নূতন পাত্রে পুরাতন আইন চাহি না

প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪ | ০২:১৩
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ পাস হইবার পর বেশ কয়েক বৎসর কতিপয় ক্ষেত্রে প্রতিকার পাইলেও দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে আইনটির কার্যকারিতা ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, গত ৭ বছরে ধর্ষণ বা যৌতুক দাবির পর নারী হত্যার অভিযোগে কয়েক সহস্র মামলা হইলেও, ঢাকাস্থ ৪টি ট্রাইব্যুনালে স্বল্পসংখ্যক আসামিরই শাস্তি হইয়াছে।
উপরন্তু এহেন মামলায় গুরুদণ্ডের হার যদ্রূপ নিম্নমুখী, প্রমাণিত না হইবার কারণে খারিজের হারও তদ্রূপ অত্যধিক। আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য পূরণের মাত্রা লইয়া অদ্যাবধি দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণা বা সমীক্ষা পরিচালিত হইয়াছে। ঐগুলিতে ইহা স্পষ্ট, আইনটির যথার্থ প্রয়োগ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদিগের আন্তরিকতা এই জন্য বহুলাংশে দায়ী হইলেও, আইনটির অন্তর্নিহিত দুর্বলতাই মূলত ঐ পুলিশ সদস্যদের এমন সুযোগ করিয়া দিয়াছে।
গোদের উপর বিস্ফোটকের ন্যায় আইনটির অপপ্রয়োগের হারও আশঙ্কাজনক, যে প্রেক্ষাপটে বিচারকগণও এই আইনে কোনো অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং গুরুদণ্ড প্রদানে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করিতে বাধ্য হন। এই সকল কারণে আইনটির সার্বিক সংস্কার জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। নারী নির্যাতন দমনে নূতন আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে তাই আমরা স্বাগত জানাই।
নূতন আইনের খসড়ায় ‘শিশু’ বাদ দিয়া শুধু নারী নির্যাতন প্রসঙ্গ থাকায় কোনো সমস্যা নাই। কারণ ইতোমধ্যে দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শিশু আইন কার্যকর রহিয়াছে। বুধবার সমকাল জানাইয়াছে, বৈশ্বিক ও জাতীয় বাস্তবতা বিবেচনায় রাখিয়া ইহাতে ধর্ষণের সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হইতেছে। এমনকি ধর্ষণের সংজ্ঞা সম্প্রসারণের কথাও বলা হইয়াছে। বিদ্যমান আইনে তৃতীয় লিঙ্গের কেহ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হইলে মামলার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।
প্রস্তাবিত আইনে এই ঘাটতিও পূরণ হইবে বলিয়া জানা গিয়াছে। অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল, মামলার তদন্তে অবহেলা, ধর্ষণের শিকার নারীর চিকিৎসা, আলামত সংগ্রহ ও গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতা এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় অহেতুক বিলম্বে সংশ্লিষ্টদের দায়ী করিবার বিধানও প্রস্তাবিত আইনে রহিয়াছে। আশাব্যঞ্জক হইল, আইনের খসড়া লইয়া অংশীজনসহ নাগরিকদের মতামতের জন্য কর্মসূচিও গৃহীত হইয়াছে।
উহার অংশরূপে মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ কর্মকর্তাগণও বলিয়াছেন, ইতিবাচক এই বিধানের ফলে নারী নির্যাতন মামলায় দ্রুত তদন্ত শেষ করা সম্ভবপর হইবে। আমরা মনে করি, কার্যকারিতার ক্ষেত্রে আইনের ভাষ্য যদ্রূপ, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্টরা উহা স্মরণে রাখিবেন বলিয়া প্রত্যাশা।
তবে সকল ভালো তাহার, শেষ ভালো যাহার। তাই আমাদের প্রত্যাশা, মানবাধিকার আইনজীবী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শের ভিত্তিতে লিপিবদ্ধ বিধি-বিধান লইয়াই নারী নির্যাতন দমন-সংক্রান্ত নূতন আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাইবে।
উপরন্তু নূতন আইনের যথাযথ প্রয়োগ, বিচার পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতা দূর এবং ভুক্তভোগী নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সহায়ক সেবাসমূহও সহজলভ্য হইবে। নূতন আইনে পুরাতন সংকটগুলি কদাচ কাম্য নহে। নূতন পাত্রে যদি পুরাতন পানীয়ই পরিবেশিত হয়, তাহা হইলে তো সকলই গরল ভেল!
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়