ঢাকা শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

টিসিবির পণ্য সংকট

ত্বরিত পদক্ষেপ কাম্য

ত্বরিত পদক্ষেপ কাম্য

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৯

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকায় টিসিবির পণ্য লইয়া ক্রেতাদের মধ্যে যে কাড়াকাড়ি চলিতেছে, তাহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। অন্তত শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে যে চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, তাহার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটা ভাবা যে কাহারও জন্য স্বাভাবিক। তথায় বলা হইয়াছে, বাজারের তুলনায় অধিক সাশ্রয়ী বলিয়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভোর হইতে লাইনে দাঁড়াইয়া টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষায় থাকিতেছেন বহু মানুষ। আর বিক্রয় আরম্ভের পর রীতিমতো ‘যুদ্ধে’ শামিল হইতেছেন তাহারা। এই যুদ্ধের কারণ হইল, সংসার সামাল দিতে বহু মধ্যবিত্ত মানুষ টিসিবির ট্রাকের সম্মুখে দাঁড়াইতেছেন, যদিও এই সকল পণ্য মূলত দরিদ্র বা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ। অনেক বাড়ির মালিকও গৃহকর্মী পাঠাইয়া টিসিবির পণ্য ক্রয় করিতেছেন। শুধু উহা নহে, টিসিবি কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে তাহারা দিনে প্রতিটি ট্রাকের মাধ্যমে ৮০০ কেজি ডাল ও ৮০০ লিটার সয়াবিন তৈল বিক্রয় করিতেছেন। আর টিসিবি দিনে জনপ্রতি ২ লিটার সয়াবিন তৈল ও ২ কেজি মসুর ডাল বিক্রয় করে বলিয়া প্রতিটি ট্রাক হইতে মাত্র ৪০০ জন পণ্য ক্রয় করিতে পারিতেছেন। অর্থাৎ রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ৫০টি ট্রাকের সুবিধাভোগী বড়জোর ২০ সহস্র মানুষ। চাহিদা ও সরবরাহের ফারাক বিশাল হইলে আলোচ্য পরিস্থিতির উদ্ভব স্বাভাবিক। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রামপুরা টিভি সেন্টার, হাতিরঝিল মধুবাগ ব্রিজ, চৌধুরীপাড়া পেট্রোল পাম্প, জাতীয় প্রেস ক্লাবসংলগ্ন কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন, বেগুনবাড়ি, সাতরাস্তাসহ অন্তত ১০ স্পট সরেজমিন ঘুরিয়া সমকাল প্রতিবেদকের পর্যবেক্ষণ হইল, প্রতিদিন প্রায় অর্ধেক মানুষ টিসিবি পণ্য হইতে বঞ্চিত হইতেছেন। এই কথাও সত্য, টিসিবি প্রতি লিটার সয়াবিন তৈল ১০০ টাকা এবং প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকায় বিক্রয় করে, যাহা বর্তমানে বাজারে বিক্রয় হয় যথাক্রমে ১৭৫ ও ১০৫-১১০ টাকায়। ফলে পরিবারের একজন পণ্য দুইটা ক্রয় করিলে ২৪০ হইতে ২৫০ টাকা সাশ্রয় হয়, সদস্য বৃদ্ধি করিলে যাহা আরও বৃদ্ধি পায়। টিসিবির পণ্য লইয়া উল্লিখিত কাড়াকাড়ির পশ্চাতে ইহারও ভূমিকা কম নহে। 

স্বীকার করিতে হইবে, যেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এই অবস্থার উদ্ভব ঘটিয়াছে, উহার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী নহে। মূলত বিপুল অর্থ পাচারসহ বিগত সরকারের নানাবিধ ভুল অর্থনৈতিক পদক্ষেপই উক্ত অবস্থার জন্য দায়ী। কিন্তু ইহাও স্বীকার্য, ক্ষুধার্ত মানুষের নিকট কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্যতা পায় না। তাহাদের একমাত্র প্রত্যাশা, যে কোনো মূল্যে ক্ষুধা নিবারণ। এই দায়িত্ব বর্তমান সরকারকেই লইতে হইবে। অর্থনীতিবিদরা বলিতেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে টিসিবির পণ্যের সরবরাহ ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি। প্রয়োজনে এই খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপির অব্যবহৃত অর্থ ব্যয়েরও পরামর্শ দিয়াছেন তাহারা। নিঃসন্দেহে, টিসিবির সক্ষমতা রাতারাতি বৃদ্ধি করা সম্ভব নহে। সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও বিবেচনায় লইতে হইবে। আর বিদ্যমান মুক্তবাজার ব্যবস্থায় টিসিবির পক্ষে বাজারের বিকল্প হইবারও সুযোগ নাই। তাই বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থার ত্রুটি সারাইতেই সরকারকে অধিকতর মনোযোগী হইতে হইবে। এই প্রশ্ন কি অসংগত যে, বিগত আমলের সিন্ডিকেট এখনও বাজারে সক্রিয় থাকে কী করিয়া? সমকালেরই আরেক প্রতিবেদনে খাদ্যভান্ডার বলিয়া পরিচিত রংপুর অঞ্চলে এই ভরা আমন মৌসুমেও সিন্ডিকেটের কারণে সকল প্রকার চাউলের মূল্য কেজিতে ৫-৬ টাকা বৃদ্ধির কথা বলা হইয়াছে। তাহাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা আইনগত ব্যবস্থা লইলে বাজার হয়তো আরও অস্থির হইতে পারে। কিন্তু বাজার বিশেষজ্ঞরা বহুদিন যাবৎ বিশেষত মাঝারি পর্যায়ের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকেও সংশ্লিষ্ট নিত্যপণ্যের এলসি বা ঋণপত্র খুলিতে সহায়তা করিবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়া আসিতেছেন, সেই পরামর্শ মানা হইতেছে না কেন? আর কিছুদিন পরেই রমজান, যখন সকল পণ্যের মূল্য বাড়িয়া যায়। ইহার জন্যও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ত্বরিত পদক্ষেপ লইবে, এই প্রত্যাশা আমাদের।

আরও পড়ুন

×