বিসিএস ক্যাডার হওয়া অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো।  পরীক্ষার  প্রস্তুতি যদি পরিকল্পনা মাফিক হয়ে থাকে তাহলে হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব। বিসিএস হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা। তাই এখানে সফল হতে হলে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি দরকার, তা হচ্ছে ধৈর্য। বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতির প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি। কারণ, এখানে এসে আপনি জীবনে প্রথম অনেক বিষয়ের খুঁটিনাটি জানতে শুরু করেন। যেমন বাণিজ্য ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সংবিধান সম্পর্কে জানতে শুরু করেন। তাই এমন বিষয় আয়ত্ত করতে বেশি পরিশ্রম করতে ধৈর্যের সঙ্গে নিয়মিত প্রস্তুতির জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে শিখুন। ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ মে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়–

l বিসিএস প্রিলিমিনারির ১০টি সাবজেক্টই এক-দু’বার করে রিভিশন দিতে হবে। প্রিলির আগে আপনার হাতে আর  মাত্র কয়েক দিন সময় আছে এবং কোন সাবজেক্ট কয়দিন পড়বেন সেটি ঠিক করে সেই রুটিনমাফিক পড়তে হবে।

l সব সাবজেক্ট রিভিশন শেষ হলে আপনি ১০তম থেকে ৪৪তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্নগুলো দ্রুত পড়ে ফেলুন। কেননা বিগত বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন থেকেই হুবহু বেশ কয়েকটি প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। এরপর সুযোগ পেলে জব সলিউশন থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার সাম্প্রতিক কয়েক বছরের প্রশ্ন পড়বেন। কেননা জব সলিউশন থেকেই অধিকাংশ প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। আগে পড়বেন ২০২৩ সালের প্রশ্ন, এরপর ২০২২ সালের, এভাবে ২০২১, ২০২০, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭ সালের প্রশ্ন। যাঁদের আগে জব সলিউশন পড়া আছে, তাঁদের পড়তে বেশি সময় লাগবে না এবং তিনি সময় পেলে আরও আগের প্রশ্নগুলোও পড়বেন; কিন্তু আগে পড়া না থাকলে আপনি এত অল্প সময়ে শেষ করতে পারবেন না। তাই ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে যতটুকু সম্ভব পড়বেন।

l  যে টপিকগুলো আগে পড়া আছে, সেগুলোই এখন পড়বেন। এখন নতুন করে বেশি কিছু পড়তে গিয়ে আপনি কোনো সাবজেক্ট রিভিশনই দিতে পারলেন না, এমনটি যেন না হয়। তবে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে আপডেট থাকবেন।

l  প্রতিটি সাবজেক্টের যেসব টপিক থেকে প্রতি বছর প্রশ্ন হয়, এমন সব টপিক বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। অন্যগুলো একবার করে রিডিং পড়বেন।

l  কয়েকটি মডেল টেস্ট দিয়ে আপনি কত নম্বর পাচ্ছেন এবং সময়মতো দুই ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে পারছেন কিনা– সেটি দেখবেন। মডেল টেস্ট কোনো কোচিংয়ে বা বাসায় অনলাইনে অথবা টেস্ট বই থেকে প্র্যাকটিস করতে পারেন।

l  বোর্ডের বই ও মৌলিক কোনো বই থেকে দাগানো বা এমসিকিউ হতে পারে, এমন অংশ ব্যতীত আর কিছু পড়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন সব বিষয়ে অল্প অল্প করে হলেও পড়তে হবে। যদি কোনো বিষয়ে বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন, তবে দিন। শেষ সময়ে নতুন কোনো কঠিন টপিকে হাত না দেওয়াই উত্তম।

l  পরীক্ষার কয়েক দিন আগেই আপনার অ্যাডমিট কার্ড, কলমসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুছিয়ে রাখবেন।

গুরুত্ব দিন নিচের কিছু বিষয়

l  পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে যেতে হবে। নয়তো রাস্তায় একটু জ্যাম দেখলেই আপনার টেনশন শুরু হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ওই দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় বেশি যানবাহন দেখা যাবে। আবার আপনি সময়মতো যানবাহন না-ও পেতে পারেন।

l  পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার হলে যা যা নেওয়ার অনুমতি আছে শুধু সেগুলোই নিয়ে যাবেন। অন্যথায় যা নিয়ে গেছেন, সেগুলো কোথায় রাখবেন এটি নিয়ে আপনার টেনশন হতে পারে।

l প্রশ্ন হাতে পেলে ওএমআর শিটে আপনার যে সেট আছে, আপনি প্রশ্নও সেই সেটের পেয়েছেন কিনা এবং ২০০টি প্রশ্ন আছে কিনা দেখে নেবেন।

l এরপর প্রশ্নে অপশন কীভাবে আছে, সেটি চেক করে নেবেন। সাধারণত প্রথমে ‘ক’ তার ডানে ‘খ’ এভাবে থাকে। কিন্তু ৩৫তম বিসিএসে অপশন ছিল প্রথমে ‘ক’ তার ডানে ‘গ’। আর ‘ক’-এর নিচে ছিল ‘খ’। এরপর ঝটপট এক-দুই মিনিটে একনজর প্রশ্ন দেখে বোঝার চেষ্টা করতে পারেন, প্রশ্ন সহজ না কঠিন হয়েছে। আবার না-ও পড়তে পারেন।

l  যে সাবজেক্টগুলো আপনার ভালো লাগে বা সহজ লাগে সেগুলো আগে উত্তর করবেন। কারও কাছে সাধারণ জ্ঞান ভালো লাগে আবার কারও বাংলা ভালো লাগতে পারে। যে প্রশ্ন পারছেন না, সেটির পেছনে সময় নষ্ট করবেন না। যেগুলো পারছেন না, হালকা করে দাগ দিয়ে রাখা যেতে পারে। সব দাগানোর পরে সময় পেলে চেষ্টা করবেন।

l  ওএমআর শিট পূরণ করার জন্য আগে ব্যবহার করা দু-তিনটি কলম নিয়ে যাবেন। নতুন কলম দিয়ে ওএমআর শিট পূরণ করতে বেশি সময় লাগে।

l  টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক না হওয়ার জন্য অনেকে প্রশ্ন কমন থাকার পরও সময়ের অভাবে দাগিয়ে আসতে পারে না। ৩০ মিনিট হাতে থাকতেই যেন দাগানো শেষ হয় সেদিকে নজর রাখবেন। ৩০ মিনিট হাতে রাখার কারণ, যে প্রশ্নগুলো আপনি প্রথমবার পারেননি, সেগুলো চেষ্টা করা।

l মনে রাখতে হবে, প্রশ্ন কঠিন হলে সবার জন্যই কঠিন। তাই এ বছর তুলনামূলক কম নম্বর পেলেও প্রিলিতে টিকবেন। আর প্রশ্ন সহজ হলে বুঝতে হবে, সবার জন্যই সহজ হয়েছে। সবসময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। সকলের জন্য শুভ কামনা রইল ।

[ ৩৬তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডার ]