বীজ বিতরণে অনিয়ম
বোরো লইয়া ঔদাসীন্য নহে
![বোরো লইয়া ঔদাসীন্য নহে বোরো লইয়া ঔদাসীন্য নহে](https://samakal.com/media/imgAll/2024December/5-1733594766.jpg)
প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৬
কিশোরগঞ্জে বোরো বীজ বিতরণে ঘুষ লেনদেনের যেই অভিযোগ উঠিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার হাওরবেষ্টিত ইটনা উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় ধান বিনষ্ট হইবার আশঙ্কায় আগাম জাতের ধান চাষ হইয়া থাকে। উপরন্তু, ধানের ফলনের হার ও মানও অপেক্ষাকৃত অধিক। কিন্তু ঘুষের প্রস্তাবে রাজি না হইবার কারণে ইটনার কোনো ডিলার আগাম জাতের ধান ব্রি-৮৮ ভিত্তিবীজ এক গ্রামও বরাদ্দ পান নাই। অথচ অপেক্ষাকৃত উঁচু বলিয়া যথায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা নাই, সেই পাকুন্দিয়ায় ডিলারদের উক্ত ভিত্তিবীজ বরাদ্দ দেওয়া হইয়াছে ৪০ কেজি করিয়া। প্রতিবেদনমতে, পাকুন্দিয়ায় ধানের জমির পরিমাণ কম, ফলনও কম; ধানের গুণগত মানও ইটনার ন্যায় নহে। শুধু উহাই নহে, আরেক হাওরবেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেক ডিলারকে ব্রি-৮৮ ভিত্তিবীজ বরাদ্দ দেওয়া হইয়াছে ১৪০ কেজি করে। যাতায়াতের অসুবিধা ও অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ের কারণে অষ্টগ্রামের ডিলাররা জেলা সদরে না যাইয়া এই বীজ সংগ্রহ করিয়া থাকেন পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া হইতে। অধিকন্তু, অষ্টগ্রামে জমির পরিমাণও ইটনার তুলনায় কম। অভিযোগ উঠিয়াছে, অষ্টগ্রামের ডিলারদের অধিক বীজ দিবার কারণ হইল, দুর্নীতিবাজ উপপরিচালক এই সমুদয় বীজ ঘুষের বিনিময়ে অন্য ডিলারদের নিকট হস্তান্তর করিবেন।
প্রসঙ্গত, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এইবার কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের ধান আবাদে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হইয়াছে প্রায় ৭ লক্ষ ৮৯ সহস্র টন চাউল। তাহার মধ্যে ইটনায় আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সর্বাধিক, যথাক্রমে প্রায় সাড়ে ২৭ সহস্র হেক্টর জমি ও ১ লক্ষ ২৯ সহস্র টন চাউল। অষ্টগ্রামে আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ২৪ সহস্র হেক্টর জমি ও ১ লক্ষ ১২ সহস্র ১৪৭ টন চাউল। আর পাকুন্দিয়ায় আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে প্রায় সাড়ে ১০ সহস্র হেক্টর জমি ও ৪৯ সহস্র টন চাউল। স্বাভাবিকভাবেই এখন ইটনার কৃষকদের অন্য স্থান হইতে বর্ধিত মূল্যে মান ঘোষিত ভিত্তিবীজ ব্রি-৮৮ জোগাড় করিতে হইবে। সমস্যার এইখানেই ইতি নহে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইটনায় প্রত্যেক ডিলারকে বিলম্বিত জাত ব্রি-২৯ বীজ বরাদ্দ দেওয়া হইয়াছে ৪ টন ৬৫০ কেজি করিয়া। অথচ আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা বলিয়া তথায় এত বিলম্বিত জাতের বীজ প্রয়োজন নাই। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই অতিরিক্ত বীজ গুদামে পড়িয়া থাকিবে। এই সকল বীজ হয়তো চাউলের ধান হিসাবে কম দামে বিক্রি করা হইবে। ইহাতে একদিকে হাওরের ডিলার ও কৃষকরা বীজের ঘাটতিজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছেন, অন্যদিকে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে আর্থিকভাবে।
বীজ লইয়া এহেন দুর্নীতি শুধু কিশোরগঞ্জেই সীমাবদ্ধ এমনটা হলফ করিয়া বলা যায় না। কারণ ত্রুটিপূর্ণ বরাদ্দের এই নীতি অন্য হাওর অঞ্চলে তো বটেই, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও থাকা অসম্ভব নহে। ইহার ফল যে কতটা বিপর্যয়মূলক হইতে পারে তাহা ভাবা যায় না। আমরা জানি, দেশের কম-বেশি ৯০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। দেশে উৎপাদিত চাউলের কম-বেশি ৫৫ শতাংশ আসে বোরো হইতে। ইহাও বলা প্রয়োজন, দেশে চাউলের কম-বেশি ৪০ শতাংশ উৎপাদিত হয় আমন মৌসুমে, এই বৎসর যেই সময়ে দেশের উল্লেখযোগ্য এলাকা বন্যাক্রান্ত ছিল। তাই বোরো বীজ সরবরাহে দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রতিবেদনমতে, কিশোরগঞ্জ জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক ‘কিছু অনিয়ম’ স্বীকার করিয়াছেন। সংশ্লিষ্ট কৃষকদের চাহিদামাফিক বীজ সরবরাহের কথাও তিনি বলিয়াছেন। তবে সমস্যাটির টেকসই সমাধানের জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বীজ বরাদ্দ প্রক্রিয়াটিও ত্রুটিমুক্ত করা প্রয়োজন।
- বিষয় :
- বীজ