বিসিএসের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। একটি অসাধারণ প্রস্তুতি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে অভীষ্ট লক্ষ্যে। কেমন এবং কীভাবে শুরু হওয়া উচিত এই পরীক্ষার প্রস্তুতির কৌশল জানাচ্ছেন ডা. ইরফান হাফিজ
বিসিএস হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা। তাই এখানে সফল হতে হলে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি দরকার, তা হচ্ছে ধৈর্য। ধৈর্যের সঙ্গে নিয়মিত প্রস্তুতির জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে শিখুন। পরিশ্রম করলে আপনি সফল হবেন- এই বিশ্বাস রাখতে চেষ্টা করুন। প্রথমেই বিসিএস প্রিলিমিনারির সিলেবাসটি মনোযোগ সহকারে পড়ূন। সিলেবাস ধরে বিগত প্রশ্নগুলো পড়ে আপনি আপনার স্ট্রং জোন আর উইক জোন বের করুন। সিলেবাসের টপিক ধরে ধরে বিগত বছরের বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নগুলো অ্যানালাইসিস করুন এবং আপনি যে টপিকগুলো পড়েছেন তার থেকে কী ধরনের প্রশ্ন পূর্বের বিসিএসগুলোতে এসেছে, তা খেয়াল করুন।
বিসিএস সিলেবাসে এমন অনেক টপিক আছে, যা আপনি আগে থেকেই জানেন বা ধারণা আছে। আবার কিছু কিছু বিষয় আপনার জন্য একেবারেই নতুন। এই নতুন বিষয়গুলো থেকে নিজের মতো করে কিছু বিষয় নির্বাচন করে পড়া শুরু করে দিন। একটি অসাধারণ অলরাউন্ড প্রস্তুতি আপনাকে পৌঁছে দেবে আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে। আপনি হয়ে যাবেন বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য। আর সে জন্য আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে রুটিন করে। মনে রাখতে হবে পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। বিসিএসের সিলেবাস বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতে পাস করা খুব বেশি কঠিন না। আপনাকে জানতে হবে কীভাবে পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন। বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ মিলে বাংলায় সর্বমোট মার্কস হলো ৩৫। যাদের প্রচুর গল্প, উপন্যাস পড়ার অভ্যাস আছে, তারা এমনিতেই বেশ কিছু তথ্য মাথায় রাখতে পারবেন। নির্বাচিত কয়েকজন লেখকের কিছু বই গুরুত্ব সহকারে পড়ে ফেলুন। এতে আপনার অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে। লেখকদের সম্পর্কে সৌমিত্র শেখরের 'সাহিত্য জিজ্ঞাসা' থেকে পড়তে পারেন। বাংলা সাহিত্যের জন্য ক্লাস ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বোর্ডের বইয়ের সব কবি পরিচিতি আর গল্প/কবিতার উৎস, পটভূমি কোন কবিতা কোন ছন্দে রচিত এসব কয়েকবার করে রিভিশন করবেন। তবে মূল গল্পটা মার্কিং করে পড়লে ভালো হয়। কবিতার ছন্দ থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। বইয়ে অনেক কবিতা আছে আর সবগুলো কবিতার ছন্দ মনেও রাখা যায় না- সেটি মাথায় রাখতে হবে। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগে আছে শুধু চর্যাপদ। এখান থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রায় প্রতি বিসিএসে এখান থেকে প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া মধ্যযুগের টপিক সংখ্যা সীমিত। সব মিলিয়ে আপনি যদি প্রাচীন ও মধ্য যুগ অংশ খুব ভালোমতো পড়েন, তাহলে সেখান থেকে প্রশ্ন কমন পেয়ে যেতে পারেন। বাংলা ব্যাকরণ অংশে সাধারণত যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়, সেগুলো হলো- ধ্বনি, বর্ণ, উচ্চারণের স্থান, শব্দ ও বাক্যের প্রকারভেদ, প্রকৃতি-প্রত্যয়; সন্ধি, উপসর্গ, সমাস, ণত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধান, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, প্রত্যয়, ধ্বনি পরিবর্তন ইত্যাদি ব্যাকরণ শুদ্ধিকরণ। সাধারণত বানান, বাক্যের গঠন, লিঙ্গ, সন্ধি ও সমাসের যথাযথ প্রয়োগের ওপর প্রশ্ন করা হয়; ব্যাকরণের নিপাতনে সিদ্ধ নিয়ম। যেমন- নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি ও সমাসের প্রয়োগ, যুক্তবর্ণের গঠন। এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় প্রস্তুতির বিষয়ে রাখতে হবে যেমন- বাংলা সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যুর তারিখ, সাল, স্থান, উল্লেখযোগ্য রচনা, ছদ্মনাম/উপাধি, রচনাবলি, পুরস্কারপ্রাপ্তি, সম্পাদিত পত্রপত্রিকার নাম ও ধরন, পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থ ইত্যাদি; সাহিত্যিকদের বিখ্যাত উক্তি; মুক্তিযুদ্ধের ওপর লিখিত গ্রন্থের নাম।
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রশ্ন অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। ইংরেজিতে ভালো করার বিকল্প নেই। সিলেবাস সামনে রেখে ইংরেজি প্রস্তুতির ছক ঠিক করুন। এরপর বিগত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বিশ্নেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো শনাক্ত করুন। ইংরেজির কিছু টপিক বিসিএসে প্রতিবারই আসে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় গ্রামার রুল শেখার সময় রুলের অন্তর্গত বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন অনুশীলন করা। এতে সহজে বোঝা যাবে এবং প্রস্তুতিও সহজ হয়ে যাবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু টপিক আছে, যেমন- Identification of Clause, Conditional Sentence, Voice, Narration, Degree of Comparisons, Embedded Question -এগুলো থেকে পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এসে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, কিছু টপিক থেকে নিয়মিত আবার কিছু টপিক থেকে খুব বেশি প্রশ্ন আসে।
(বাকি অংশ আগামী সংখ্যায়)