আফগানিস্তান
তালেবানি শাসনে নারীর ক্রীড়াচর্চা

ইকরামউজ্জমান
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২১ | ১২:০০
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ২০০১ সালে আফগানিস্তান দখল করে বড় স্বপ্ন দেখেছিল। বৃহৎ পরিকল্পনার আওতায় দেশ শাসন এবং নতুন চিন্তাভাবনায় শাসন কাঠামো গড়ে তোলার সেই চেষ্টা ফ্যাকাসে হতে বেশি সময় লাগেনি। এর পরও যুক্তরাষ্ট্র হাল ছাড়েনি। চেষ্টা করেছে তালেবানকে বাগে আনতে বিভিন্ন কৌশল, এমনকি বারবার সামরিক শক্তি ব্যবহার করে। শেষ পর্যন্ত সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আফগানিস্তানের বিরাট জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি অনিশ্চয়তা, শঙ্কা এবং মহাবিপদে ঠেলে দিয়ে আফগানিস্তান ছেড়েছে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের পর তালেবান পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে কট্টরপন্থিদের নিয়ে। এদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত থাকলেও এরা নিজস্ব ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তনে বিশ্বাসী নন। বরং এদের ভেতরে পোষণ করা রূপ এবার প্রকাশ পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষা, চাকরি, সংস্কৃতি, ক্রীড়াচর্চা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে বিরোধিতা ওত্র কঠোর মনোভাব। যারা ভেবেছিলেন, নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে তালেবানের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে; বিশ্ব দেখবে আগের তালেবান আর এখনকার তালেবান এক নয়- তাদের আশা এবং পর্যবেক্ষণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে তালেবান শক্ত অবস্থান এবং বিরোধিতার মধ্যেই আছে। তবে তাদের সুযোগ ছিল নারীদের মৌলিক এবং মানবিক অধিকারের ক্ষেত্রে উদারতা দেখানোর, যেটি বর্তমান বিশ্বে সৌদি আরব, ইরানসহ অন্যান্য দেশে পরিলক্ষিত। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন। আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা, শাস্তির ভয় এবং মৃত্যুজনিত নিরাপত্তাবোধের অভাবে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু (এর মধ্যে নারী ও পুরুষ খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াবিদ অন্তর্ভুক্ত) যে যেভাবে পেরেছেন দেশ ছেড়েছেন। আফগানিস্তানের জাতীয় যুবদলের ফুটবলার ১৯ বছরের জাকি আনওয়ারি মরিয়া হয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন উড়োজাহাজের পাখার নিচে লুকিয়ে থেকে। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে করুণভাবে। আফগানিস্তানের নারীরা ঘরোয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতেন ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, অ্যাথলেটিজম, ভলিবল, ভারোত্তোলন, জুডো, কারাতে, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলায়। তালেবান ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নারী ফুটবলার কেউ কেউ তাদের বুট, জার্সি, ট্র্যাকস্যুট ও খেলার ছবি পুড়িয়ে ফেলেছেন। আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একজন জুডোকা তার জুডোর পোশাক এবং বেল্ট টুকরো টুকরো করে কেটে মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন, যাতে তলেবান ঘরে ঢুকলে এগুলো দেখতে না পায়।
দেশটির নারী ক্রীড়াবিদরা ফিফা ও ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফপ্রোর কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান থেকে তাদের উদ্ধার করতে। এ আবেদনে সাড়া দিয়ে ফিফা ও ফিফপ্রো অস্ট্রেলিয়াকে অনুরোধ করে তাদের দেশের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে যাতে আফগান নারী ক্রীড়াবিদ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে নিয়ে আসা হয়। অস্ট্রেলিয়া প্রায় ৫০ জন নারী ক্রীড়াবিদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে নিয়ে এসেছে। এই নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ফুটবলার, অ্যাথলেট, জুডোকা, ভারোত্তোলক আছেন। আছেন অ্যাথলেট, যারা টোকিও ২০২০ অলিম্পিকে আফগানিস্তান কন্টিনজেন্টে ছিলেন। আফগানিস্তানের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলারদের একটি দল প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল। সে দলের সদস্যরা সেখান থেকে পর্তুগালে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানেন না তাদের ভবিষ্যৎ কী? তারা শুধু বুঝতে পারছেন- তারা তালেবান গড়ার দাবি থেকে দূরে। বড় সমস্যা হলো, নারী খেলোয়াড় ও ক্রীড়াবিদরা জানেন- দেশে তাদের শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা হবে। আফগান ক্রিকেট বোর্ডে পেরোলে ছিলেন ২৫ জন নারী ক্রিকেটার। এদের মধ্যে কয়েকজন পালিয়ে গেছেন দেশ ছেড়ে। যারা তালেবানের ভয়ে নিজেদের আড়ালে রেখেছেন, তারা জানেন না তাদের ভবিষ্যৎ কী? একবার বলা হয়েছিল, নারীরা ক্রিকেট খেলতে পারবেন কিছু নিয়মকানুন মেনে। এখন সব চুপচাপ। তালেবানের ঠিক নেই কোনো কিছু।
