ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হাসপাতালে হামলা

জীবনদায়ী স্থাপনায় জীবনহানির শঙ্কা!

জীবনদায়ী স্থাপনায় জীবনহানির শঙ্কা!

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:২৮ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৬:৩৬

ডিএমসিএইচ-ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শনিবার যেই ভাঙচুর ও প্রহারের ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা নিন্দনীয় এবং উদ্বেগজনক। উহার মধ্য দিয়া দেশের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাই পুর্নবার উন্মোচিত হইল। আলোচ্য অঘটনে পুনর্বার ইহাও প্রমাণ হইল– চিকিৎসাকর্মীদের তো বটেই, চিকিৎসাপ্রত্যাশীদের জন্যও হাসপাতালটি যথেষ্ট নিরাপদ নহে। ফলে হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকদের আহূত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে অযৌক্তিক বলা যায় না; যদিও এহেন কর্মসূচির কারণে প্রধানত চিকিৎসাপ্রত্যাশীদেরই সর্বাধিক দুর্ভোগ পোহাইতে হইতেছে। 
প্রসঙ্গত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার তিন দফায় রোগীর স্বজন ও বহিরাগতদের হামলা ও প্রহারের ঘটনা ঘটে। ঐ রাত্রেই সেবাকার্য বন্ধ করিয়া দেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। এক পর্যায়ে অন্যান্য চিকিৎসকও তাহাদের সহিত যুক্ত হইলে রবিবার প্রভাত হইতেই হাসপাতালের সকল বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হইয়া যায়। মধ্যাহ্নের মধ্যেই দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও অনুরূপ পরিস্থিতি ও কর্মসূচির কারণে চিকিৎসাসেবা স্থবির হইয়া পড়ে। যদিও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহিত আলোচনার পর নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত ও হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাসে রবিবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা, বাস্তবে জরুরি কিছু সেবা ব্যতীত বহির্বিভাগসহ অন্য সকল সেবা বন্ধ। ধর্মঘটি চিকিৎসকগণ জানাইয়াছেন, আগামী সাত দিবস সমগ্র দেশের চিকিৎসাকেন্দ্র এই নিয়মে চলিবে। ঐ সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার ও কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হইলে নূতন কর্মসূচি ঘোষিত হইবে। 

এইরূপ পরিস্থিতি নিশ্চয় কাম্য নহে; বিশেষত যখন গত কয়েক দশক ধরিয়া চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণের কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক নিম্নআয়ের মানুষের নিকট চিকিৎসাসেবার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিই একমাত্র ভরসা হইয়া উঠিয়াছে। বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রশ্নেও বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের নিকট সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলির কোনো বিকল্প নাই। আমরা জানি, এমনকি যুদ্ধের সময়েও বিশেষত দূত ও কর্তব্যরত চিকিৎসাকর্মী অবোধ্য, প্রতিপক্ষের অন্য সকল প্রতিষ্ঠান গুঁড়াইয়া দেওয়া হইলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা করা হয় না। ইদানীং নানা অবক্ষয়ের কারণে কতিপয় ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটিলেও অদ্যাবধি এই সকল আন্তর্জাতিক প্রথা বহুলাংশেই বহাল। তদনুযায়ী হাসপাতাল মাত্রই অন্তত চিকিৎসাকর্মী ও রোগীর জন্য নিরাপদস্থল হইবার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যেই কোনো ছুতায় নিয়ম-রীতি লঙ্ঘনের এই দেশে হাসপাতালের নিরাপত্তাও অনেকাংশে ভঙ্গুর। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলিয়া রোগীর স্বজন কর্তৃক চিকিৎসককে প্রহার বা হাসপাতালে ভাঙচুর প্রায়শ ঘটিয়া থাকে। অন্যদিকে এই সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রত্যাশিত কোনো প্রতিকারের আশায় চিকিৎসক ধর্মঘটও বিরল নহে।

অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা একাধিকবার বলিয়াছি, যেই চিকিৎসাকর্মীর সহিত মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্ন জড়িত, সেই চিকিৎসাকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিকল্প নাই। চিকিৎসাকর্মীদেরও ধর্মঘট ব্যতীত দাবি আদায়ের বিকল্প উপায় সন্ধান যে গুরুত্বপূর্ণ– উহা পুনর্বার স্মরণ করাইয়া দিতে চাহি। আমরা প্রত্যাশা করিব, আমাদের আবেদন পূর্বের ন্যায় অরণ্যে রোদন সাব্যস্ত হইবে না। তৎসহিত ইহাও প্রত্যাশা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে চলমান অস্থিরতার আশু অবসানকল্পে বর্তমান সরকার সক্রিয় হইবে। আন্দোলনরত চিকিৎসাকর্মীদের দাবি অনুসারে, আলোচ্য হামলাসমূহের সহিত সংশ্লিষ্টদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনিবে এবং চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সকলের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করিতে হাসপাতালসমূহে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা লইবে। চিকিৎসাকর্মীদের এই দাবির সহিত সকলেই সংহতি জানাইবে– চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকিলে উহা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই সুরাহা করিতে হইবে। যেই কোনো অজুহাতে আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লইবার ফৌজদারি অপরাধ গ্রহণযোগ্য হইবে না।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×