ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চিকিৎসা ব্যবস্থা

অক্ষিকাচের অনিয়মে চক্ষু চড়কগাছ

অক্ষিকাচের অনিয়মে চক্ষু চড়কগাছ

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:১৪

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা নিরসনে চক্ষুতে কৃত্রিম অক্ষিকাচ তথা ‘লেন্স’ স্থাপনের নামে রাজধানীর কতিপয় হাসপাতালে রোগীর সহিত প্রতারণার যেই সংবাদ বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশ পাইয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এমনকি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটও লেন্স স্থাপনের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক সেবা দিতে পারিতেছে না। একটি অপারেশনের তারিখ পাইতে ছয় মাসাধিককাল লাগিতেছে। এই অজুহাতে সেইখানেও রোগীর নিকট হইতে অতিরিক্ত অর্থ হাতাইবার অভিযোগ উঠিয়াছে। ইহাতে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। ঔষধ প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকিলেও অন্তত ১৫টি হাসাপাতাল কেন উহার তোয়াক্কা করিতেছে না, আমাদের বোধগম্য নহে। লেন্স বিক্রয়কালে ব্র্যান্ডের নাম, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ও উৎপাদক দেশের নাম-সংবলিত ক্যাশ মেমো প্রদানের নিয়মও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলি মানিতেছে না। লেন্সের নূতন দর টাঙাইবার নির্দেশনা প্রতিপালিত না হইবার নেপথ্যে যে আমদানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সহিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকিতে পারে, উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। এতদ্ব্যতীত রোগী ও স্বজনের নিকট হইতে সুকৌশলে অতিরিক্ত অর্থ লইবার অভিযোগটি ফৌজদারি অপরাধের সমতুল্য। 

অজানা নহে, দেশের চিকিৎসা খাতে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম প্রায় পর্বতপ্রমাণ। কৃত্রিম লেন্স স্থাপনে অতিরিক্ত মূল্য ও অন্যান্য ফি আদায়ের নামে রোগীর সহিত কার্যত প্রতারণার ঘটনাও উহা হইতে বিচ্ছিন্ন নহে। দীর্ঘদিন ধরিয়া আমরা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেই সিন্ডিকেটের কথা শুনিয়া আসিতেছি, লেন্স স্থাপনেও উহার অস্থিত্ব না থাকিবার কী কারণ থাকিতে পারে? আরও হতাশাজনক, সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সরকারি হাসপাতালগুলির স্বেচ্ছাচারিতা লইয়া প্রতিবেদন প্রকাশ হইলেও কেন্দ্রীয় ঔষধ প্রশাসনকে ধর্তব্য পদক্ষেপ লইতে দেখা যায় নাই। আলোচ্য প্রতিবেদনে ২৯টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কথা উঠিয়া আসিয়াছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসনের নিয়ম বাঁধিয়া দিয়া নিয়মিত তদারকি জরুরি। এই ক্ষেত্রে যাহারা তদারকি করিবেন, তাহাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। খোদ ঔষধ প্রশাসন এই ক্ষেত্রে সক্রিয় ও আন্তরিক কিনা, উহার তদারকি হইতে হইবে আরও ঊর্ধ্বতন পর্যায় হইতে। 

স্মরণে রাখিতে হইবে, নিছক কাগুজে আইন ও নির্দেশনা দিয়া প্রতিকার মিলিবে না। মূল বিষয় হইতেছে আইনের বাস্তবায়ন। আর সরকারের সদিচ্ছা থাকিলে আইনের প্রয়োগ ও অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ কঠিন কিছু নহে। লেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, তৎসহিত লেন্স আমদানির বিষয় শুধু বেসরকারি পর্যায়ে ছাড়িয়া দিবার বিষয়ও নূতন করিয়া ভাবিয়া দেখা যাইতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে লেন্সের দর ও অপারেশন ফি বাঁধিয়া দিয়া উহা মানিতেও সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করিতে হইবে। সরকারি পর্যায়ে রোগীর জন্য লেন্স সরবরাহ নিশ্চিত করিতে পারিলে বেসরকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর থাকিত না। থাকিলেও তাহা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হইত। 

আমরা দেশের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রম করিয়াছি; কিন্তু এখনও স্বাস্থ্যের ন্যায় মৌলিক অধিকার সর্বস্তরের মানুষের জন্য নিশ্চিত করিতে না পারিবার বিষয় গ্লানিকর। আমরা দেখিতেছি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ ও তাগিদ তৈয়ার হইয়াছে। বৃহত্তর অর্থে স্বাস্থ্য খাত উহার বাহিরে থাকিবে কেন? জরুরি সেই কার্য লেন্স স্থাপন ব্যবস্থা হইতেই সূচিত হইলে মন্দ কী? চক্ষুদৃষ্টির সংস্কার সুলভ হইলেই না অন্যান্য সংস্কারের প্রতি দৃষ্টিপাত সহজ হইবে! কবির আপ্তবাক্য মানিয়া চক্ষুর আলোকে চক্ষুর বাহিরে দৃষ্টিপাতও তখন কঠিন হইবে না।

আরও পড়ুন

×