ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বেলাগাম ছাত্রলীগ

বেলাগাম ছাত্রলীগ

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:৫৯

ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পুনরায় দুঃখজনকভাবে নেতিবাচক কারণে সংবাদের শিরোনামে উঠিয়া আসিল। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক দল নেতা কর্তৃক এক দম্পতিকে ক্যাম্পাসে ডাকিয়া আনিয়া স্বামীকে আটকাইয়া স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্যাম্পাস উত্তাল হইবার বিষয়টি সকলেরই জানা। ইহারই মধ্যে রবিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চায়ের দোকানে বসিবার ন্যায় তুচ্ছ ঘটনা লইয়া ছাত্রলীগের তিন পক্ষের নেতাকর্মী টানা তিন দিন সংঘর্ষে লিপ্ত হইয়া গোটা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়াইয়া দিয়াছে। একই সঙ্গে দেশের সর্বপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মী উপদলীয় সংঘাতে লিপ্ত হইয়াছে একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য দুই কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের উৎস সরস্বতী পূজার কনসার্ট; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের উৎস বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনে এক নারী শিক্ষার্থীর সহিত অন্য কয়েক শিক্ষার্থীর বচসা। প্রকৃতপক্ষে এই সকল সংঘর্ষের মূলে রহিয়াছে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। ইহাতে একদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন উন্নয়নকার্য হইতে আদায়কৃত বখরা স্বীয় পকেটস্থ করা যায়; অন্যদিকে বিনা পয়সায় আহার, তৎসহিত চাঁদাবাজিও চালানো যায়।

দেশে গত কয়েক দশক ধরিয়া ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন কর্তৃক বিরোধী সংগঠনসমূহকে ক্যাম্পাসছাড়া করিয়া তথায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এক অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চলমান। তবে বিগত দেড় দশকে ঐ জবরদস্তির ষোলোকলা পূর্ণ হইয়াছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী অন্তত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে হয়তো এই স্বৈরতান্ত্রিক পরিস্থিতির কিছুটা হইলেও পরিবর্তন ঘটিত। কিন্তু ইহা লইয়া কাহারও কোনো হেলদোল নাই। সচেতন মহলের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রশাসনিক উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিপরীত মতের সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হইলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিত। কিন্তু উহা দূর স্থান, বরং সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন; উভয়েই ক্যাম্পাসসমূহে ছাত্রলীগের একাধিপত্য দৃঢ়করণে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন দিয়া চলিয়াছে। ফলে সংগঠনটির নেতাকর্মীর একটা অংশ এতই বেপরোয়া; তাহারা এমনকি ক্যাম্পাসের বাহিরেও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গুম, অপহরণ, ধর্ষণসহ গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে লিপ্ত। একই সঙ্গে এই সকল অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত বখরার বণ্টন লইয়া নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াইয়া পড়ে। এমনকি এই সকল সংঘাতে অদ্যাবধি নিজ দলের বহু নেতাকর্মী নিহত হওয়ার পরও অপরাধীরা তেমন শাস্তি পায় নাই।

অভিযোগ রহিয়াছে, বিরোধী মত দমনে ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীরূপে কাজে লাগাইবার স্বার্থেই সরকার অপরাধে লিপ্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর লাগাম টানিয়া ধরিতে এক প্রকার অনীহ। তবে ইহা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিরই ক্ষতি করিতেছে না; সংগঠনকেও বৃহত্তর ছাত্রসমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিতেছে, যাহা আখেরে দল হিসাবে আওয়ামী লীগেরই সমূহ সর্বনাশ ঘটাইবে। সুতরাং অনেক বিলম্ব হইলেও শীঘ্রই সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে আনিতে হইবে।

আরও পড়ুন

×