- ঈদ আনন্দ
- 'কবিদের কোনো গুরু নেই, আছে নিজেদেরই শ্রীচরণ'
প্রচ্ছদ
'কবিদের কোনো গুরু নেই, আছে নিজেদেরই শ্রীচরণ'

কবিতা রচনায় কুশলতা অর্জন কোনো গুরুমুখী বিদ্যার ফল নয় যে গুরুগৃহে বা একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করলেই তা সম্ভব হয়ে উঠবে। যদি হতো তবে বিশ্বের যে কোনো দেশেই তাদের ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকগণ হতেন সে দেশের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা; আমাদের দেশেও বাংলা বিভাগে অধ্যয়ন শেষে সবাই আত্মপ্রকাশ করতেন বড় মাপের কবি-লেখক হিসেবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে আমাদের প্রধানতম কবিপুরুষগণ :জীবনানন্দ দাশ-সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-বুদ্ধদেব বসু, আহসান হাবীব-ফররুখ আহমদ-শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ-শহীদ কাদরী কারও বাংলা সাহিত্যে একাডেমিক পড়াশোনা নেই।
বিষয়টি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও দৃশ্যমান। সাহিত্যবিষয়ক প্রজ্ঞা তথা জ্ঞানের পরিধি আর অনেক ক্ষেত্রেই কবিতা রচনায় এর প্রয়োগ-সংক্রান্ত ব্যর্থতা নিয়ে লেখা একটি ইংরেজি বইতে (নাম মনে নেই) খুব মজার একটি কৌতুক পড়েছিলাম, যার উল্লেখ এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করছি :
একজন গলফ খেলোয়াড় তার খেলা বিষয়ে এতই জ্ঞানী যে, গলফবিষয়ক কোনো আলোচনা সভায় তিনি হন প্রধান অতিথি কিংবা সভাপতি; গলফবিষয়ক কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যও তার ডাক পড়ে কিন্তু 'ইন প্র্যাকটিস, হোয়েন হি হিটস দ্য বল, ইট সিমস অ্যাজ দো হি ইজ বিটিং অ্যা স্নেইক'- মানে 'বাস্তবে গলফ খেলতে গিয়ে তিনি যখন স্টিক দিয়ে বলে আঘাত করেন, তখন মনে হয় একটা সাপকে পেটাচ্ছেন।' গুরুর কাছে বিদ্যা শিখে কবিতা লেখার কৌশল আয়ত্ত করা যায় না- এ সত্যটি প্রকাশ করতে আমারও একটি পদ্যের একাংশে লিখেছিলাম:
পালের বাতাস, বৈঠা জানে না গলুইয়ের মতিগতি;
ভেড়া ও কুকুর মেনে চলে তার মনিবের ব্যাকরণ-
প্রকৃত নবীন মানে না কখনও প্রবীণের ইমামতি,
কবিদের কোনো গুরু নেই, আছে নিজেদেরই শ্রীচরণ
[রাজাহীন রাজধানী, আটকে আছি মধ্যনীলিমায়]
কিন্তু না, আধুনিক কালের কবিতায় সৃজনের সঙ্গে মননের যে সমন্বয় ঘটাতে হয় এবং নিজস্ব একটি কণ্ঠস্বর অর্জন করতে হয়, তাতে অগ্রজদের রচনার ব্যাপক পঠন-পাঠন হয়ে ওঠে অবশ্যম্ভাবী এবং এ-অর্থে তারাও 'পরোক্ষ গুরু'র ভূমিকাই পালন করেন। আমার নিজ পরিবারে সাহিত্য বিষয়ে অতটা আগ্রহী কেউ ছিলেন না যে, আমাকে হাত ধরে কবিতার জগতে নিয়ে আসবেন; বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে একাডেমিক অঙ্গনেও এমন কেউ ছিলেন না যিনি এ বিষয়ে আমাকে সহায়তা করবেন। নিজের ভেতরেই সৃষ্ট এক তাগিদ আমার বাল্যকালেই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে কবিতার দিকে :প্রথমত, রবীন্দ্র-নজরুল-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত-জসীম উদ্দীনের কবিতা পড়তে। রবীন্দ্রনাথের সাবলীল প্রকাশভঙ্গির কারণে দুয়েকবার পড়লেই তার কোনো কবিতা মুখস্থ হয়ে যেত অবিশ্বাস্যভাবে; এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার বহু কবিতা আমি মুখস্থ আওড়াতে পারি।
মফস্বল (কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ) থেকে ১৯৬৬-৬৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা কলেজে পড়তে আসা আমি শিক্ষক হিসেবে যে দু'জন কবি-সাহিত্যিককে পেয়েছিলাম, তারা হলেন শওকত ওসমান ও আশরাফ সিদ্দিকী। লেখক হিসেবে পরিচিত ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে আরও ছিলেন জনাব নজীবুর রহমান, নয়ন রহমান এবং রওশন আরা ম্যাডাম; ক্লাসের বাইরে তাদের সঙ্গেও তেমন কোনো সখ্য গড়ে ওঠেনি যে, আমার কবিতাচর্চায় সহায়তার হাত বাড়াবেন। তবে শওকত ওসমান ও আশরাফ সিদ্দিকীর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত কলেজ ম্যাগাজিনে আমার একটি কবিতা মুদ্রিত হলে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম দারুণভাবে। আমাদের প্রিন্সিপাল জালাল উদ্দিন আহমেদ, যিনি আমাদের ক্লাসে ইংরেজি পড়াতেন, তার কাছে কবিতার অনেক কিছু শিখেছি; যা কাজে লেগেছে পরবর্তীকালেও। সময়টা ছিল ঢাকা কলেজের জন্য স্বর্ণযুগ; মেধাবী ছাত্রদের প্রথম পছন্দের কলেজ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যেত মেধাতালিকার প্রথম ২০ জনের প্রায় সবাই ঢাকা কলেজের; সে তালিকায় কদাচিৎ ঢুকে পড়ত নটর ডেম কলেজ বা ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের দুয়েকজন। এর পেছনে কাজ করেছে ছাত্রভর্তির কঠোরতার সঙ্গে জালাল স্যারের দক্ষ প্রশাসন এবং শিক্ষকতা। আমাদের সময়ে ঢাকা কলেজে শিক্ষকদের সংখ্যা ছিল প্রয়োজনের চেয়েও বেশি। ফলে একটি কি দুটি কবিতা বা গল্প পড়ানোর দায়িত্ব পড়ত একেকজন শিক্ষকের ওপর। প্রিন্সিপাল জালাল স্যার আমাদের পড়িয়েছেন আলফ্রেড টেনিসনের 'ইউলিসেস' নামের একটি কবিতা। এই একটিমাত্র কবিতা পড়ানোর সূত্রে তিনি আমাদের পরিচিত করিয়েছিলেন হোমারের সমগ্র ইলিয়াড-ওডিসির সঙ্গে; বুঝিয়েছেন মহাকাব্য ও আধুনিক গীতিকাব্য- এ দুই ধারার কবিতার মধ্যে পার্থক্য কী, গ্রিক ভাষায় রচিত ইলিয়াড-ওডিসি ইংরেজি ভাষায় কতটা প্রভাব রেখেছে; বুঝিয়েছেন এর সঙ্গে বাল্মিকীর 'রামায়ণ' এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাধ বধ' কাব্যের মিল ও অমিলের কথা; ট্রয় ও লঙ্কা, হেলেন ও সীতার মিল ও অমিলের কথা; রবীন্দ্র-নজরুলের যুগ পেরিয়ে বাংলা কবিতা কী করে বিশ শতকীয় তিরিশের দশকে এসে ইংরেজি ভাষার কবিদের মাধ্যমে ফরাসি কবি বোদলেয়ারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নবতর আধুনিকতাকে আলিঙ্গন করল তার কথা। অথচ তার পড়ানোর বিষয় ছিল কেবল আলফ্রেড টেনিসনের 'ইউলিসেস' কবিতাটি। হয়তো একেই বলা যায় 'আদর্শ শিক্ষক', যিনি পাঠ্যসূচির বাইরে গিয়েও শিক্ষার্থীর পাঠতৃষ্ণাকে উস্কে দেন। জালাল স্যারের শিক্ষকতায় বুঝলাম :ভালো কবিতা লিখতে হলে এ বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে। মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি :'পড়াশুনা আমি করিতে পারি নাই কারণ পড়াশুনা করিতে যতটা কম পড়াশুনা করিতে হয় ততটা কম পড়াশুনা আমি করিতে পারি নাই!"
