ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ঋণমান উন্নয়নে নজর দিন

ঋণমান উন্নয়নে নজর দিন

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪ | ০০:১৬

বাংলাদেশের ঋণমান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ-এর বার্তাটি প্রণিধানযোগ্য বলিয়া আমরা মনে করি। মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সংস্থাটি সোমবার ঋণমান ‘বি প্লাস’ স্তরে নামাইয়া ‘আউটলুক’ স্থিতিশীল আখ্যা দিয়াছে। প্রসংগত, ঋণমান হইল কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার মানদণ্ড; আর ‘আউটলুক’ হইল দেশটির অর্থনীতি সম্পর্কিত পূর্বাভাস। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ঋণমান অপরিবর্তিত অর্থাৎ ‘বিবি মাইনাস’ রাখিয়া ‘আউটলুক’ নেতিবাচক আখ্যা দিয়াছিল। আমরা জানি, যে তিন মার্কিন সংস্থার নিকট হইতে বাংলাদেশ সভরেন ক্রেডিট রেটিং গ্রহণ করে, ফিচ উহার অন্যতম। অন্য দুই সংস্থা এসঅ্যান্ডপি এবং মুডিস গত বৎসর মে ও জুলাই মাসে বাংলাদেশের ঋণমান সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিয়াছিল। কোনো দেশের ঋণমান হ্রাসের অর্থ দেশটির বৈদেশিক বিনিয়োগ হারাইবার ঝুঁকিতে পড়া। একই কারণে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তিও দেশটির পক্ষে কঠিন হয়। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ ও সহজ শর্তের ঋণ কতখানি জরুরি, উহার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। ফলে ফিচের আলোচ্য বার্তা দেশের অর্থনীতির চলমান সংকট আরও গভীরতর হইবার শঙ্কাই উস্কাইয়া দেয়।

এই শঙ্কার আরেক কারণ হইল, ঝুঁকি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক ব্যাংকসমূহ এলসিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য দেশের ব্যাংকগুলিকে দেওয়া  বৈদেশিক মুদ্রার সুবিধা হ্রাস করিয়া দিতে পারে, যাহা সরাসরি দেশের আমদানি খাতে আঘাত হানিবে। ডলার সংকটে এখনই জ্বালানির ন্যায় অতি জরুরি পণ্যের ঋণপত্র খোলা কষ্টকর, সেখানে ফিচের প্রতিবেদনের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হইলে বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না। যাহা হতাশাজনক, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণমান সংস্থাগুলির প্রায় এক বৎসর পূর্বে দেওয়া নেতিবাচক বার্তাসমূহ উপলব্ধি করিতে অনেকাংশেই অক্ষম বলিয়া মনে হইতেছে। কারণ ফিচের প্রতিবেদনে ঋণমান হ্রাসের জন্য বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে নিয়মিত হস্তক্ষেপের কারণে ধারাবাহিক রিজার্ভ হ্রাস, অর্থ পাচার অব্যাহত থাকা এবং প্রবাসীদের অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের অত্যধিক প্রবণতাসহ যে সকল সমস্যাকে দায়ী করা হইয়াছে, সেইগুলি যদ্রুপ নূতন কিছু নহে, তদ্রূপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সমস্যাগুলি নিরসনে অদ্যাবধি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। উপরন্তু গত বৎসর মুডিসের ঋণমান হ্রাস করিবার পর ১৮ জুন মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‘ঋণমান হ্রাসের পশ্চাতে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকিতে পারে’ মন্তব্য করিয়া বলিয়াছিলেন, রেটিং হ্রাসের কারণে নাকি তাহাদের ‘কিছু আসে যায় না’।

সত্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তির শর্তস্বরূপ ইতোমধ্যে ব্যাংক সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করাসহ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হইয়াছে, যে কারণে ফিচ অর্থনীতি অদূর ভবিষ্যতে ‘স্থিতিশীল’ থাকিবে বলিয়া পূর্বাভাস দিয়াছে। যদিও এই সকল পদক্ষেপ জনদুর্ভোগ লাঘবের পরিবর্তে বৃদ্ধি করিয়াছে। তবে ব্যাংক খাতের সংস্কার, অর্থ পাচার বন্ধ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ ব্যতীত পরিস্থিতির উন্নতি হইবে না– এই কথাও স্মরণে রাখিতে হইবে। 

আরও পড়ুন

×