মানহীন পেঁয়াজ বীজ
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পার্শ্বে দাঁড়ান
প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১৪
সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত পেঁয়াজ বীজে অঙ্কুরোদ্গম না হইবার কারণে গোপালগঞ্জের কৃষককুল যেই দুর্ভোগে পড়িয়াছে, উহা দুর্ভাগ্যজনক। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ঐ জেলার পাঁচ উপজেলার চার শতাধিক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষককে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য কৃষি উপকরণের পাশাপাশি বারি-৪ ও তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজ কৃষকেরা জমিতে বপন করিবার ১০ দিন পর দেখা যায় বীজতলা বা মাঠে মাত্র ৫-১০ শতাংশ অঙ্কুরিত হইয়াছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটিও ইতোমধ্যে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ইহার প্রমাণ পাইয়াছে। পেঁয়াজ বীজে অঙ্কুরোদ্গম সমস্যা শুধু গোপালগঞ্জেই নহে; পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলাতেও দেখা দিয়াছে। বুধবার সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, চলমান অর্থবৎসরে ঐ দুই জেলায়ও প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে যথাক্রমে ২০ ও ৫ শতাংশ অঙ্কুরোদ্গম হয় নাই। আমরা আশঙ্কা করি, এইরূপ চিত্র দেশের অন্যত্রও মিলিবে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কৃষকের লোকসান অবধারিত। দ্রুত প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ ব্যতীত নিত্যব্যবহার্য মসলা জাতীয় ফসলটির উৎপাদনের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে, উহা উপলব্ধির জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই।
আমরা জানি, দেশের যেই সকল অঞ্চল পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত, সেইগুলির মধ্যে ফরিদপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ আসে ফরিদপুর ও পাবনা অঞ্চল হইতে। ফলে আলোচ্য সমস্যাটি কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নহে। অন্যদিকে পেঁয়াজ বীজে অঙ্কুরোদ্গম না হইবার সমস্যাটি শুধু এই তিন জেলাতেই সীমাবদ্ধ থাকিতে পারে না। কারণ প্রথমত, দেশের সর্বত্র ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের বসবাস। সরকারি প্রণোদনার বীজ সকলেরই প্রাপ্য। আর প্রণোদনা কর্মসূচির লক্ষ্য যেহেতু পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি করিয়া দ্রুত এই বিষয়ে আমদানি-নির্ভরতা হ্রাস; সরকারের পক্ষ হইতে উদারভাবেই এই বীজ সরবরাহ করিবার কথা। বলা হইতে পারে, পেঁয়াজ বীজের বার্ষিক চাহিদার একটা ক্ষুদ্র অংশই বিএডিসি সরবরাহ করে। অতএব, আলোচ্য সমস্যাটির জাতীয় প্রভাব বৃহৎ নাও হইতে পারে। কিন্তু স্মরণে রাখিতে হইবে, বিএডিসির বীজ সাধারণত মানসম্মত ও বিনামূল্যে বা সস্তা দরে পাওয়া যায় বলিয়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা এই বীজের উপর নির্ভরশীল। বিএডিসির বীজে সমস্যা অব্যাহত থাকিলে এই শ্রেণির কৃষক কার্যত উপায়হীন হইয়া পড়িবেন। পেঁয়াজ বাজারে বিশেষত বড় ও মাঝারি কৃষকদের কর্তৃত্ব অধিকতর জোরালো করিবে। স্বাভাবিকভাবে ভোক্তাদের উপরেও ইহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে বাধ্য। এহেন পরিস্থিতির সুযোগ বেসরকারি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদক ও আমদানিকারকরাও যে লইবে না, উহার নিশ্চয়তাই বা কে দিতে পারে?
আমরা মনে করি, বিএডিসির বীজ লইয়া কোনো কারসাজি রহিয়াছে কিনা, উহাও খতাইয়া দেখা প্রয়োজন। সকলেরই জানা থাকিবার কথা, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মানসম্মত ও সুলভে বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ কৃষকদের সরবরাহ করিবার লক্ষ্যেই গত শতকের আশির দশকে বিএডিসির সৃষ্টি হইয়াছিল। কিন্তু দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফসল হিসাবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ডানা ছাঁটিয়া দেওয়া হইয়াছে। ফলস্বরূপ বীজসহ সামগ্রিক কৃষি উপকরণ ব্যবসায় দেশ-বিদেশে একচেটিয়া বণিজ্য কায়েম হইয়াছে। যাহার ফলে কৃষক সমাজে প্রান্তিকীকরণের গতি বৃদ্ধি পাইয়াছে।
আশার বিষয়, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নূতন করিয়া বীজ দিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে। উহা শীঘ্রই কার্যকর হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। তৎসহিত ক্ষতিপূরণও প্রদান করা উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। তবে বিষয়টির অনুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যাহার মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হইবে কাহারা কেন কৃষকের ক্ষতি সৃষ্টির পাশাপাশি বিএডিসিরও সুনামহানি করিল।
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়