ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঔষধের মূল্যবৃদ্ধি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৭

জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মূল্য লইয়া কোম্পানিসমূহের স্বেচ্ছাচারিতা এখনও চলিতেছে বলিয়া শনিবার সমকাল যাহা জানাইয়াছে, তাহা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, গত তিন মাসে অর্ধশতাধিক ঔষধের মূল্য ১০ হইতে ১১০ শতাংশ অবধি বাড়িয়াছে, যাহা গড়ে ২৯ শতাংশ। উপরন্তু, এই ক্ষেত্রে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মের তোয়াক্কা করে নাই বলিয়া অভিযোগ উঠিয়াছে। নিয়ম অনুসারে, অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ঔষধের মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। এই তালিকাবহির্ভূত ঔষধসমূহের মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে উৎপাদক কোম্পানিকে নূতন দরের যুক্তিসহ অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করিতে হয়। ঔষধ প্রশাসন আমদানি কাঁচামালের সোর্স কান্ট্রি, দর, মানসহ বিভিন্ন বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহিত বৈঠকের মাধ্যমে যাচাই শেষে উক্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানাইয়াছেন, বিগত কয়েক বৎসরের ন্যায় এইবারও ঐ নিয়ম মানে নাই কোম্পানিগুলি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলি বরং বাজারে স্বনির্ধারিত মূল্য কার্যকর করিয়া উহা অনুমোদনের জন্য আবেদন করিয়াছে। ঔষধ প্রশাসনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহিত বৈঠক না করিয়াই কোম্পানি নির্ধারিত দরে সিল মারিয়াছে। আমরা জানি, বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট বড় বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বরাবরই ঔষধ প্রশাসনকে চাপে রাখিত। কিন্তু ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান শুধু সেই সরকারকেই বিদায় করে নাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসায়ের হোতাদেরও মূলোৎপাটন করিবার কথা। তবে কি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্য প্রায় সকল খাতের ন্যায় ঔষধ খাতেও নূতন একচেটিয়া গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে?

ঔষধ প্রশাসনের পরিচালক (প্রশাসন) আশরাফ হোসেন বলিয়াছেন, নিয়ম মানিয়া ঔষধের মূল্য সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা গেলেও তাহারা এইবার ৫-১০ শতাংশ বাড়াইয়াছেন। কিন্তু বাস্তবতা হইল, বহু ঔষধের মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক বাড়িয়াছে। শুধু উহাই নহে, গত বৎসরের জুলাইতে এক দফা বৃদ্ধি করিবার পর মাত্র ছয় মাসের মাথায় গত জানুয়ারিতেও বিভিন্ন ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি করা হইয়াছিল। অন্যদিকে এইবার মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় অনিয়ন্ত্রিত-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, মূত্রথলির অতিকার্যকারিতা রোধ, পাইলস, বাত, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ রহিয়াছে, যেইগুলি অত্যাবশ্যকীয় ঔষধ অপেক্ষা কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। ফলে এই মূল্যবৃদ্ধি ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা স্বরূপ হইবে। এমনিতেই নিত্যপণ্য ক্রয় করিতে যাইয়া হাঁপাইয়া উঠা মানুষ উপায়ন্তর না পাইয়া খাদ্যপণ্যে কাটছাঁট করিতে বাধ্য হইতেছেন, যাহা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী ও শিশুদের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি সৃষ্টি করিতে পারে বলিয়া বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করিতেছেন। এই অবস্থায় যদি নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে ঔষধের বাড়তি মূল্য প্রাণের মূল্যে চুকাইতে হয়, তাহা হইলে বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না।
যদিও ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উক্ত সিদ্ধান্তের জন্য জ্বালানি তৈল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করিয়াছেন, বাস্তবতা হইল, অন্তত গত ছয় মাসে দেশে জ্বালানি তৈলের মূল্য তেমন একটা বৃদ্ধি পায় নাই; ডলারের মূল্যও মোটামুটি স্থিতিশীল। সর্বোপরি, এমনকি গত এক বৎসরেও ঔষধের উৎপাদন ব্যয় অন্তত ১১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় নাই। আরও অভিযোগ রহিয়াছে, কোম্পানিগুলি চীনা কাঁচামাল ব্যবহার করিলেও দেখায় শ্রীলঙ্কার। ইউরোপ হইতে কালেভদ্রে কাঁচামাল আমদানি করিলেও মূলত বৎসরের পর বৎসর ইহার ভিত্তিতেই ঔষধের মূল্য নির্ধারণ করে। অন্যদিকে ঔষধ প্রশাসন জনবল ও কারিগরি সক্ষমতার ঘাটতির কথা বলিয়া এই বিষয়ে নির্বিকার থাকে। দেশে বহুদিন যাবৎ জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যেই ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা বৈষম্য বিদ্যমান, অন্তত উহা হ্রাসের জন্যও ঔষধের মূল্যবৃদ্ধির আলোচ্য স্বেচ্ছাচারমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও আশু হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি।
 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×