ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্যদৃষ্টি

আরেক 'নিউ নরমাল'

আরেক 'নিউ নরমাল'

হাসান ইমাম

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৩:০৫

অর্থ, প্রযুক্তি ও মাতব্বরিতে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রতি তিনজনের একজন জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। বিশেষজ্ঞদের এ কথা বিশ্বাস না হলে দেশটির দিকে একবার তাকান। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি অঙ্গরাজ্য বৃষ্টি, বন্যা, ঝড়ে জেরবার; অন্যদিকে দাবানলের কবলে ক্যালিফোর্নিয়া ও এর লাগোয়া অঙ্গরাজ্যগুলো। সামনের দিনগুলোতে মার্কিনিদের নজিরবিহীন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে বলেও সতর্কতা উচ্চারিত হয়েছে বিশেষজ্ঞদের জবানিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের নানা প্রান্তের কোথাও অতিরিক্ত বর্ষণ তো কোথাও অসহনীয় গরম; নয়তো হাড়ে কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা বা ফসল জ্বলানো খরা, যাকে বলে প্রকৃতির রুদ্র রূপ দেখছে বিশ্ববাসী।

এ বছর গ্রীষ্ফ্মে ভয়ানক বন্যার কবলে পড়ল চীন, জার্মানি, ভারতসহ কয়েকটি দেশ। এর চেয়েও দানবীয় বন্যা হয়েছিল পূর্ব আফ্রিকায়, গত বছর। বিপুলসংখ্যক মানুষ পানীয় জলের সংকটের মুখে। বাংলাদেশসহ বহু দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ জীবন-জীবিকা ও বসতি হারানোর ঝুঁকিতে। সম্ভাব্য পরিস্থিতির ভয়াবহতা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, পর্যবেক্ষকসহ সচেতন মানুষ। কিন্তু কেউ সেভাবে কান দিচ্ছেন না তাতে। এবার বিশ্বের দুই শতাধিক চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকীর সম্পাদকরা বলেন, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আটকে রাখাসহ নির্বিচার প্রকৃতিবিনাশ বন্ধ করতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এবার কি বিশ্বনেতাদের আড়মোড়া ভাঙবে? এরই মধ্যে অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, জলবায়ু মোকাবিলায় 'ঐতিহাসিক বিনিয়োগ' দরকার।

১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করে 'ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' (আইপিসিসি)। উদ্দেশ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে সংস্থাটি। গত ৯ আগস্ট ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে তারা আবারও বলেছে, উষ্ণায়নের জন্য দায়ী মানুষেরই কার্যকলাপ। বর্তমানে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা শিল্পবিপ্লবের আগের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি। এর মধ্যে মানুষের অবদান ১ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড; বাকিটার কারণ প্রাকৃতিক। ২০১০ থেকে ১৯ সালের মধ্যে হিমবাহগুলো যত বরফ হারিয়েছে, অতীতে এমন নজিরের হদিস পাওয়া যায় না।

মহাসাগরের চেয়ে স্থলভাগে তাপমাত্রা বাড়ছে বেশি। উষ্ণতার সঙ্গে বাড়ছে আর্দ্রতাও। ফলে বৃষ্টিপাত বাড়বে; মানে বন্যার ভয়াবহতাও ব্যাপক হবে। আর্দ্রতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে খরার প্রকোপ। বিশ্ব উষ্ণায়ন ৪ ডিগ্রিতে পৌঁছালে স্থলভাগের প্রায় অর্ধেক তীব্র খরায় আক্রান্ত হবে। এমনকি উষ্ণতা যদি দেড়-দুই ডিগ্রিতেও স্থিতিশীল হয়, তা হলেও দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বড় অংশ খরাকবলিত হবে। এসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস, যারা চাষবাসের জন্য নির্ভর করে মূলত বৃষ্টির ওপর। কার্বন ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে এই মানুষদের ভূমিকা প্রায় শূন্যের ঘরে। আইপিসিসির প্রতিবেদন দরিদ্র দেশগুলোর প্রতি হওয়া অন্যায়কে আরেক দফা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে- অর্থ নেই, প্রযুক্তিতে পিছিয়ে এবং মাতব্বরিতে কোনো হিস্যা নেই যাদের, তারা বেশি মার খাবে।

যে হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তা বজায় থাকলে ২০৩০-এর দশকেই হয়তো 'দেড় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড' পূরণ করবে বিশ্ব। ফলে যে 'নিউ নরমাল'-এর দিকে ধাবিত আমরা, তাতে মঙ্গলে বসতি গড়াই হয়তো একমাত্র বিকল্প! সময় যতটাই লাগুক, বিশ্বের সব মানুষকে টিকার আওতায় এনে করোনার কারণে সৃষ্ট 'নিউ নরমাল' এক দিন না এক দিন অবসিত হবে। কিন্তু প্রকৃতির আঙিনায় 'আগুন' লাগিয়ে মানুষের ঘর সুরক্ষিত রাখার উপায় নেই। সাধু, এখনই সাবধান হও।

সাংবাদিক
hello.hasanimam@gmail.com

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×