সাহিত্য বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় পাঠ্যসূূচির জন্য প্রয়োজনীয় 'কম পড়াশোনা' নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম দু'বছর, কারণ ভালো রেজাল্ট ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো কোনো বিষয়ে ভর্তি হওয়া যাবে না। তবুও আধুনিক কবিতা বিষয়ে বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধগুলো পড়ে এই উপলব্ধি জাগ্রত হলো যে, আধুনিক কবিতা কোনো উন্নাসিকতার ফসল নয় [আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতো অনেকেই যা ভাবতেন ও বলতেন]; ছন্দসহ কবিতার চিরন্তন উপাদানের সবকিছুই এতে রয়েছে, বদলে গেছে কেবল ভাষা ব্যবহার- কেতাবি শব্দের বদলে আটপৌরে মৌখিক শব্দের ব্যবহার। ফরাসিরা একে বললেন 'ভার্স লিব্র্' আর ইংরেজ কবিরা বললেন 'ল্যাঙ্গুয়েজ অব এভ্রি ডে'। বুদ্ধদেব বসুকে ড. হুমায়ুন আজাদ তার একটি বই উৎসর্গ করতে গিয়ে তাকে বলেছেন 'বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক'। কথাটি সর্বাংশে সত্য। অন্য সবার মতো তিনি আমারও পরোক্ষ শিক্ষক। তিরিশি আধুনিকতার আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোহিতের ভূমিকায়। সেই সূত্রে তার নিজের গুরু বোদলেয়ার,র্ যাঁবো, মালার্মে, টিএস এলিয়ট, ডব্লিউ বি ইয়েটস, এজরা পাউন্ড প্রমুখ পাশ্চাত্যের কবি-লেখকও আমাদের গুরু, অন্তত আমার গুরু।
আমার কলেজজীবনে একটি বিভ্রান্তি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। প্রভাবশালী তরুণ অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দের প্ররোচনায় নবীনদের প্রায় সবাই গদ্যরীতিতে কবিতা লিখতেন, কারণ তার প্রথম বইয়ের সব কবিতাই গদ্যরীতিতে লেখা। কিন্তু বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধাবলি পড়ে জানতে পারি, আধুনিক কবিতায়ও ছন্দ এক অপরিহার্য শিল্প-উপাদান। তিরিশি আধুনিক কবিরা কেবল ছিটেফোঁটা গদ্যকবিতা লিখেছেন বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত একটিও গদ্যকবিতা লিখেননি। আমারও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে গেল যখন দেখলাম আবদুল মান্নান সৈয়দ দ্রুতই ছন্দে নিবিষ্ট হয়েছেন। বুঝলাম :প্রবেশলগ্নে তার গদ্যরীতির চর্চা ছিল অজ্ঞতার ফসল, কারণ প্রথম গ্রন্থের পর তিনি আর কেবল গদ্যকবিতা লিখেননি।
ছন্দজ্ঞানকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য পড়তে হলো ছন্দগুরু প্রবোধচন্দ্র সেনের বইগুলো। পড়ে আনন্দ পেলাম এই দেখে যে, ছন্দ আমার অস্থিমজ্জায় আগেই আসন গেড়ে বসেছিল। প্রবোধচন্দ্র সেনের বই পড়ে কেবল ছন্দের শাস্ত্রীয় নামগুলো শিখলাম। দেখলাম :ইতোমধ্যে যা লিখেছি, তাতে ছন্দের কোনো পতন নেই, অতিরেক নেই; সব ধরনের ছন্দের কবিতাই লিখে বসে আছি। জানতাম না কেবল ছন্দের শাস্ত্রীয় নামগুলো। বুঝলাম :রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সত্যেন্দ্রনাথ-জসীম উদ্দীন-জীবনানন্দ-সুধীন্দ্রনাথ-বুদ্ধদেব বসু-শামসুর রাহমান-আল মাহমুদের কবিতা পাঠের প্রক্রিয়ায় আমার নিজের কানই কখন ছন্দ বিষয়ে আমার শিক্ষাগুরুর কাজটি সেরে ফেলেছে!
