শিক্ষক না সন্ত্রাসী?
প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৪ | ০৪:১৮
সিরাজগঞ্জ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের জনৈক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে যে প্রকারে এক শিক্ষার্থীর উপর গুলিবর্ষণ করিয়াছেন, উহা অ্যাকশনধর্মী সিনেমাকেও পরাভূত করিয়াছে। কোনো বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে মতবিরোধ কিংবা বচসা অনভিপ্রেত হইলেও অস্বাভাবিক নহে।
কিন্তু তজ্জন্য যথায় শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক-মানসিক আক্রমণই নিষিদ্ধ, তথায় আলোচ্য শিক্ষক রীতিমতো গুলি করিয়া শিক্ষার্থীর প্রাণনাশের অপচেষ্টা চালাইলেন! উহা শুধু উদ্বেগজনকই নহে, কলঙ্কজনকও বটে। সোমবারের এই অঘটন স্বাভাবিকভাবেই দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়াছে এবং খোদ সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হইয়াছেন।
বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, উক্ত শিক্ষক ছাত্রজীবনেও ক্ষমতাসীন দলের ‘ক্যাডার’ ছিলেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থী থাকাকালেই তিনি মারদাঙ্গায় পটু এবং অস্ত্রবাজ। শিক্ষকের খাতায় স্বীয় নামটি তালিকাভুক্ত করিয়াও তাঁহার পূর্বকালের অস্ত্রের নেশা অবদমিত হয় নাই। তাই গুলিকাণ্ডের পর তাঁহার ব্যাগ হইতে পুলিশ একাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করিয়াছে। ঘটনার পূর্বেও বহুবার এই শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে অস্ত্র লইয়া আসিতেন এবং সামান্যতেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিতেন বলিয়া অভিযোগ। যদি বলা হয়, দেশে ক্ষমতাসীন দলের অপরাধপ্রবণ নেতাকর্মীর জন্য দুঃখজনকভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ যে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রচলিত; উহাই আলোচ্য শিক্ষককে এহেন গুরুতর অপরাধ সংঘটনে আশকারা দিয়াছে– তাহা নিশ্চয় ভুল হইবে না।
আমরা বিস্মিত, পূর্বের কর্মস্থলে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে পিস্তল ঠেকাইয়া হুমকি দিবার অভিযোগে চাকুরিচ্যুতির পরও উক্ত শিক্ষককে বর্তমান কর্মস্থলে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপরন্তু তাঁহাকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেন নাই বলিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানাইয়াছেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। স্পষ্টত, একজন শিক্ষকের রাজনৈতিক প্রভাবের নিকট উক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষও নতজানু– অন্তত মানুষ গড়ার কারিগরদের নিকট এহেন আচরণ আদৌ কাম্য নহে।
আশার কথা, উক্ত শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিয়াছে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ। শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হইয়াছে এবং পুলিশ তাঁহাকে আটক করিয়াছে। শিক্ষাঙ্গনে এহেন অপরাধমূলক অঘটনের পুনরাবৃত্তি রোধে তাঁহার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করিতে হইবে।