স্বাধীন সাংবাদিকতা
রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক ভূমিকা কাম্য
প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:১৫
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় সভায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থানের ঘোষণা দিয়া দেশের রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতারা সমস্বরে যেই বক্তব্য দিয়াছেন উহাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সংবাদপত্রের স্বত্বাধিকারীগণের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত ঐ সভায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিশেষ মহল কর্তৃক সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হামলা ও হুমকির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনের মাধ্যমে অবস্থান স্পষ্ট করিয়াছেন। তাহারা যেই কোনো মূল্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ভোটের স্বাধীনতা, জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করিবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাইবার যেই অঙ্গীকার ব্যক্ত করিয়াছেন, উহাতে জনমতই প্রতিফলিত হইয়াছে। আমরা জানি, সম্প্রতি একটি মহল দুইটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কয়েক দিন যাবৎ আক্রমণাত্মক কর্মসূচি ও প্রচার-প্রচারণা চালাইয়াছে। ঢাকার বাহিরে পত্রিকা দুইটির কোনো কোনো অফিসও তাহারা ভাঙচুর করে। উপরন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমনাবন্দরে একজন সম্পাদকও বহির্গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে দুই দফা হয়রানির শিকার হইয়াছেন। অন্যদিকে ঢালাওভাবে বাতিল করা হইয়াছে সম্পাদকসহ বহু সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে জঙ্গি হামলার হুমকির কথাও সকলের মনে থাকিবার কথা। এহেন পরিস্থিতি সংবাদমাধ্যমকে আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষতিরও সম্মুখীন করিতেছে। তাই আলোচ্য মতবিনিময় সভাকে সময়ানুগ পদক্ষেপরূপে আমরা বিবেচনা করি।
বিগত সরকারের সময় স্বাধীন সাংবাদিকতা কতটা কঠিন ছিল, তাহা আমরা জানি। দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকদের অনেককেই তখন বিশেষত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার হুমকি-ধমকির মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করিতে হইয়াছে। নিছক মতপ্রকাশের অধিকার চর্চা করিতে গিয়া বহু সাংবাদিককে জেল-জরিমানা পর্যন্ত ভোগ করিতে হইয়াছে। প্রত্যাশা ছিল, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের সেই প্রক্রিয়ারও অবসান ঘটাইবে। সংবাদমাধ্যমগুলির চাপমুক্ত পরিবেশে কাজ করিবার সুযোগ মিলিবে। প্রকৃতপক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দায়িত্ব গ্রহণের পর হইতে অদ্যাবধি বহুবার সকলের জন্য মন খুলিয়া কথা বলিবার পরিবেশ সৃষ্টির অঙ্গীকার করিয়াছে। খোদ প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়, এমন যেই কোনো কিছুর প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশে আর কখনও হইবে না বলিয়া আশ্বস্ত করিয়াছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক, বাস্তবতা ভিন্ন কিছু বলিতেছে। আজিকে নবরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের উপর আক্রমণ হইতেছে। এই কথা আমরা পূর্বেও বলিয়াছি, কোনো সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত কোনো সংবাদ বা উহার সম্পাদকীয় নীতিমালা লইয়া কাহারও কোনো ভিন্নমত থাকিলে, তিনি যেই কোনো মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান ও বক্তব্য তুলিয়া ধরিতে পারেন। কিন্তু সেই চেষ্টার পরিবর্তে বরং পুরাতন কায়দায় সাংবাদিকতার চর্চা ও পরিবেশকে ব্যাহত করার অশুভ প্রয়াস চলিবে কেন? বিশেষভাবে উল্লেখ্য, নোয়াব ও সংবাদপত্রসমূহের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ গত তিন মাসে একাধিকবার এই সকল ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন, তৎসহিত এইগুলি বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাইয়াছে। এতৎসত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমের উপর সাম্প্রতিক হুমকি ও হামলাসমূহ ঘটিয়াছে।
এই প্রকার অগণতান্ত্রিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হুমকি সৃষ্টিকারী তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। যেই কোনো মূল্যে সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারসহ সকলকে অগ্রসর হইতে হইবে। ইহাও বলা প্রয়োজন, একটা দেশে গণতন্ত্রের সংগ্রামকে অগ্রবর্তী করিবার মূল শক্তি যদ্রূপ রাজনৈতিক দলগুলি, তদ্রূপ সেই সংগ্রামের অন্যতম প্রধান সহযোগী স্বাধীন সাংবাদিকতা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন যেই কার্যক্রম পরিচালনা এবং জনগণের উদ্দেশে বার্তা দিয়া থাকেন, সেই সকল সংবাদ ও বার্তা সংবাদমাধ্যমই উদ্দিষ্ট শ্রোতা-দর্শকের নিকট পৌঁছাইয়া দেয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলিকে স্বীয় তাগিদেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখিতে হইবে। ইহা সত্য, বিরোধী দলে থাকাকালে রাজনৈতিক দলগুলির নিকট সংবাদমাধ্যম যতটা মূল্য পায়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলমাত্রই বিপরীত আচরণ করে। তথাপি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা জরুরি।
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়