প্রতিষ্ঠিত কবিদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বৃদ্ধি পায় ১৯৬৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের টিকিটে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হলে বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশের জন্য অগ্রজদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, লেখা সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের জন্য সেই যোগাযোগের মাত্রা বেড়ে যায়; প্রায় নিয়মিত যেতে শুরু করি মধুর ক্যান্টিনে কবিদের বৈকালিক/ সান্ধ্য আড্ডায়। নিয়মিত আসতেন নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, গোলাম সাবদার সিদ্দিকী, ফিউরি খোন্দকার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ; কখনও-সখনও তাদের চেয়েও নামজাদা অগ্রজদের কেউ কেউ। আলাপে-প্রলাপে মুখরিত মধুর ক্যান্টিন তখন ছিল কবিতা বিষয়ে অনেক শিক্ষার এবং একাধারে বহু বিভ্রান্তির আঁতুড়ঘর।
রসায়ন বিভাগে লেখক-বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে, যিনি ছিলেন আমার এক বছরের সিনিয়র। আমাদের শিক্ষক ড. আলী নওয়াব ছিলেন অত্যন্ত সাহিত্যামোদী। প্রায়ই অবসর পেলে হুমায়ূন ভাই ও আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আড্ডা মারতেন। মাঝেমধ্যে শুনতে চাইতেন আমার সদ্যলেখা পদ্য। হুমায়ূন ভাই শোনাতেন মজার মজার কৌতুক। তখন তিনি তার প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'র পাণ্ডুলিপি বগলে নিয়ে ঘুরছেন সম্পাদকদের দপ্তরে দপ্তরে। কিন্তু উপন্যাস ছাপা হতো কেবল ঈদসংখ্যায়, যেখানে নবীন লেখকরা ছিলেন অযাচিত। সে নিয়ে হুমায়ূন ভাইয়ের আক্ষেপের শেষ ছিল না। হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে আমি অনেক কৌতুক ও ম্যাজিক শিখেছি। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে কার্জন হলে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান পড়তেন হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আমার তিন বছরের জুনিয়র উঠতি লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তখন তার সঙ্গে তেমন সখ্য গড়ে না উঠলেও তার একটি গল্প নিয়ে আমার সম্পাদিত ফজলুল হক হল বার্ষিকীতে ছেপেছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কবিতার চিন্তা মাথা থেকে উবে গিয়েছিল; সেইসঙ্গে পঠন-পাঠনের চিন্তাও কিন্তু কবিতা একবার যাকে পেয়ে বসে, তাকে কি আর ছেড়ে যায়? যায় না, এ কথা প্রমাণের জন্য প্রসঙ্গ একটু ভিন্ন হলেও নিল্ফেম্নাক্ত তথ্য দিতে চাই :
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য আমি এবং ফজলুল হক হলের আরেক আবাসিক ছাত্র, রসায়ন বিভাগে আমার এক বছরের সিনিয়র আলাউদ্দিন আহমেদ একসঙ্গে ভারতে যাই [জনাব আলাউদ্দিন পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সাংসদ এবং সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন]। তার বাড়িও আমাদের পাশের গ্রামে। তার সঙ্গে পলাশীর নৌ কমান্ডো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কিছুদিন প্রশিক্ষণের পর পানির নিচে এক মিনিট দম ধরে রাখতে না পারায় সিগারোটখোর আমি অন্য অনেকের সঙ্গে ডুবসাঁতারে অযোগ্য ঘোষিত হই। আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিহারের চাকুলিয়া স্পেশাল ক্যাম্পে স্থল-কমান্ডো হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য। পলাশী ক্যাম্পের ব্যর্থতা ভুলে যাই যখন দেখলাম চাকুলিয়া ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ আরও বেশি উন্নত পর্যায়ের; পলাশী ক্যাম্পে ডুবসাঁতারে ব্যর্থতা আমার জন্য শাপে বর হয়েছিল। কেন সে কথা, এখানে বলব না। আগামী থেকে প্রকাশিত 'আমার মুক্তিযুদ্ধ :রাজপথ থেকে রণাঙ্গন' বইতে বিস্তারিত লেখা আছে। এ লেখার বিবেচ্য বিষয় আমার কাব্যচর্চা এবং এ বিষয়ক পঠন-পাঠন। তাই কবিতার কথায় ফিরে যাই।