এদিকে আগামী নভেম্বর মাসে হেবোর্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার কথা আফগানিস্তানের। কিন্তু দেশটিতে তালেবান আবার ক্ষমতা দখলের পর এই টেস্ট ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্ম হয়েছে। হোবার্ট যে রাজ্যে সেই তাসমিনিয়ার সরকারপ্রধান পিটার গুড উইন বলেছেন, এ রাজ্যের ম্যাচটা আয়োজন করা উচিত কিনা, সেটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। সে দেশে মেয়েদের খেলার ভবিষ্যৎ কী, সে ব্যাপারে পরিস্কার কোনো ধারণা নেই আমাদের এখনও। তালেবান সরকার একেকবার একেক কথা বলছে। তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে মেয়েদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষিদ্ধ করতে চায় অনেক দেশই। অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট খেলতে চাচ্ছে না প্রতিবাদ হিসেবে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের নারী দল থাকতে হবে। আফগানিস্তানের তাহলে কী হবে? গুঞ্জন উঠেছিল, মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপ থেকে আফগানিস্তানকে বাদ দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত আইসিসির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি নির্ধারিত হবে টি২০ বিশ্বকাপের পর আইসিসি বোর্ড সভায়। এদিকে ফিফা, আইওসি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিল আফগানিস্তানে যে নারী খেলোয়াড়দের খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করেনি। তারা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকার সময় নারীদের খেলাধুলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আবার আবার ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। তারা কি নারীদের গত ২০ বছরের ক্রীড়াঙ্গনের এগিয়ে চলাকে এক পর্যায়ে সমর্থন দেবে, নাকি আবার আফগানিস্তানে নারীদের খেলাধুলা বন্ধ করে দেবে? সমস্যা হলো সময়- এই সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে প্রেক্ষাপট এবং দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টে গেছে। দেশে দেশে ক্রীড়াঙ্গনে বেড়েছে নারী-পুরুষ সমতার আন্দোলন। এ আন্দোলন ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। তালেবান যদি নারীদের ক্রীড়াঙ্গনের অধিকার কেড়ে নেয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন। পুরুষ দলকে বয়কট করা হবে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে- সেই রব উঠেছে নারীদের মৌলিক ও মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে। জাতিসংঘ এখনও সোজাসুজি নারীদের ক্রীড়াঙ্গনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রশ্নে কিছু বলেনি।
কলামিস্ট ও বিশ্নেষক
যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের পর তালেবান পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে কট্টরপন্থিদের নিয়ে। এদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত থাকলেও এরা নিজস্ব ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তনে বিশ্বাসী নন। বরং এদের ভেতরে পোষণ করা রূপ এবার প্রকাশ পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষা, চাকরি, সংস্কৃতি, ক্রীড়াচর্চা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে বিরোধিতা ওত্র কঠোর মনোভাব। যারা ভেবেছিলেন, নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে তালেবানের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে; বিশ্ব দেখবে আগের তালেবান আর এখনকার তালেবান এক নয়- তাদের আশা এবং পর্যবেক্ষণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে তালেবান শক্ত অবস্থান এবং বিরোধিতার মধ্যেই আছে। তবে তাদের সুযোগ ছিল নারীদের মৌলিক এবং মানবিক অধিকারের ক্ষেত্রে উদারতা দেখানোর, যেটি বর্তমান বিশ্বে সৌদি আরব, ইরানসহ অন্যান্য দেশে পরিলক্ষিত। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন। আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা, শাস্তির ভয় এবং মৃত্যুজনিত নিরাপত্তাবোধের অভাবে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু (এর মধ্যে নারী ও পুরুষ খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াবিদ অন্তর্ভুক্ত) যে যেভাবে পেরেছেন দেশ ছেড়েছেন। আফগানিস্তানের জাতীয় যুবদলের ফুটবলার ১৯ বছরের জাকি আনওয়ারি মরিয়া হয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন উড়োজাহাজের পাখার নিচে লুকিয়ে থেকে। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে করুণভাবে। আফগানিস্তানের নারীরা ঘরোয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতেন ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, অ্যাথলেটিজম, ভলিবল, ভারোত্তোলন, জুডো, কারাতে, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলায়। তালেবান ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নারী ফুটবলার কেউ কেউ তাদের বুট, জার্সি, ট্র্যাকস্যুট ও খেলার ছবি পুড়িয়ে ফেলেছেন। আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একজন জুডোকা তার জুডোর পোশাক এবং বেল্ট টুকরো টুকরো করে কেটে মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন, যাতে তলেবান ঘরে ঢুকলে এগুলো দেখতে না পায়।
দেশটির নারী ক্রীড়াবিদরা ফিফা ও ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফপ্রোর কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান থেকে তাদের উদ্ধার করতে। এ আবেদনে সাড়া দিয়ে ফিফা ও ফিফপ্রো অস্ট্রেলিয়াকে অনুরোধ করে তাদের দেশের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে যাতে আফগান নারী ক্রীড়াবিদ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে নিয়ে আসা হয়। অস্ট্রেলিয়া প্রায় ৫০ জন নারী ক্রীড়াবিদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে নিয়ে এসেছে। এই নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ফুটবলার, অ্যাথলেট, জুডোকা, ভারোত্তোলক আছেন। আছেন অ্যাথলেট, যারা টোকিও ২০২০ অলিম্পিকে আফগানিস্তান কন্টিনজেন্টে ছিলেন। আফগানিস্তানের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলারদের একটি দল প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল। সে দলের সদস্যরা সেখান থেকে পর্তুগালে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানেন না তাদের ভবিষ্যৎ কী? তারা শুধু বুঝতে পারছেন- তারা তালেবান গড়ার দাবি থেকে দূরে। বড় সমস্যা হলো, নারী খেলোয়াড় ও ক্রীড়াবিদরা জানেন- দেশে তাদের শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা হবে। আফগান ক্রিকেট বোর্ডে পেরোলে ছিলেন ২৫ জন নারী ক্রিকেটার। এদের মধ্যে কয়েকজন পালিয়ে গেছেন দেশ ছেড়ে। যারা তালেবানের ভয়ে নিজেদের আড়ালে রেখেছেন, তারা জানেন না তাদের ভবিষ্যৎ কী? একবার বলা হয়েছিল, নারীরা ক্রিকেট খেলতে পারবেন কিছু নিয়মকানুন মেনে। এখন সব চুপচাপ। তালেবানের ঠিক নেই কোনো কিছু।
এদিকে আগামী নভেম্বর মাসে হেবোর্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার কথা আফগানিস্তানের। কিন্তু দেশটিতে তালেবান আবার ক্ষমতা দখলের পর এই টেস্ট ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্ম হয়েছে। হোবার্ট যে রাজ্যে সেই তাসমিনিয়ার সরকারপ্রধান পিটার গুড উইন বলেছেন, এ রাজ্যের ম্যাচটা আয়োজন করা উচিত কিনা, সেটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। সে দেশে মেয়েদের খেলার ভবিষ্যৎ কী, সে ব্যাপারে পরিস্কার কোনো ধারণা নেই আমাদের এখনও। তালেবান সরকার একেকবার একেক কথা বলছে। তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে মেয়েদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষিদ্ধ করতে চায় অনেক দেশই। অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট খেলতে চাচ্ছে না প্রতিবাদ হিসেবে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের নারী দল থাকতে হবে। আফগানিস্তানের তাহলে কী হবে? গুঞ্জন উঠেছিল, মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপ থেকে আফগানিস্তানকে বাদ দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত আইসিসির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি নির্ধারিত হবে টি২০ বিশ্বকাপের পর আইসিসি বোর্ড সভায়। এদিকে ফিফা, আইওসি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিল আফগানিস্তানে যে নারী খেলোয়াড়দের খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করেনি। তারা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকার সময় নারীদের খেলাধুলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আবার আবার ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। তারা কি নারীদের গত ২০ বছরের ক্রীড়াঙ্গনের এগিয়ে চলাকে এক পর্যায়ে সমর্থন দেবে, নাকি আবার আফগানিস্তানে নারীদের খেলাধুলা বন্ধ করে দেবে? সমস্যা হলো সময়- এই সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে প্রেক্ষাপট এবং দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টে গেছে। দেশে দেশে ক্রীড়াঙ্গনে বেড়েছে নারী-পুরুষ সমতার আন্দোলন। এ আন্দোলন ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। তালেবান যদি নারীদের ক্রীড়াঙ্গনের অধিকার কেড়ে নেয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন। পুরুষ দলকে বয়কট করা হবে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে- সেই রব উঠেছে নারীদের মৌলিক ও মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে। জাতিসংঘ এখনও সোজাসুজি নারীদের ক্রীড়াঙ্গনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রশ্নে কিছু বলেনি।
কলামিস্ট ও বিশ্নেষক
- বিষয় :
- আফগানিস্তান
- ইকরামউজ্জমান