ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

পাঁচ মাস বেতন বন্ধ

তথ্য আপার তথ্য সরকার জানে?

তথ্য আপার তথ্য সরকার জানে?

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৫:২৭

সরকারের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করিলেও ইহার প্রায় দুই সহস্র নারীর পাঁচ মাস ধরিয়া বেতন বন্ধ থাকিবার বিষয়ে বিপরীত বার্তাই স্পষ্ট। বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্পের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা ঠিকই বেতন পাইতেছেন; মাঠ পর্যায়ে কর্মরত তথ্য আপারাই বঞ্চনার শিকার! জুনে শেষ হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ এক বৎসর বৃদ্ধি করিলেও বেতন প্রদানে বিলম্বের হেতু কী?

আমরা জানি, ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্যসমৃদ্ধ ব্যক্তি নিজের জীবনের যদ্রূপ উন্নত করিতে পারেন, তদ্রূপ সমাজকেও আলোকিত করিতে সক্ষম। তজ্জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের পশ্চাদ্‌বর্তী নারীদের অগ্রসর করিতে তথ্য আপা প্রকল্পের অবদান অনস্বীকার্য।

উক্ত প্রকল্পের অধীনে মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করা হয় এবং গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীর সচেতনতার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ কার্যও তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হইয়া থাকে। নারী যাহাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য লাভ করিতে পারেন এবং তথ্যের সহায়তায় সমস্যা সমাধানে নিজেরাই দক্ষ হইতে পারেন, উহাও আলোচ্য প্রকল্পের অংশ। দেশব্যাপী বিস্তৃত এহেন জরুরি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরাইয়া যায় নাই। আমরা মনে করি, সরকার সেই তাগিদ হইতেই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করিয়াছে। উহার পরও সংশ্লিষ্টদের বেতন পাঁচ মাস বন্ধ থাকিবার বিষয় কেবল অগ্রহণযোগ্য নহে, বৈষম্যমূলকও বটে।  

বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে যথায় ফি মাসের বেতনে চলাই দুষ্কর, তথায় পাঁচ মাস বেতনবিহীন জীবন কতটা কঠিন, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। উপরন্তু প্রকল্পটিতে বেতন বৈষম্যের বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য আপা প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে সমগ্র দেশে উপজেলা পর্যায়ে যেই তথ্যকেন্দ্র রহিয়াছে, তথায় একজন তথ্যসেবা কর্মকর্তা এবং দুই তথ্যসেবা সহকারী কর্মরত। ইহাদের মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তথ্যসেবা কর্মকর্তা দশম গ্রেডের হইলেও নির্দিষ্ট স্কেলের বেতন পাইয়া থাকেন। অনুরূপ তথ্যসেবা সহকারীদেরও কম বেতন দেওয়া হয়। তাহাদের এই বেতন বৈষম্যও নিরসন করা আবশ্যক। 

আমরা দেখিয়াছি, আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে কর্মরত নারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এবং সচিবালয়ের সম্মুখে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করিয়া তাহাদের চাকুরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে অবস্থান করিয়াছিলেন। এই ব্যাপারে তাহাদের আশ্বস্তও করা হইয়াছে।

আমরা প্রত্যাশা করি, তাহাদের চাকুরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়টি সরকার ইতিবাচকরূপে বিবেচনা করিবে। উহা না হইলেও যতদিন প্রকল্প থাকিবে ততদিন সঠিক সময়ে তাহাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করিতে হইবে। পাঁচ মাসের যেই বকেয়া, উহা দ্রুত পরিশোধ করা জরুরি। 

দেশের নারীর তথ্যের জগতে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে তাহাদের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াকে দ্রুততরকরণের এই প্রকল্প আরও কীভাবে বিস্তৃত করা যায়, সেই চিন্তাভাবনাও জরুরি। তথ্য আপা প্রকল্পটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মহিলা সংস্থা বাস্তবায়ন করিয়া থাকে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যদ্রূপ গৃহে গৃহে গিয়া সেবা দিয়া থাকেন তদ্রূপ প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া মোবাইল ফোনের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীগণ তথ্যসেবা পাইয়া থাকেন। এইরূপ প্রকল্পের প্রতি অবহেলা প্রত্যাশিত নহে। 

আমরা বিশ্বাস করিতে চাহি, দৃশ্যত নারীবান্ধব সরকার নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি অগ্রাধিকারে লইয়া তথ্য আপা প্রকল্পে কর্মরতদের বকেয়া বেতন দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। ইহার সহিত পাঁচ মাসের ন্যায় দীর্ঘ সময় কেন তাহাদের অর্থকষ্টে দুর্ভোগ পোহাইতে হইয়াছে, উহার কারণও অনুসন্ধান করিতে হইবে। এই ব্যাপারে কাহারও দায়িত্বহীনতা থাকিলে ব্যবস্থা লইতে হইবে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তির স্বার্থেই।

আরও পড়ুন

×