ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ইসলাম ও সমাজ

জ্ঞান ও গ্রন্থ

জ্ঞান ও গ্রন্থ

মো. শাহজাহান কবীর

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২১ | ১২:০০

মানুষকে বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী করে গড়ে তোলার জন্য বইমেলার রয়েছে এক বিশেষ অবদান। সব বয়সী মানুষের জন্য এখানে থাকে উপযুক্ত বইয়ের পর্যাপ্ত সংগ্রহ। শিশুরা পরিচিত হতে পারে নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে। বয়সীরাও খুঁজে পান তাদের মনের খোরাকসমৃদ্ধ বই।
ইসলামী বইমেলায় দেশি-বিদেশি গবেষকদের ইসলামের ওপর লেখা বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনের তাফসির গ্রন্থ, সিহাহ সিত্তাহ, অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ, ফিকাহ গ্রন্থ, বিভিন্ন মাসলা মাসায়েল সংক্রান্ত গ্রন্থ, সিরাত গ্রন্থ, সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার ইসলামী সমাধান, উপদেশমূলক, শিক্ষামূলক বই বিদগ্ধ পাঠক ও জ্ঞানপিপাসুরা তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী সংগ্রহ করতে পারেন।
সমগ্র সৃষ্টির ওপর মানুষের প্রাধান্য বিস্তারের কারণ হচ্ছে ইলম বা জ্ঞান। এ জ্ঞানের কারণেই আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের ওপর হজরত আদম আলাইহিস সালামকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে সিজদা করতে বলেছিলেন; যা ছিল আল্লাহতায়ালার কুদরত। স্বীকৃত কথা- যার কাছে ইলম বা জ্ঞান থাকবে, তার শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্য সর্বদা সুপ্রতিষ্ঠিত। মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিস্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে।
ইসলামে ইমান আনার পর জ্ঞানার্জনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সব মুসলিম নর-নারীর ওপর জ্ঞানার্জন ফরজ করা হয়েছে।
ইলম বা জ্ঞান দ্বারা ভালো-মন্দ নির্ণয় করা যায়। এর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সুতরাং আল্লাহ যার মঙ্গল চান এবং যার দ্বারা হকেস্ফর বাস্তবায়ন সম্ভব, তাকেই মহামূল্যবান জ্ঞান দান করে থাকেন। যেহেতু জ্ঞানের মালিক আল্লাহ, তাই এই জ্ঞান আল্লাহ যাকে চান তাকে দান করেন।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, 'তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকরাই শিক্ষা গ্রহণ করে' (সুরা বাকারা, আয়াত-২৬৯)। এ সম্পর্কে রাসুলে পাক (সা.) বলেন, 'আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন'।
ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নেয়ামত, যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?' (সুরা জুমার, আয়াত-৯।
অন্যত্র আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, 'বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্ফ্মান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?' (সুরা রা'দ, আয়াত-১৬।
রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গলের ইচ্ছা করেন তাকেই সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করেন। (সহিহ মুসলিম) জ্ঞান মানুষকে যেমন বিশ্বাস ও কর্মে পূর্ণতা দেয়, তেমনি সমাজের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টির যোগ্যতা প্রদান করে।
অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানার্জনের নেকি ও মর্যাদা অনেক বেশি। সে জন্য রাসুলে পাক (সা.) বলেন, 'ইবাদতের ফজিলতের চেয়ে জ্ঞানার্জনের ফজিলত অনেক বেশি।'
রাসুলে পাক (সা.) আরও এরশাদ করেন- যদি কেউ জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথে বের হয়, তবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য আসমান এবং জমিনের সবাই ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে থাকা মাছও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।'
শিক্ষিত মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ ও বিশ্বাস সঞ্জীবিত করতে না পারলে কখনোই দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও হানাহানিমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। তাই জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। একটি সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই।
সহকারী অধ্যাপক; ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আরও পড়ুন

×