ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

বাণিজ্য পরিবেশ

ব্যবসায়ীগণের উদ্বেগ আমলে নিন

ব্যবসায়ীগণের উদ্বেগ আমলে নিন

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৪

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাণিজ্য সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীগণ জরুরি ভিত্তিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস এবং শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের যে আহ্বান জানাইয়াছেন, উহার যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য। শুধু ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ নহেন, রবিবার সমকাল যদ্রূপ জানাইয়াছে, শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীগণের সংগঠন এবিবির সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেনও দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির তাগিদ দিয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের পক্ষ হইতে অদ্যাবধি কার্যকর উদ্যোগ গৃহীত হয় নাই বলিয়া অভিযোগ করিয়াছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি যথেষ্ট নহে– উহা সকলেই বলিয়া আসিতেছেন। তথাপি পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি বন্ধসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি নিশ্চিত হয় নাই। সম্মেলনে ব্যবসায়ীগণের কেহ কেহ কর কর্মকর্তাগণ কর্তৃক হয়রানি হইবার অভিযোগ করিয়াছেন। কেহ বিভিন্ন কাজে ঘুষ দিতে হয় বলিয়াও জানাইয়াছেন। যে কোনো বিচারেই এই সকল অভিযোগ গুরুতর। কারণ ইহাতে সৎ ও সহজভাবে ব্যবসায় কর্মকাণ্ড চালাইবার সুযোগ হ্রাস পায়। একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রবল সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ের পুঁজি সংগ্রহ যদ্রূপ কঠিন হইয়া পড়িয়াছে, তদ্রূপ ডলারের উচ্চমূল্যসহ অন্যান্য কারণে আমদানি দুরূহ হইয়া পড়ায় শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহের হারও হ্রাস পাইয়াছে। সকল কিছু মিলাইয়া বলা যায়, বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকিলে গোটা অর্থনীতি, এমনকি সমাজেও অস্থিরতা বৃদ্ধি পাইবে।

স্বীকার্য, আলোচ্য সম্মেলনে ব্যবসায়ের পথে যেই সকল প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হইয়াছে, সেইগুলি পূর্বের সরকারের আমলেও ছিল। বরং যদি বলা হয়, এই সকল সমস্যার পশ্চাতে বিগত আমলের অর্থনীতি বিষয়ে ভুল নীতি ও পদক্ষেপই মূলত দায়ী, তাহা হইলেও বেঠিক হইবে না। এই প্রসঙ্গে কয়েক বৎসর যাবৎ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত বিভিন্ন জরিপের কথা বলা যায়, যেখানে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বারংবার অনুরূপ চ্যালেঞ্জ উঠিয়া আসিয়াছিল। গত এপ্রিল-জুলাইয়ে পরিচালিত এই সংস্থার জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীগণ দুর্নীতিসহ অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র, উচ্চ করহার, নীতি পরিবর্তনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করিয়াছিলেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের স্থান ছিল ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৬৮তম। তবে ইহাও অস্বীকার করা যাইবে না, এই সকল ক্ষেত্রে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়াই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছিল। গত আগস্টেই এক ব্যবসায় সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশে অচিরে অনুকূল ব্যবসায় পরিবেশ সৃষ্টির অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি প্রদানের পর ইতোমধ্যে তিন মাস অতিক্রান্ত হইয়াছে; এখনও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে একই আশঙ্কার কথা বলিতে হইতেছে। তদুপরি সার্বিক ব্যবসায়ের পরিবেশ লইয়া ব্যবসায়ীগণ এই দফাসহ অন্তত তিন দফা অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বারস্থ হইলেন।
আমরা জানি, সরকার ব্যাংক খাতসহ সামগ্রিক আর্থিক খাতে ইতোমধ্যে যেই সংস্কারের কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছে, একসময় হয়তো উহা সুফল বহিয়া আনিবে। নীতি সুদহার আপাতত না বাড়াইবার আশ্বাস দিয়া সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টাও বলিয়াছেন, বেসরকারি খাতে যেন ঋণপ্রবাহ না কমে, সেইদিকে সরকার নজর রাখিতেছে। রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ও সুদের হার ব্যবস্থাপনার এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিবে। এনবিআরের কার্যক্রমে অটোমেশন প্রক্রিয়া চলমান উদ্যোগের কথা বলিয়া তিনি বহুল প্রত্যাশিত করনীতি ও কর প্রশাসনকে পৃথক করার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানাইয়াছেন। তবে আমরা মনে করি, ব্যবসায় পরিবেশ উন্নতকরণ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হইবে, যেগুলির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত। কারণ জানমালের নিরাপত্তাই যদি না থাকে, তাহা হইলে সকলই গরল ভেল। 
 

আরও পড়ুন

×