ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশি নাবিক আটক

অপ্রতিবেশীসুলভ ও অমর্যাদাকর

অপ্রতিবেশীসুলভ ও অমর্যাদাকর

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৭

নাবিক ও কোস্টগার্ডের দাবি অনুযায়ী, দেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে মৎস্য আহরণের পরও যেইভাবে বাংলাদেশের দুইটি ট্রলারসহ ৭৯ নাবিককে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। মস্তকের পশ্চাতে হস্ত-সংবলিত নতজানু হইয়া উপবিষ্ট বাংলাদেশি নাবিক-জেলেদের আলোকচিত্র সামাজিক মাধ্যমে বিস্তৃতির বিষয় অমর্যাদাকর, অপ্রতিবেশীসুলভ ও উস্কানিমূলক। আমরা জানি, ভারতীয় জেলেরা প্রায়শ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে। তাহাদের আটকের পর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করিয়া সসম্মানে ফিরাইয়া দেওয়া হয়। বিপরীতে ভারত নাবিকদের আটকসহ তাহাদের সহিত যাহা করিয়াছে, উহা বাড়াবাড়ি বৈ কিছু নহে।
আমরা জানি, প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সহিত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা মীমাংসিত। আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দেশ কিংবা জেলেরা স্ব স্ব সীমানায় মৎস্য আহরণ কিংবা অপরাপর কার্য করিতে পারিবে। সীমা অতিক্রম করিলেই কেবল সংশ্লিষ্ট দেশ আটকের অধিকার রাখে। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন হইতে জানা যাইতেছে, নাবিক ও দেশের কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করিয়াছে– গত সোমবার মৎস্য আহরণের ট্রলার দুইটি বঙ্গোপসাগরে খুলনার হিরন পয়েন্টে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার নিকটবর্তী এলাকায় যথাকর্মে ব্যাপৃত অবস্থায়ই ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করিয়া লইয়া যায়। সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন না করিলেও কেন তাহাদের আটক করা হইল? তাহারা আটক করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই; অবমাননাকর চিত্র ধারণ করিয়া এমনকি ভারতীয় কোস্টগার্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তাহা প্রকাশ করিয়াছে। 

এমন সময়ে বাংলাদেশি নাবিকদের সহিত ভারত এই আচরণ করিয়াছে, যখন দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলিতেছে। কেবল ভারতীয় মিডিয়াতেই 
বাংলাদেশ সম্পর্কে গুজব ও অপতথ্য ছড়ানো হইতেছে, তাহা নয়। একই সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতিকদের তরফ হইতেও উস্কানিমূলক বাণী বর্ষণ করা হইয়াছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর অন্তে নিশ্চিত করিয়াছেন, দুই দেশের জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতা অব্যাহত থাকিবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সহিত ভারত ঘনিষ্ঠভাবে কার্য করিবে। এই ঘোষণার পরও নাবিকদের সহিত ভারতীয় কোস্টগার্ড যেই আচরণ করিয়াছে, উহাতে আমরা ক্ষুব্ধ। 

স্বস্তির বিষয় এই, বৃহস্পতিবার অত্র সম্পাদকীয় রচনাকালে জানা গিয়াছে, বাংলাদেশি নাবিকদের ফেরত পাঠানো হইবে। উড়িষ্যার পুলিশের বরাতে সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে, আটক জেলে-নাবিকদের বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের নিকট হস্তান্তর করা হইবে। ভারতীয় কোস্টগার্ড যদিও অভিযোগ করিয়াছে, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ও ১৯৮১ সালের মেরিটাইম জোন অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট লঙ্ঘন করিয়া ট্রলার দুইটি ভারতীয় জলসীমায় চলাচল করিতেছিল। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের উচিত হইবে বিষয়টি পুনঃতদন্ত করিয়া যথাযথ ব্যবস্থা লওয়া। ট্রলার দুইটি যদি সমুদ্রসীমা অতিক্রম করিয়া না থাকে, তবে ভারতকে জবাবদিহি করা দরকার। একই সঙ্গে অগ্রহণীয় চিত্র ধারণ করিয়া সামাজিক মাধ্যমে বিস্তৃতকরণের ব্যাপারেও তাহাদের ব্যাখ্যা দাবি করা জরুরি।
প্রতিবেশীরূপে ভারতের সহিত অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করিতে হইবে। একই সঙ্গে সার্বভৌম দেশরূপে বাংলাদেশও তাহার আপন অবস্থানের ব্যাপারে সচেষ্ট হইবে। ভারতের সহিত যেহেতু সমুদ্রসীমা নিষ্পন্ন; এই মুহূর্তে করণীয় হইবে দেশের সমুদ্রসম্পদ সুরক্ষিত রাখা। আমরা জানি, সমুদ্র বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনার। এই সম্ভাবনা পরিকল্পিতভাবে কার্যকর করিলে, সেই সুনীল অর্থনীতি যদ্রূপ দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টাইতে পারে, তদ্রূপ তেল-গ্যাসসহ বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের সমাধান হইতে পারে। তজ্জন্য অন্য দেশের হস্তক্ষেপ এইখানে চলিবে না বলিয়া কড়া বার্তা দিতে হইবে, যাহাতে প্রতিবেশীর জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম না করে এবং দেশের জেলেরাও অন্যদের সীমায় প্রবেশ না করে। সেই ব্যাপারে সরকার, বিশেষত কোস্টগার্ডের সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা কাম্য। 
 

আরও পড়ুন

×