ঢাকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জনভোগান্তি নয়, আলোচনায় সমাধান

জনভোগান্তি নয়, আলোচনায় সমাধান

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৫৩

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বুধবার রাজধানীসহ সমগ্র দেশেই ভোগান্তি তৈয়ার করে। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় ৯ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার কারণে সাধারণ মানুষ তো বটেই, রোগীগণও দুর্ভোগে পড়িয়াছিলেন। ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’ ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর অন্যান্য এলাকাসহ যেইভাবে সমগ্র দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করিয়া সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করিয়া রাখিয়াছিলেন, উহাতেও মানুষের ভোগান্তি সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হইল, যেই সকল দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করিতেছেন, সেইগুলি ন্যায্য হইলে এতদিনেও কেন বাস্তবায়ন হয় নাই? তদ্ব্যতীত নাগরিকদের জিম্মি করিয়া দুর্দশা বৃদ্ধির এহেন প্রতিবাদ কি চলিতেই থাকিবে?

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বৃহস্পতিবারও চলমান ছিল। সমগ্র দেশে তাহাদের ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করিয়া শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার প্রশাসনের সহিত আলোচনায় বসেন। আলোচনার পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জানাইয়াছেন, তাহারা বৈঠকে সন্তুষ্ট নন; পুনরায় আন্দোলন আহ্বান করিবেন। আন্দোলনের নামে যদি পুনরায় মানুষদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়, উহা হইবে দুঃখজনক। আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই আন্তরিক হওয়া জরুরি। সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট, পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা যেই ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করিতেছেন, ইহার চার দফা মানিয়া লইতে সরকার একমত। বাকি দুই দফার বিষয়েও প্রশাসনের আন্তরিকতা স্পষ্ট। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে যাহা এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা কঠিন।                                                                                                                                                  
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি ‘ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর’ বিষয়ে। সেইখানে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করিয়াছে, ভবিষ্যতে উক্ত নামে কোনো পদ থাকিবে না। কিন্তু ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করিবার বিষয়ে জটিলতা হইল, সরকারি চাকুরির বয়স চার বৎসর হইয়া গেলে বাদ দিতে আইনগত বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে। আন্দোলনকারীদেরও উহা বিবেচনা করা দরকার।
স্বস্তির বিষয়, কর্তৃপক্ষ ‘ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে যেই কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বৎসর মেয়াদি মানসম্পন্ন পাঠ্যক্রম চালু এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করিবার বিষয়ে একমত হইয়াছে। শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দশম স্তরে নিয়োগের যেই দাবি জানাইয়াছেন, উহা যৌক্তিক এবং সরকার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই বিবেচনা করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। কারিগরি খাত পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দেওয়া এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও গবেষণাগার সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিও যৌক্তিক। পর্যায়ক্রমে বিষয়টি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক হইলে উহা কারিগরি শিক্ষার উন্নতিতে ভূমিকা পালন করিবে। স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবিরও যৌক্তিকতা রহিয়াছে। পাশাপাশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের যেই সীমাবদ্ধতা, তথায় তাহাদের দাবি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা লইতেই হইবে।

দুঃখজনক হইলেও সত্য, দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা যতটা গুরুত্ব পাওয়া জরুরি ছিল, ততটা পায় নাই। কারিগরি শিক্ষা বহুমাত্রিক সংকটে পড়িয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আকর্ষণীয় হয় নাই। এই শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করিতে হইলে আমূল সংস্কার জরুরি এবং এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেই সকল দাবি উপস্থাপন করিয়াছেন, সেইগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষায় অগ্রাধিকার নিশ্চিত করিতে হইবে। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও বাস্তবতা অনুধাবন করিতে হইবে। প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা তাহারা যদ্রূপ বুঝিবার চেষ্টা করিবেন তদ্রূপ অবরোধের মতো কর্মসূচিতে জনভোগান্তির বিষয়ও চিন্তা করিতে হইবে। বৃহস্পতিবারের আলোচনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হইলেও তাহাদের আলোচনা চালাইয়া যাইতে হইবে এবং আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজিতে হইবে। আন্দোলনের মাধ্যমে জনভোগান্তির উপলক্ষ গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। বিষয়টি অনুধাবন করিয়া প্রশাসনও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহিত পুনরায় আলোচনায় বসুক এবং সমাধানের পথ উন্মুক্ত করুক।

আরও পড়ুন

×