ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

রাজধানীর যানজট

নাগরিক দুর্ভোগ কাটিবে না?

নাগরিক দুর্ভোগ কাটিবে না?

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫ | ০০:২৪ | আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ | ০৭:০৭

রাজধানীতে বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার কারণে সাধারণ নাগরিকের ভোগান্তি ছিল চরমে। দুর্ভোগে পড়িয়াছিলেন রোগীসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সড়কে চলাচলকারী মানুষ। বুধবার সকাল হইতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকা হইতে ‘লংমার্চ’ করিয়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হইবার পরই সড়কে যেই অচলাবস্থার সূচনা হইয়াছিল, অন্যদের আন্দোলনের কারণে সমস্ত দিবস ধরিয়াই উহা বলবৎ ছিল। বিশেষত পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সম্মুখে মানববন্ধন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর মৃত্যুতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ; নার্সিং শিক্ষার্থীদের শাহবাগে সড়ক অবরোধ এবং আগারগাঁওয়ে বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীদের আন্দোলনের কারণে রাজধানী কার্যত স্থবির হইয়া পড়ে। অধিকন্তু বুধবার মধ্যাহ্নে হঠাৎ বজ্রসহ প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। নগরবাসীকে পড়িতে হয় সীমাহীন যন্ত্রণায়। নারী-শিশুদের ভোগান্তিও ছিল চরমে। ইহার মধ্যে মেট্রোরেল দুই দণ্ড শান্তি দিলেও অতিরিক্ত জনচাপে অনেকে উক্ত দ্রুতযানে আরোহণেরই সুযোগ পান নাই।

বস্তুত গত বৎসরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতেই বিবিধ দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি আন্দোলন করিয়া আসিতেছে। এমনকি অনেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও সচিবালয় ঘিরিয়াও দাবি জানাইতেছিল। অবশেষে সরকার বাধ্য হইয়াই যমুনা ও সচিবালয় সন্নিহিত স্থলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আমরা বিস্মিত, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পার্শ্বস্থলে সম্প্রতি এক আন্দোলন সংঘটিত হইলেও সরকার উহাদের বাধা দেয় নাই। অথচ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসহ অন্যান্য দাবিতে যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ করিতে দেওয়া হয় নাই। তাহাদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হইয়াছে। প্রশ্ন হইল, সরকারের এই দ্বিমুখী নীতির ব্যাখ্যা কী? আমরা মনে করি, আইন সকলের জন্যই সমান এবং জননিরাপত্তা ও সংবেদনশীলতার কারণে সরকারি নীতি সকলের জন্য সমভাবে প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

গত মাসে আমরা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর সড়ক অবরোধ করিয়া আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগ লইয়া এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। মানুষকে জিম্মি করিয়া আন্দোলন প্রত্যাশিত হইতে পারে না। ইতোপূর্বে ইহাও ব্যক্ত করা হইয়াছে, সড়কে অবস্থান করিয়া জনভোগান্তি উৎপাদনের পরিবর্তে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাবি পেশ করা শ্রেয়। কর্তৃপক্ষেরও উচিত যথাযথ প্রক্রিয়ায় ন্যায্য দাবিতে সাড়া দেওয়া। উহার ব্যত্যয়ে পরিণতি কী রূপ, রাজধানীর জনভোগান্তিই উহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 
স্বভাবতই যানজটের কারণে রাজধানীতে নিত্যভোগান্তি অবধারিত। তদুপরি নগরব্যাপী বিভিন্ন সংস্থার সড়ক কর্তন-খোদন, ভাঙা সড়ক ও বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগের সীমা নাই। কয়েক দিবস ধরিয়া প্রচণ্ড গরমেও অতিষ্ঠ নগরবাসী। এত অস্বস্তির মধ্যে নগরবাসী প্রায়শ যে সড়ক অবরোধের মুখে পড়েন, উহার বেদনা অনুধাবন করা কঠিন নহে। বিভিন্ন দাবিদাওয়া লইয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার এই নরকযন্ত্রণার অবসান জরুরি। 

অনুধাবন করিতে হইবে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করিতেছে। যথায় সকল দাবি পূরণ করা উহাদের পক্ষে সম্ভব নহে। তাহার পরও অস্বীকার করা যাইবে না, এই সরকার উল্লেখযোগ্য দাবি মানিয়াছে। কিন্তু তাহারা এইরূপ আন্দোলনের কারণে যদি প্রধান কার্যে মনোনিবেশ করিতে না পারে, সামষ্টিকভাবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইব। বিষয়টি আন্দোলনকারীদের মগজে লইতে হইবে। তবে সরকারকেও তাহার সামর্থ্যের মধ্যে যথাসম্ভব যেই কোনো দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখিতে হইবে। সড়কে অবরোধ অপেক্ষা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অধিকতর কার্যকর বলিয়া আমাদের প্রত্যয়।

আরও পড়ুন

×