পলাশী ক্যাম্পে যেদিন শুনেছিলাম ডুবসাঁতারে আমার ব্যর্থতার কথা, তখন এতটাই মুষড়ে পড়েছিলাম যে মনের দুঃখে বহুদিন পর একটা কবিতা এসে ভর করল। লিখে আলাউদ্দিন ভাইকে পড়ে শোনালাম। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধুর বন্দিত্ব এবং শত্রুকবলিত দেশে ফেলে যাওয়া প্রেমিকার চিন্তা বিবৃত হয়েছিল কবিতাটিতে :এটি প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল স্বাধীনতার পর আবুল হাসনাত সম্পাদিত সন্ধানী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত 'মুক্তিযুদ্ধের কবিতা' গ্রন্থে :
আমার নীলিমা ছিঁড়ে গেছে ক্রুর শকুনের চিৎকারে:
কবলিত চাঁদে বুটের প্রতাপ,
বেয়নেট-বেঁধা নিহত তারার শব পড়ে আছে বধ্যভূমিতে;
নীহারিকা নিজে রাহুর কবলে বন্দী-
এখন হবে না কারো সাথে কোনো সন্ধি।
ছায়াপথে দোলে প্রেয়সীর মুখ,
দিগন্তে ওড়ে রঞ্জিত তার শাড়ি,
পিষ্ট কাঁচুলি দানবের করতলে-
শত্রুকে তবু ফিরতে দেয়া কি চলে?
বিলের কিনারে কিরিচের ঢঙে ঠোঁট ঘষে কানিবগা;
গোখরোর মতো ফণা তুলে আসে মনসার মেয়ে
লকলকে লাউডগা!
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আধুনিক কবিতায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানের সন্ধানে ইউসিস এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে গিয়ে যেসব ইংরেজি বই পড়তাম, তাতে 'শব্দবাহী চিত্রকল্প' নামে একটি কাব্যোপাদান সম্পর্কে জেনেছিলাম। এই কবিতার প্রথম পঙ্ক্তিতেই ব্যবহূত হয়েছে তেমন একটি শব্দবাহী চিত্রকল্প, যাতে যুদ্ধকবলিত বাংলাদেশের করুণ চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, 'প্রতিরোধ ৭১' শিরোনামে এই কবিতায় 'নীহারিকা' শব্দটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামান্তর, যিনি বন্দি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ডাইরেক্টরেট অব রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনে যোগদান করি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে। কিছুদিন পরই একে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমাদের কাজকর্ম খুবই কম। হাতে অফুরন্ত সময়। সে সুযোগে দুই-হাতে লিখছি কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া ও গান। ১৯৭৬ সালে বদলি হয়ে টাঙ্গাইল শহরে এলে একদল কবির সাক্ষাৎ পাই, যাদের গুরু ছিলেন মাহবুব সাদিক; তিনি তখন করটিয়া কলেজের বাংলার অধ্যাপক। আগেই জানতাম :শুধু কবি হিসেবে নন, কবিতার নানা বিষয়ে অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তি তিনি। