ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

নূতন ইসি

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কঠিন দায়িত্ব

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কঠিন দায়িত্ব

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:০৮

আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত নূতন নির্বাচন কমিশনকে আমরা স্বাগত জানাই। দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসিরূপে সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন এবং কমিশনার চতুষ্টয়কে নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে। আমরা মনে করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়াই হইবে তাহাদের প্রধান কর্তব্য। বিশেষ করিয়া বিগত তিনটি নির্বাচন যেই প্রকারে অনুষ্ঠিত হইয়াছিল, তাহাতে কেবল নির্বাচনী ব্যবস্থাই সংকটে পড়ে নাই, উপরন্তু মানুষ স্বীয় ভোটাধিকারও প্রয়োগ করিতে পারে নাই। এই সময়ে জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের ভোটে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অঘটনে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হইয়াছে। এই সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ যেইভাবে নির্বাচন হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে, তথা হইতে ভোটারের হৃদয়ে আস্থা ফিরাইয়া আনা হইবে নূতন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 

ইহাও সত্য, সাবেক সিইসি কাজী রকিব, নূরুল হুদা ও কাজী আউয়াল কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করিয়াছিল। বর্তমানে সেই বাস্তবতা নাই বিধায় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত নূতন কমিশন সেই অর্থে সহায়ক পরিবেশে কাজ করিবার সুযোগ পাইবে। বস্তুত তজ্জন্যই নূতন নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই অধিকতর। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলিও এই নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখিয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করিয়াছে। 

আমরা দেখিয়াছি, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন, তৎসহিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও গঠন করিয়াছে। বিগত সময়ে নির্বাচন লইয়া যেই সকল গুরুতর প্রশ্ন উঠিয়াছে, তাহাতে সংস্কারও জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন যেই প্রতিবেদন দাখিল করিবে, তাহা বাস্তবায়নে সরকার সচেষ্ট হইবে। অন্তর্বর্তী সরকার উহাই বলিয়া আসিতেছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করিবার পরই তাহারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করিবে, যাহাতে অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়। 

বলিবার অপেক্ষা রাখে না, দেশকে সফল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরাইয়া লওয়াই অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরাইবার ক্ষেত্রে নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তজ্জন্য আমাদের প্রত্যাশা, সংস্কার সাধন করিয়া নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দিতে হইবে সরকারকে। ইতোমধ্যে আমরা দেখিয়াছি, সরকার রাজনৈতিক দলগুলির সহিত রাষ্ট্র সংস্কারের সংলাপ করিয়াছে। নির্বাচনী কার্যক্রম আগাইয়া লইতেও এই ধরনের সংলাপ অব্যাহত রাখিবার বিকল্প নাই।
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া প্রাথমিক  প্রতিক্রিয়ায় মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়া চেষ্টা চালাইবার যেই প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়াছেন, উহা ইতিবাচক। ইহা সত্য, একা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব নহে। এ জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক দলসহ সকল অংশীজনের সহযোগিতা দরকার। কিন্তু ইহাও 
স্মরণে রাখিতে হইবে, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে ইসি যদি দৃঢ়তা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করে, তাহা হইলে অন্যদের পক্ষে ভিন্ন কিছু করা কঠিন হইবে।
আমরা মনে করি, নূতন নির্বাচন কমিশনের উপর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর্বতপ্রমাণ দায়ভার বর্তাইয়াছে। তাহারা কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই উপহার দিবে না, বরং আগামীর নির্বাচনগুলিও যাহাতে একই ধারায় পরিচালিত হয়, তজ্জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করিবে। এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সরকার, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও রাজনৈতিক দল তথা সকল অংশীজনের সহিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।

আরও পড়ুন

×