ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা

ভারতের সম্বিৎ ফিরিয়া আসুক

ভারতের সম্বিৎ ফিরিয়া আসুক

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১৭

সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে যেই নজিরবিহীন হামলা ঘটিয়াছে, উহা আমাদের যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন করিয়াছে। দেখা যাইতেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় পাঁচ দশকে কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলার অবিমৃষ্যকারিতা ঘটে নাই। ভারত সরকারের উত্তমরূপে জানা উচিত– হাইকমিশনের স্থাপনা বাংলাদেশের সার্বভৌম সম্পদ; ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী স্বাগতিক রাষ্ট্র উহার নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। লক্ষণীয়, ভারতে হামলা হইলেও বাংলাদেশে ভারতীয় কূটনৈতিক স্থাপনাগুলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হইয়াছে। খুলনায় বিক্ষোভের সংবাদপ্রাপ্ত হইয়াই ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামেও ভারতীয় উপহাইকমিশনের সম্মুখে বিক্ষোভ হইয়াছে; কিন্তু কেহ সীমা লঙ্ঘনের প্রয়াস চালায় নাই। বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট ভাষায় সকলকে এই মর্মে হুঁশিয়ার করিয়া দিয়াছে– কেহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করিলে কঠিন হস্তে দমন করা হইবে। বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহও বেশ সংযত ভাষায় আলোচ্য হামলা ও অপপ্রচারের জবাব দিয়া চলিয়াছে। এই সকল কিছু প্রমাণ করে– বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ ভারতের সহিত বন্ধুত্বকে মূল্য দেয়; উভয় দেশের শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থান কামনা করে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি এইরূপ প্রজ্ঞা ও স্থৈর্য প্রদর্শনে কার্যত ব্যর্থ হইয়াছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব ও কড়া প্রতিবাদ জ্ঞাপন সেই ক্ষেত্রে যথার্থ হইয়াছে। এখন দেখিবার বিষয় প্রতিবেশী দেশটির সম্বিৎ ফিরিয়া আসে কিনা।

বস্তুত, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলিয়া ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশবিরোধী যেই নেতিবাচক প্রচারণা চালাইয়া আসিতেছেন, উহা অগ্নিক্রীড়াতুল্য। সোমবার আগরতলায় যেই সংগঠনের ব্যানারে হাইকমিশনে হামলা হইয়াছে, সেই ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামের মধ্যেই রহিয়াছে সহিংসতার ছাপ। তাহারা যেইভাবে হাইকমিশনের স্থাপনায় প্রবেশ করিয়া বাংলাদেশি পতাকা নামাইয়া ছিঁড়িয়া ফেলিয়াছে; সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করিয়াছে; উহা যেই কোনো বিচারেই জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড। কেবল আগরতলায় নহে; একই দিবসে মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের সম্মুখেও ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ যেইভাবে বিক্ষোভ করিয়াছে, তাহা অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। সোমবারই সীমান্তের বিভিন্ন স্থলবন্দর এলাকায় বিশৃঙ্খলাও করিয়াছে ভারতীয় বিক্ষোভকারীরা। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করিয়া বাংলাদেশি পণ্য পুড়াইয়া দিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়ও রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ন্যায় সেক্যুলার ধারার রাজনীতিবিদও সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ তুলিয়া বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েনের দাবি জানাইয়াছেন। মমতা উত্তমরূপেই জানেন, বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালেও তিনি আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাইয়া বলিয়াছিলেন, উহা বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। এখন তাঁহার মতিভ্রমের হেতু কী? এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না যে, এই সকল অপকর্ম ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ নহে; বরং কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ও নিয়ন্ত্রিত। 

যদিও ইতোমধ্যে আগরতলার ঘটনায় তিন পুলিশকে সাময়িক অব্যাহতি এবং সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে; ভারত সরকারকে আরও শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতেই হইবে। স্বীকার্য, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রত্যাশিত মাত্রায় নাই, যাহা ভারত সরকারও স্বীয় দেশ সম্পর্কে দাবি করিতে পারিবে না। বিশেষত মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উভয় দেশেই নানা ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক-সামাজিক কারণে টানাপোড়েন বিদ্যমান। এমন দাবিও বাহুল্য– ৫ আগস্ট ও তৎপরবর্তী দিনগুলিতে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে নাই। খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তাঁহার একাধিক ভাষণে উল্লেখ করিয়াছেন, উক্ত সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো কোনো সদস্য হামলার শিকার হইয়াছেন। তবে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের মিডিয়া যাহা বলিতেছে, তাহা অপপ্রচার বৈ কিছু নহে। তথাপি এই ইস্যুতে ভারত সরকারের কোনো বক্তব্য থাকিলে তাহা লইয়া আলোচনা হইতেই পারে। কিন্তু উহার পরিবর্তে হুমকি-ধমকি কিংবা হাইকমিশনে হামলা আমরা মানিয়া লইতে পারি না।

আরও পড়ুন

×