সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি
ভাতা বঞ্চনার আশু সুরাহা চাই
প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:২৫
সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির উপকারভোগীর একটা অংশ ভাতা বঞ্চনার যেই অভিযোগ তুলিয়াছে, উহার আশু নিরসন প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, কয়েক মাস বন্ধ থাকিবার পর সম্প্রতি ভাতা প্রদান শুরু হইলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে কেহ উহা পাইয়াছেন, কেহ পান নাই। ফলে বিশেষত প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষ বিপাকে পড়িয়াছেন। এমনকি প্রতি দিন শত শত মানুষ ভাতার খবর লইতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কার্যালয়ে যাইলেও, কোনো সদুত্তর না পাইয়া হতাশ মুখে তাহাদের বাড়ি ফিরিতে হইতেছে। আমরা জানি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতার উপকারভোগী নির্বাচন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সকল তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তিরাও ঢুকিয়া পড়িয়াছেন। ইউনিসেফের এক জরিপমতে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর তালিকার ৪৩ শতাংশেই ত্রুটি রহিয়াছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায়ও উঠিয়া আসিয়াছে, উপকারভোগীর মধ্যে নিজেদের বয়স্ক দাবি করা প্রায় ৩০ শতাংশ, বিধবা দাবি করা প্রায় ৩৩ শতাংশ এই ভাতা পাওয়ার অযোগ্য। অতএব, সংশ্লিষ্ট তালিকাসমূহের সংশোধন জরুরি ছিল; বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উপকারভোগীর তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ লইয়া যথার্থ কাজ করিয়াছে। এই কাজের জন্য প্রথম প্রান্তিকের ভাতা প্রদানে যেই বিলম্ব ঘটিয়াছে, উহাও অগ্রহণযোগ্য নহে।
কিন্তু সংশোধিত তালিকার ভিত্তিতে ভাতা প্রদান আরম্ভ হইলেও প্রকৃত উপকারভোগীর অনেকে অদ্যাবধি উহা না পাইবার কারণ কী? সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা বলিয়াছেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করিয়া ভাতা প্রদান শুরু হইয়াছে। কিন্তু বাস্তবতা হইল, ইতোমধ্যে দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হইলেও সকলের নিকট ভাতা পৌঁছায় নাই। প্রতিবেদনমতে, রাজনৈতিক পালাবদলের পর মাঠ পর্যায়ে অনেক জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রকৃত ভাতাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করিতে খেই হারাইতেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভাতা প্রদান বন্ধ থাকা অস্বাভাবিক নহে। তবে দুর্ভাগ্যবশত কোনো কোনো স্থানে হয়রানিরও শিকার হইতেছেন ভুক্তভোগীরা। যেমন সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর দপ্তরে নোটিশ পাইয়া ও মাইকিং শুনিয়া উপকারভোগীর অনেকে নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ স্থানীয় কাউন্সিলর দপ্তরে হাজির হইয়া শোনেন উক্ত নোটিশ ও মাইকিংয়ের কারণ বা উদ্দেশ্য কেহ জানে না। ফলস্বরূপ ভাতা ব্যতীতই বাড়ি ফিরিতে হইয়াছে ভুক্তভোগীদের।
দলীয় স্বার্থ না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্ছতারই সহিত ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করিয়াছে বলা যায়; কিন্তু যেই প্রক্রিয়ায় কার্মটি করা হইয়াছে, উহা দলীয় সরকারের আমলেই প্রণীত এবং উহার কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষত বিশেষজ্ঞ মহল বহুদিন যাবৎ সন্দেহ প্রকাশ করিয়া আসিতেছে। অতএব, গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় সদ্য যাচাই-বাছাইকৃত তালিকা হইতেও প্রকৃত উপকারভোগীদের বাদ পড়িবার আশঙ্কা উড়াইয়া দেওয়া যায় না। তাই আলোচ্য ভাতাবঞ্চনা সমস্যার আশু সমাধান যদ্রূপ কাম্য, তদ্রূপ প্রকৃত উপকারভোগীদের বাদ পড়িবার কোনো অভিযোগ থাকিলে উহাও খতাইয়া দেখা প্রয়োজন। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, এই রাষ্ট্রের সম্পদ উৎপাদন যজ্ঞে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হইলেও, বিশেষত বিদ্যমান বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও অর্থনীতির কারণে উহারা ন্যায্য হিস্যা হইতে বঞ্চিত হন। এই প্রেক্ষাপটে সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি উক্ত বঞ্চনার একপ্রকার ক্ষতিপূরণের চেষ্টা মাত্র। অর্থাৎ সমাজের প্রান্তিক মানুষদের বিভিন্ন ভাতা প্রাপ্তির বিষয়টা কোনো প্রকারেই রাষ্ট্রীয় দয়া-দাক্ষিণ্য নহে, বরং উহা তাহাদের অধিকার। তাই রাষ্ট্রের সংবিধানও এই ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে। ইহাও সত্য, এই সকল ভাতা ভুক্তভোগী অনেকেরই ক্ষুন্নিবৃত্তি মিটাইবার প্রধান উপায়। তাই বিশেষত বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ন্যায় ভাতাসমূহের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় লওয়ার আহ্বান জানাই আমরা।
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়