাকার গ্যাংও গড়িয়া ও বাড়িয়া উঠিবার প্রক্রিয়া অভিন্ন।
স্মরণে রহিয়াছে, এই প্রকার দলাদলির জের ধরিয়া ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান কবীরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের সমাজে ‘কিশোর গ্যাং’ থাকিবার বিষয়টি প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসিয়াছিল। পরবর্তী সময়ে প্রমাণ হইয়াছে, উহা ছিল নিমজ্জিত হিমশৈলের দৃশ্যমান চূড়ামাত্র। পরবর্তী সময়ে উন্মোচিত হইয়াছিল, সামাজিক মাধ্যমকে কেন্দ্র করিয়া গ্যাং গড়িয়া উঠিয়া কীভাবে অফলাইনেও আধিপত্যের সংঘাত ও সংঘর্ষে জড়াইয়া পড়ে। অপরাধপ্রবণতার অনিবার্য অনুষঙ্গরূপে নেশাদ্রব্য কিংবা উহার অর্থ সংগ্রহ করিতে গিয়া ছিনতাই, মাদক ক্রয়-বিক্রয়, ইভ টিজিং এমনকি প্রাণহানিও ঘটে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও সাভারের গ্যাংকাণ্ড প্রমাণ করিতেছে, পুলিশি তৎপরতা সত্ত্বেও গত কয়েক বৎসরে অপরাধপ্রবণতা এবং উহার পরিধি বৃদ্ধি বৈ হ্রাস পায় নাই।
স্বীকার্য, পাড়া-মহল্লায় কিশোরদের মধ্যে দলাদলি এমনকি মারপিট আমাদের সমাজে নূতন নহে। কিন্তু তাহা যখন মাদক সঞ্চালন, ছিনতাই ও প্রাণহানির ন্যায় অঘটনে গড়ায়, তখন আইনশৃঙ্খলার গুরুতর সংকটই বটে। আমরা মনে করি, গ্যাংগুলিকে ‘কিশোর’ বলিয়া লঘু করিয়া দেখিবার অবকাশ নাই। কৈশোর অতিক্রম করিয়া এইগুলি পরিণত অপরাধী চক্র হইয়া উঠিয়াছে। আর ইহা বুঝিবার জন্য
বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই যে, সকল কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যেই রহিয়াছে রাজনৈতিক নেতাদের ‘অর্থপূর্ণ’ আশীর্বাদ। ফলে প্রশ্নটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আইন সংস্কার, তৎসহিত প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা, সতর্কতা, পারিবারিক বন্ধন, সর্বোপরি সামাজিক সহমর্মিতা।