ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভাগ্য ও ক্ষমার রজনী

ভাগ্য ও ক্ষমার রজনী

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:৫৭

আজ দিবাগত রাত্রিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানদিগের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানগণও পালন করিবে পবিত্র শবেবরাত। প্রতিবৎসরের ন্যায় এইবারও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করিয়া নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এই রাত্রির আনন্দ ভাগাভাগি করিবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। ফার্সি শব্দযুগল ‘শব’ ও ‘বরাত’ মিলিয়া শবেবরাত শব্দটির উদ্ভব ঘটিয়াছে– যাহার অর্থ যথাক্রমে রাত্রি ও ভাগ্য; তাই শবেবরাতকে বলা হয় ভাগ্যরজনী। ইসলাম ধর্মমতে, আল্লাহতায়ালা এই রজনীতে এক বৎসরের জন্য মানুষের জীবন-মৃত্যু, ধন-সম্পদের যোগ-বিয়োগ ইত্যাদি নির্ধারণ করিয়া থাকেন। একই সঙ্গে বান্দাদের প্রার্থনার ভিত্তিতে রোগশোক, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদসহ সকল প্রকার সংকটও সমাধান করা হয় এবং এমনকি পাপী বান্দাদেরও ক্ষমা মঞ্জুর হয় এই রাত্রিতে। এই কারণে শবেবরাতকে ক্ষমার রজনীও বলা হয়। ফলে ধর্মপ্রাণ যে কোনো মুসলমানের জন্য এই রজনী কেবল নিবিড় ইবাদত-বন্দেগিরই সুযোগ সৃষ্টি করে না, আনন্দেরও উপলক্ষ আনয়ন করে। সম্ভবত এই কারণে উক্ত রাতকে কেন্দ্র করিয়া এখানকার মুসলমান সমাজে বিশেষত নানা খাদ্যদ্রব্য তৈয়ার এবং প্রতিবেশীর সহিত তাহা ভাগাভাগি করিবার রীতিও কয়েকশত বৎসর যাবৎ চালু রহিয়াছে। শবেবরাতকে কেন্দ্র করিয়া এহেন উৎসবের আবহ সৃষ্টি নিঃসন্দেহে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ; কারণ এই প্রকার উৎসব ব্যক্তিমানুষকে আপন সত্তা হইতে বাহির হইয়া অপরের সঙ্গে মিলিত হইবার উৎসাহ জোগায়; ধর্মীয় তো বটেই, সামাজিক সম্প্রীতির জন্যও যাহা গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে উৎসবের নামে এমন কিছু করা নিশ্চয়ই সংগত নহে, যাহা এই রজনীর ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করে, এমনকি স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে নিবেদিত ইবাদতবন্দেগিতে ব্যাঘাত ঘটায়। এই কারণে এই সময়ে আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফাটানোর উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়ন আমরা চাই। মনে রাখিতে হইবে, এই সকল বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার একদিকে প্রতিবেশ-পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় বিপজ্জনক ঘটনারও সূত্রপাত ঘটাইতে পারে।

এদিকে এই বৎসর এমন এক সময় শবেবরাত আসিয়াছে, যখন দেশের অর্থনীতি বহুবিধ সংকটে নিপতিত। দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাইতেছে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি জনজীবনকে বেসামাল করিয়া দিয়াছে। বিশেষত দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠিয়াছে। আর দুই সপ্তাহ পর শুরু হইতেছে পবিত্র রমজান মাস, যে সময়ে সাধারণত বিশেষ কিছু পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হয়। এখনই দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোটকের মুখে লাগাম না পরানো গেলে, নিঃসন্দেহে উহা সিয়াম সাধনায়ও ব্যাঘাত ঘটাইবে। বলা বাহুল্য, বাজারের অস্থিতিশীলতার পশ্চাতে ব্যবসায়ীরূপী মজুতদারদের হস্ত রহিয়াছে। যাহাদের বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে কঠোর ভাষায় কথা বলিয়াছেন; ইহা বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে সক্রিয় করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। ওই ব্যবসায়ীদিগেরও বোঝা দরকার, অধিক মুনাফার জন্য নিত্যপণ্য মজুত করিয়া রাখা ইসলাম ধর্মও অনুমোদন করে না। এই অবস্থায় সমাজের বিত্তবান মানুষদেরও বিত্তহীন ও গরিবদের পার্শ্বে দাঁড়ানো উচিত বলিয়া আমরা মনে করি।

আরও পড়ুন

×