অবৈধ বিদেশি
বৈধ সংস্থাগুলি কী করিয়াছে?
প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৮
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হইতে ‘অবৈধ বিদেশি’ কর্মীদের বৈধ হইবার যেই বিজ্ঞপ্তি রবিবার দেওয়া হইয়াছে, উহা কৌতূহলোদ্দীপক বটে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যেই সকল বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করিতেছেন বা কর্মরত, তাহাদের অবিলম্বে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য আবেদন করিতে হইবে। অন্যথায় তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হইবে। দেশে লক্ষাধিক বৈধ বিদেশি থাকিবার তথ্য থাকিলেও অবৈধ সংখ্যা খোদ সরকারের না জানিবার বিষয়টি বিস্ময়কর। স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ বিদেশির সংখ্যা লইয়া যেই জল্পনা-কল্পনা রহিয়াছে, তথায় সরকারের নির্দেশনায় বাস্তব চিত্র জানিতে পারিব বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস।
বিভিন্ন সূত্রে ইহা অন্তত স্পষ্ট, দেশে যত বৈধ বিদেশি কাজ করিতেছেন, অবৈধ কর্মীর সংখ্যা উহার কয়েক গুণ। তাহারা অবৈধভাবে বাস করিবার কারণে সরকার যদ্রূপ বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাইতেছে, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডেও তাহাদের সংশ্লিষ্ট থাকিবার খবর আমরা দেখিয়াছি। ইতোপূর্বে এমন অবৈধ বিদেশি কর্তৃক নানাবিধ অপরাধে জড়িত হইয়া গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটিয়াছে। উপরন্তু তাহাদের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ও প্রণিধানযোগ্য। কয়েক বৎসর পূর্বে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির প্রতিবেদনে আসিয়াছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশির সংখ্যা কমপক্ষে আড়াই লক্ষ। অধিকাংশই অবৈধভাবে থাকিয়া বাংলাদেশ হইতে বৎসরে অন্তত ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করিতেছে। বিদেশি কর্মীরা নিয়মিত কর না দেওয়ায় অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাইতেছে সরকার। ইহার সহিত বিদেশির সংখ্যা ও ক্ষেত্র নিরূপণ করিতে পারিলে দেশের শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনাও সহজ হইবে। যদিও এমন সময়ে সরকার অবৈধ বিদেশিদের ব্যাপারে তৎপর হইয়াছে, যখন প্রতিবেশী ভারতের সহিত দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলিতেছে এবং এই অভিযোগও রহিয়াছে– বাংলাদেশে বসবাসকারী অবৈধ বিদেশির সিংহভাগই ভারতীয়। কাকতালীয় হইলেও ইহার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাইবে না।
অবৈধ বিদেশি কর্মী শনাক্তকরণে বিগত সরকারের সময়ে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা তাগিদ দিয়াছিলাম। এমন প্রশ্নও করিয়াছিলাম, এই সকল অবৈধ বিদেশিকে কাহারা চাকুরি দিতেছে? বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি প্রকল্পেই বা কীরূপে উহারা কাজ করিতেছে? আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইল, বিদেশিদের লইয়া কাজ করা অন্তত অর্ধডজন সরকারি সংস্থা কী করিতেছে? ২০১৭ সালে বিদেশি নাগরিকদের কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হইলেও বাস্তবে উহার তৎপরতা সেইরূপে দৃশ্যমান নয়। বিদেশি নাগরিকদের কার্যানুমতি প্রদানকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নিকটও কেন বিদেশি কর্মীর সংখ্যার যথাযথ তথ্য নাই? তাহারা
বিভিন্ন সময়ে যেই তথ্য দিয়াছে, তাহাও ২০-৩০ সহস্রের অধিক নয়। বেপজা ও এনজিও ব্যুরোর নিকট মাত্র ১০-১২ সহস্র বিদেশির তথ্য থাকাও অবিশ্বাস্য। পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগেরও এই ব্যাপারে বিশদ না জানিবার বিষয়টি বিস্ময়কর।
আমরা দেখিতে চাহিব, সরকার অবৈধ বিদেশিদের যেই সতর্কবার্তা দিয়াছে, উহা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হইতেছে। এই ক্ষেত্রে বিদেশিরা তো বটেই; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও তাহাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠানও আন্তরিকভাবে সরকারকে সহায়তা করিবে। বস্তুত বিদেশিদের অপেক্ষা আমাদের দায় অধিক। তজ্জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজন সহায়তা করিলে দেশের অর্থনীতি যদ্রূপ লাভবান হইবে, তদ্রূপ দেশের বেকারত্ব দূরীকরণেও কিঞ্চিৎ ভূমিকা রাখিবে। সর্বোপরি, অবৈধ বিদেশিদের ঝুঁকি দেশ কেন বহন করিবে?
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়