ঢাকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র হইতে বাংলাদেশি ফেরত

প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিষেধক উত্তম

প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিষেধক উত্তম

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৩১

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নূতন অভিবাসন নীতির খড়্গ অবশেষে বাংলাদেশের উপরেও পড়িল। পুলিশের বিশেষ শাখা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়া সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাইবার মার্কিন কর্মসূচির অধীনে রবিবার পর্যন্ত ৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠাইয়াছে যুক্তরাষ্ট্র। তাহাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, একজন নারী। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যদিও বলা হইয়াছে, অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় পরাজয়ের পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করিতেছিলেন এবং বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়াছেন, মূলত এমন ব্যক্তিদেরই দেশে ফেরত আসিতে বাধ্য করা হইয়াছে; বিষয়টি তথায় থামিয়া থাকিবে না। 

সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অনুসারে, পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হইবেন। এমনকি ইতোমধ্যে যেই সকল শিক্ষার্থী উক্ত দেশে অবস্থান করিতেছেন, তাহাদের কেহ সাম্প্রতিক ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে শামিল হইয়া থাকিলে দেশে ফিরিয়া আসিতে বাধ্য হইবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেই নির্বাহী আদেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হইয়াছে, একই আদেশে নূতন মার্কিন নাগরিকত্বপ্রাপ্তির পথও বহুলাংশে রুদ্ধ করা হইয়াছে। বিশেষত জন্মসূত্রে নাগরিকত্বপ্রাপ্তি কঠিন হইতে চলিয়াছে। পরিবারের একজন নাগরিকত্ব লইয়া অবশিষ্টদের ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রে লইয়া যাইবার নিয়মও বাতিল হইতেছে। 

অধিকতর উদ্বেগের বিষয়, এই সকল পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসন এমন সময়ে কার্যকর করিতেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ প্রবাসী আয়ের একক বৃহত্তম উৎস দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, আমদানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবাসী আয়ের অবদান হিসাব করিলে ট্রাম্পের ঐ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব বহুমুখী হইবার আশঙ্কাই অধিক। যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থী গ্রহণের বর্তমান ধারা বন্ধ করিয়া দিলে বাংলাদেশ অন্যভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা কম নহে। বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণে বিগত মার্কিন প্রশাসনের আশ্বাস বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা-ভার লাঘবে অল্প হইলেও যেই ভরসা জোগাইয়াছিল, উহাও বিবর্ণ হইয়া আসিবে। 

আমরা জানি, এহেন বিপদ অকস্মাৎ উপস্থিত হয় নাই। মূলত গত বৎসর নির্বাচনী প্রচারাভিযানেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নূতন এই অভিবাসন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলিয়াছিলেন। কিন্তু আমাদের সরকার কি এতদ্বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছে? অন্য অনেক দেশের নাগরিকদের ন্যায় বাংলাদেশি নাগরিকদের হস্তে যে লৌহচুড়ি ও পদযুগলে ডান্ডাবেড়ি লটকাইয়া বা সামরিক বিমানে ফেরত পাঠানো হয় নাই– উহা নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। ইহার পশ্চাতে অন্যান্য বিষয়ের সহিত অন্তর্বর্তী সরকারের জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতাও ভূমিকা রাখিয়াছে– বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের এহেন দাবিও ফুৎকারে উৎক্ষেপের কারণ থাকিতে পারে না। কিন্তু ইহাও সত্য, যুক্তরাষ্ট্রে কত বাংলাদেশি অবৈধ হইয়া পড়িয়াছেন, তাহার কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা সরকারের নথিতে নাই। কেহ অবৈধরূপে চিহ্নিত হইলে যুক্তরাষ্ট্রে যথাযথ আইনি লড়াই চালাইতে তাঁহাকে বাংলাদেশ সরকার আদৌ সাহায্য-সহযোগিতা করিয়াছে কিনা, তাহা আমাদের জানা নাই। বিশেষত শিক্ষার্থীদের মার্কিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে অধ্যয়ন চালাইয়া যাইতে সহযোগিতা করা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। ট্রাম্প প্রশাসন যে ভ্রান্ত নীতির বশবর্তী হইয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভকে ‘অ্যান্টিসেমেটিক’ বিক্ষোভরূপে বর্ণনা করিয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অগণতান্ত্রিক কায়দায় ধূলিসাৎ করিয়া দিতেছে, তাহা উত্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস, এতদ্বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করিলে বিশ্বজনমতও আমাদের সহিত থাকিবে। 
আমরা নিশ্চয়ই চাহিব, ইতোমধ্যে যেই সকল অনথিভুক্ত অভিবাসী দেশে ফেরত আসিয়াছেন, তাহাদের আইনি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হইলে সরকারকে তাহা জোগাইতে হইবে। প্রয়োজনে তাহাদের কাউন্সেলিং এবং আর্থিক সহযোগিতাও দিতে হইবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিকারমূলক পন্থা লইয়াও ভাবিতে হইবে। প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিষেধক উত্তম– ইহা কে না জানে!

আরও পড়ুন

×