- শিক্ষা
- দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ‘ভিআইপি’ শ্রমিক
দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ‘ভিআইপি’ শ্রমিক

ফাইল ছবি
জামালপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি প্লাস) প্রকল্পের শ্রমিকের মজুরির পৌনে দুই কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কাজে ফাঁকি ও অনুপস্থিতির অভিযোগে সাত উপজেলার বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের মজুরি বাদ দিয়ে বিল করা হয়েছে। এ প্রকল্পের তালিকায় ভুয়া এবং ভিআইপি শ্রমিক অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় জামালপুরে ৪৭৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয় ২০ হাজার ৬৮০ জন। এর মধ্যে ইসলামপুরে দুই হাজার ৮১৪, মাদারগঞ্জে দুই হাজার ৮৭৩, বকশীগঞ্জে দুই হাজার ১৮৪, সরিষাবাড়ীতে দুই হাজার ২৯৭, মেলান্দহে দুই হাজার ৮৮৪, দেওয়ানগঞ্জে দুই হাজার ৮৫৩ ও জামালপুর সদরে চার হাজার ৭৭৫ জন। প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ১১০ কর্ম দিবসে শ্রমিক মজুরি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯০ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সপ্তাহের শনি থেকে বুধবার পাঁচ দিন সাত ঘণ্টা করে নির্ধারিত প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত থেকে কাজ করার কথা শ্রমিকদের। কাজের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ নতুন মাটির রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, কবরস্থান, হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাটি ভরাট এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। প্রকল্পের সময়সীমা চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ৭ জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, নীতিমালা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে ১১০ দিন কাজ করার কথা। তবে দেরিতে কাজ শুরু করায় এ জেলায় ৮৪ দিনের বেশি কাজ হবে না। এরই মধ্যে কাজের প্রথম ধাপের ৩৩ থেকে ৩৮ দিনের শ্রমিক মজুরি দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিক অনুপস্থিতির অভিযোগে জামালপুর সদরে ৭০ লাখ ৭৮ হাজার, দেওয়ানগঞ্জে ১৯ লাখ ২৬ হাজার, মাদারগঞ্জ ৩ লাখ ৩৯ হাজার, মেলান্দহে ৪২ লাখ ৪৬ হাজার, সরিষাবাড়ীতে ২০ লাখ, বকশীগঞ্জে ১৮ লাখ ও ইসলামপুরে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ১৫ জন শ্রমিকের অভিযোগ– ইউপি সদস্য সোহেল মিয়া কৌশলে তাদের মোবাইলের সিম ও জব কার্ড নিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না তাঁরা।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, এ প্রকল্পের তালিকায় রয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধির পরিবারের সদস্যরা। এসব ভিআইপি শ্রমিককে প্রকল্প এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে কাজ ও মজুরিবঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত শ্রমিকরা। তাঁর ভাষ্য, মন্দাভাব দূরীকরণ ও দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা ফেরত যাওয়া দুঃখজনক। ভিআইপি শ্রমিক বাদ দিয়ে প্রকৃত শ্রমিক অন্তর্ভুক্ত হলে গরিব মানুষের কর্মসংস্থান হতো।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলামের দাবি, শ্রমিকরা কাজে না আসায় প্রকল্পের কাজ হচ্ছে না। সরকারের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হচ্ছে।
ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু বলেন, ‘আমরা শতভাগ কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার উপজেলায় কাজও হয়েছে সন্তোষজনক। তবে কাজ তদারকিতে গিয়ে যেসব শ্রমিককে মাঠে পাওয়া যায়নি তাদের বিল কেটে দেওয়া হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরানের সঙ্গে। তিনি প্রকল্পের উপজেলা কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, শ্রমিকের তালিকা আসে ইউপি চেয়ারম্যানদের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি থেকে। আর শ্রমিক হাজিরা তদারকি করেন সুশীলন নামের এক এনজিও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা। তাঁর দাবি, ভিআইপি শ্রমিক বলতে কিছু নেই। যাঁরা মাঠে কাজ করবেন, তাঁরাই মজুরি পাবেন।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান রুমান জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে নির্দেশনা এসেছে শ্রমিকদের অপেক্ষমাণ তালিকা করার। অনুপস্থিত শ্রমিকদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সেখানে শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী শতভাগ শ্রমিক কাজে উপস্থিত থাকার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। ভিআইপি ও প্রক্সি শ্রমিকের অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের নির্দেশনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকল্প পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামানের দাবি, কে শ্রমিক হবেন প্রকল্পের নীতিমালায় তা স্পষ্টভাবে বলা আছে। এরপরও শ্রমিক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন