ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

পুলিশ সংস্কার

অতীতের পুনরাবৃত্তি চাহি না

অতীতের পুনরাবৃত্তি চাহি না

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:৩৩

নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশের বিগত সময়ে যেই দলীয়করণ হইয়াছে, উহা অবিশ্বাস্য। বিরোধী দল বা মত দমনে প্রায় সকল সরকারই কমবেশি পুলিশকে ব্যবহার করিয়াছে। বিগত সময়ে এমনকি পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বক্তব্যও দিয়াছেন। সেই অপেশাদারিত্ব হইতে পুলিশকে বাহির হইয়া আসিবার যেই তাগিদ পুলিশ সংস্কার কমিশন পরিচালিত জরিপে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা প্রত্যাশিত ও জরুরি।

‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপে দেখা গিয়াছে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান প্রত্যাশী প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দল-মত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করিয়াছেন ৭০ শতাংশের অধিক উত্তরদাতা। সর্বাধিক সমর্থন আসিয়াছে ভুয়া ও গায়েবি মামলার অবসানে। ৯৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, মামলা যেন মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তির উপলক্ষ না হইয়া উঠে।

ইতোপূর্বে এই ধরনের বেআইনি চর্চার কারণেই পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করিবার সুযোগ পাইয়াছে। এমনকি অবৈধ উপায়ে কোনো কোনো পুলিশ অফিসার যেইরূপে অঢেল সম্পদের মালিক হইয়াছিলেন, উহাও সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে। স্বাভাবিক কারণেই পুলিশের এই দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানাইয়াছেন প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। পুলিশ কর্তৃক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ন্যায় গুরুতর অপরাধও ইতোপূর্বে সংঘটনের অভিযোগ উঠিয়াছে। এই সকল ক্ষেত্রে তাহাদের জবাবদিহি ও শাস্তি চাহিয়াছেন ৭৫ শতাংশ মানুষ।

বস্তুত ইতোপূর্বে পুলিশ তাহার এখতিয়ারবহির্ভূত যেই সকল নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট হইয়াছিল, উহাতে একদিকে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইয়াছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হইয়াছে। বিশেষ করিয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ যেইভাবে নাগরিকদের প্রতি মারমুখী হইয়াছিল এবং ভিডিওসহ নানাবিধ নথিপত্রে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডে পুলিশের যেইরূপ অংশগ্রহণ দেখা গিয়াছে, উহা নজিরবিহীন। এই কারণে পুলিশের প্রতি বিক্ষুব্ধ নাগরিকের ক্ষোভ স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছিল। যদিও ঐ সময়ে নাগরিক কর্তৃক আইন স্বহস্তে তুলিয়া থানা ঘেরাও করিয়া পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ যেই সকল অঘটন ঘটিয়াছিল, উহা আমরা সমর্থন করি না। আমরা দেখিয়াছি, জনরোষ এতটাই তীব্র হইয়াছিল, ৫ আগস্ট হইতে পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হইয়াছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতার কারণে সমগ্র পুলিশ বিভাগ কর্মবিরতিতে যাইতে বাধ্য হইবার পরিস্থিতি তৈয়ার হইয়াছিল।  

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ সংস্কারে যেই উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে, উহাকে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীর ব্যাপারে মানুষ যেই মতামত ব্যক্ত করিয়াছে, সেইগুলি সামনে রাখিয়াই সংস্কারে মনোযোগী হইতে হইবে।

ইতোপূর্বে ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’– প্রচার করা হইলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। অস্বীকার করা যাইবে না, পেশাদারিত্বের সহিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশকে যদ্রূপ অঙ্গীকারবদ্ধ হইতে হইবে, তদ্রূপ তাহাদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে রাজনীতিকদের দায়িত্ব কম নহে। আমরা চাহি, পুলিশ সংস্কার কমিশন পুলিশকে পেশাদার বাহিনীরূপে গঠন করিবার জন্য যথাযথ সুপারিশ করিবে এবং উহা বাস্তবায়নে রাজনীতিবিদরা সচেষ্ট হইবেন।

অন্তর্বর্তী সরকার স্বাভাবিক কারণেই সম্পূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম সম্পাদনের সুযোগ পাইবে না। তজ্জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকার ক্ষমতায় আসিবে তাহাদের উচিত হইবে পুলিশের সংস্কার কার্যক্রম আগাইয়া লওয়া।

স্মরণে রাখিতে হইবে, পুলিশকে পূর্বের ন্যায় ব্যবহার করিলে উহা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করিবে এবং নাগরিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাইবে। পূর্বের উদাহরণ হইতে শিক্ষা লইয়া সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ এই ক্ষেত্রে আন্তরিক হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
 

আরও পড়ুন

×