মোবাইল ফোন
গ্রাহকের ভোগান্তি নিরসন করুন
করোনা সংক্রমণের মধ্যে সড়কে চলাচলের সময় অনেকেই মাস্ক পড়ছেন না। ছবি-ফোকাস বাংলা
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সেবা নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ নতুন নয়। শনিবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিমাত্রায় কল ড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি, বিভিন্ন প্যাকেজের ফাঁদ, গ্রাহকের অজান্তে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস চালু করে টাকা কেটে নেওয়া প্রভৃতি ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ গ্রাহক। এমনকি গত দুই বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসিতে প্রায় ৪২ হাজার অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধানত কথা বলার জন্য গ্রাহক মোবাইল ফোন ব্যবহার করলেও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিতে পারছে না। তারা দেশব্যাপী নেটওয়ার্কের কথা বললেও অনেক জায়গায়ই ভালো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। 'শক্তিশালী' নেটওয়ার্ক রয়েছে এমন স্থানেও ঘটছে কল ড্রপের বিড়ম্বনা। আমরা জানি, বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের উল্লেখযোগ্য অংশ ইন্টারনেটও ব্যবহার করে। ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে উচ্চমূল্য নিলেও অভিযোগ রয়েছে, ইন্টারনেট সেবার মান অত্যন্ত নিম্ন। ইন্টারনেটে ফোরজি বলা হলেও বাস্তবে দেশের অধিকাংশ স্থানেই ফোরজি নেই।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সুনির্দিষ্ট ডাটা প্যাকেজ নিতে গিয়ে অনেকে প্রতারিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব অপারেটর নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয় বলে গ্রাহকদের অভিযোগ নাকচ করার সুযোগ রয়েছে সামান্যই। নানা বিড়ম্বনার কারণে অনেকে মোবাইল ফোনে একাধিক সিম ব্যবহার করতে বাধ্য হন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো অপারেটরই অভিযোগমুক্ত নয়। বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক ১৭ কোটির অধিক এবং প্রায় ১২ কোটি গ্রাহক মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বিপুলসংখ্যক গ্রাহক সত্ত্বেও মোবাইল অপারেটরগুলো যথাযথভাবে সেবার নিশ্চয়তা কেন দিতে পারছে না? দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সে অর্থে কম। তা সত্ত্বেও গ্রাহককে নিয়মিতই নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
আমরা দেখেছি, গত মাসে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, অপারেটররা গ্রাহকদের মানসম্মত ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ও কল ড্রপ বিটিআরসি নির্ধারিত মানদণ্ডের মধ্যেই আছে। অথচ এর ক'দিন পরই বিটিআরসির গণশুনানিতে অংশ নিয়ে গ্রাহকরা মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেওয়া গ্রাহকদের বেশিরভাগই অতিমাত্রায় কল ড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি এবং ফোরজি না পাওয়ার কথা জানান। আমরা মনে করি, গ্রাহকের কথা মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর শোনা জরুরি। তাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। মানসম্মত সেবা দেওয়ার জন্য তাদের বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তার সুফল গ্রাহকরা পুরোপুরি পাচ্ছেন না কেন?
সমকালের কাছে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবায় নানা ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর গ্রাহকসেবায় গুণগত মান নিশ্চিত করতে এবং ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে গ্রাহক অভিযোগ নিরসনে বিটিআরসি একটি কমিটি করেছে বলেও তিনি জানান। আমরা বিশ্বাস করি, বিটিআরসির কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মোবাইল ফোন আমাদের জীবনযাপন নানাভাবে সহজ করেছে।
যোগাযোগের উৎকর্ষ সাধনে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর অবদানও অস্বীকার করা যাবে না। দেশে-বিদেশে দূরে থাকা আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে কাছে এনেছে মোবাইল ফোন। কিন্তু এসব অপারেটর যথাযথ সেবা দিতে না পারলে গ্রাহক বিড়ম্বনায় পড়বেন- এটাই স্বাভাবিক। আমরা প্রত্যাশা করি, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো গুণগত সেবা প্রদানে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। গ্রাহকের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কারিগরি কোনো ত্রুটি সংস্কারের প্রয়োজন হলে গ্রাহককে আগে থেকেই জানিয়ে রাখবে। গ্রাহক অর্থের বিনিময়ে সেবা গ্রহণ করেন। তাই গুণগত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবাপ্রাপ্তি তার অধিকার। গ্রাহকের এ অধিকার নিশ্চিতে তদারকি প্র্রতিষ্ঠান বিটিআরসির আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার।
- বিষয় :
- মোবাইল ফোন
- গ্রাহকের ভোগান্তি