এত ক্ষণে ইসি কহিলা বিষাদে?
প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:১১
দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সুনির্দিষ্ট খসড়া প্রস্তাবনা প্রণয়ন শুরু করিয়াছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন-ইসি– বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এইরূপ সংবাদ যুগপৎ বিক্ষোভ ও আক্ষেপ-জাগানিয়া। একজন নির্বাচন কমিশনার জানাইয়াছেন, সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইসি যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআই এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যায় বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনসমূহকে বিবেচনায় লইতেছে। স্মর্তব্য, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোট তো বটেই; দেশীয় নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমও প্রথম হইতে সুষ্ঠু, অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়া আসিয়াছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করিবার পর হইতে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সহিত ইসি যে একাধিক দফা সংলাপে বসিয়াছিল, ঐগুলির প্রতিটিতে এই সকল অভিন্ন দাবি উচ্চারিত হইয়াছে। দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে দেশীয় পক্ষগুলির উচ্চারিত তাগাদাই নির্বাচনের পর বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলির প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হইয়াছে মাত্র। যথাসময়ের পরিবর্তে এত দিন পর আসিয়া ইসির মনে হইতেছে, তাগিদ ও পরামর্শগুলি প্রয়োজনীয় ছিল! আমাদের বিক্ষুব্ধ হইবার কারণ উহাই।
আক্ষেপ হইতেছে, ইসির বোধোদয় ঘটিয়াছে বিলম্বে। আমরা দেখিয়াছি, দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলি বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচন বর্জন করিয়া আসিয়াছে; শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই। ইসি যে সকল সুপারিশ রাখিয়া যাইতেছে, সেইগুলি নিজেরা প্রতিপালন করিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হইতে পারিত। আক্ষেপের সহিত এখন আমরা মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের প্রবাদপ্রতিম সংলাপটি স্মরণ করিয়া বলিতে পারি– “এত ক্ষণে”– অরিন্দম কহিলা বিষাদে–। সাংবিধানিকভাবে পাঁচ বৎসরের জন্য দায়িত্ব লওয়া বর্তমান কমিশনের মেয়াদ যদিও তিন বৎসর অবশিষ্ট রহিয়াছে; জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হইবে পরবর্তী কমিশনের মেয়াদে। বস্তুত ইসি প্রত্যাশা করিতেছে, পরবর্তী কমিশন সুপারিশগুলি বাস্তবায়ন করিবে। আমাদের প্রশ্ন, পরবর্তী কমিশন যে বর্তমান কমিশনের ন্যায় হইবে না, সেই নিশ্চয়তা কে দিবে? পূর্বেও বিদায়ী কমিশন অনেক শ্রুতিমধুর সুপারিশ রাখিয়া গিয়াছে। কিন্তু পরবর্তী কমিশন উহাতে সামান্যই মনোযোগ দিয়াছে।
মন্দের ভালোরূপে আমরা প্রত্যাশা করিব– অবশিষ্ট মেয়াদের তিন বৎসরে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন কিংবা জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ইসি স্বীয় ও সম্ভাব্য সুপারিশগুলি বাস্তবায়ন করিয়া দেখাইবে। উহাতে নির্বাচন লইয়া হৃতগৌরব ফিরিয়া আসিবার সম্ভাবনা বাড়িয়া যাইবে। নির্বাচন ঘিরিয়া বাংলাদেশের সমাজে যে ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশ সৃষ্টি হইয়া থাকে, উহা আমরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হইতেই হারাইয়া ফেলিয়াছি। ইহার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের সদিচ্ছার ঘাটতি যদ্রূপ, তদ্রূপ নির্বাচন কমিশনেরও সাহসের অভাব রহিয়াছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর হইতেই বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ বিভিন্ন সভায় কিংবা সংবাদমাধ্যমেও পুনঃপুন প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়া আসিতেছিলেন, তাহারা বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের আস্থা অর্জনে সক্ষম হইবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত উহা সম্ভব হয় নাই। অবশিষ্ট তিন বৎসরেও উহা সম্ভব হইলে ভালো বৈ মন্দ হইবে না।
- বিষয় :
- ইসি