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে সময় লাগেনি আমার। একপর্যায়ে তিনি আমাকে আমার কবিতা নিয়ে 'দৈনিক বাংলা'র সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীবের কাছে যেতে বলেন। আমি ভয়ে এত দিন তার কাছে যাইনি, কারণ শুনেছিলাম তিনি খুব কড়া সম্পাদক। নিজের বস (দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদক) কবি শামসুর রাহমানের কবিতাও নাকি মাঝেমধ্যে ফেরত দিয়ে নতুন কবিতা চাইতেন। আমার কবিতা অমনোনীত হলে দুঃখ পাব এবং এতে কবিতা লেখার 'শখ' চিরতরে উবে যেতে পারে- সেই ভয়ে যাইনি। কারও কবিতা পছন্দ না হলে তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু করতে উপদেশ দিতেন। সৌভাগ্য আমার :তিনি আমার কবিতা পড়ে প্রথম দিনেই জানালেন একে একে সবগুলোই ছাপা হবে। একমুহূর্তে বন্ধুর মতো আপন করে নিলেন আমাকে। আমার ভয় কেটে গেল। কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে আমার পরিচিতি অর্জনে আমাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যে সম্পাদক সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি কবি আহসান হাবীব। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি আমাকে দিয়ে তার পাতায় নিয়মিত পাক্ষিক কিস্তিতে 'মধ্যদিনের জানালা' নামের একটি কলামও লিখিয়েছিলেন।
আমার পরিচিতি অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন এমন আরেকজন সম্পাদকের কথা না বললেই নয়, যিনি সংবাদ সাময়িকী এবং পরে কালি ও কলম-এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি জনাব আবুল হাসনাত, যিনি 'মাহমুদ আল জামান' কলমি-নামে কবিতা ও প্রবন্ধ, বিশেষ করে শিল্প-সমালোচনা লিখতেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনিও তার সংবাদ সাময়িকীর পাতায় অনিয়মিত কিস্তিতে 'বাংলা কবিতার আধুনিকায়ন' নামে আমাকে একটা কলাম লেখার সুযোগ দিয়েছিলেন। তার ফরমায়েশে লেখা আমার অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা তিনি সযত্নে ছেপেছেন তার কালি ও কলম নামে ম্যাগাজিনে।
আমার রচনাকর্মের প্রতি আরও অনেক সম্পাদকের ভালোবাসাও স্মরণযোগ্য। তাদের মধ্যে প্রধান কয়েকজন কবি আবদুস সাত্তার, রফিক আজাদ, বেলাল চৌধুরী, আল মুজাহিদী, নাসির আহমেদ, মঈনুল আহসান সাবের, মোহিত কামাল, সাজ্জাদ শরিফ, আনিসুল হক, মাহবুব আজীজ, নাসরীন জাহান, জুন্নু রাইন প্রমুখ। ইংরেজি পত্রিকার মধ্যে বাংলাদেশ টাইমস, বাংলাদেশ ইলাস্ট্রেটেড উইকলি, ডেইলি অবজারভার, ডেইলি স্টার, ঢাকা টুডে ইত্যাদির বিভাগীয় সম্পাদকবৃন্দ।
আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে, যারা অকুণ্ঠচিত্তে আমার সামান্য রচনাকর্মকেও উচ্চমূল্য দিয়েছেন। তারা হলেন- সাহিত্যিক শওকত ওসমান, সৈয়দ আলী আহসান, শামসুর রাহমান, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, ড. হুমায়ুন আজাদ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. মাহবুব সাদিক, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, অসীম সাহা, এ ইউ এম ফখরুদ্দিন, ড. রফিকউল্লাহ খান, শেখর ইমতিয়াজ, আনিসুল হক, রহিমা আখতার কল্পনা, ড. মাসুদুল হক, ড. তারেক রেজা, ড. শ্যামল কান্তি দত্ত, জুনাইদুল হক, মনি হায়দার, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, শ্যামসুন্দর সিকদার, মোহাম্মদ নূরুল হক, সুমন সরদার, শাকিল রিয়াজ, ভারতের কৌশিক গুড়িয়া এবং বাসুদেব মণ্ডল থেকে বর্তমান প্রজন্মের অনেক মেধাবী কবি-লেখক। তাদের লেখা নিয়ে সম্প্রতি আগামী প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে ড. তপন বাগচীর সম্পাদনায় 'বহুমুখি আবিদ আনোয়ার' নামে ২২৪ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ। জীবদ্দশায় প্রকাশিত এমন একটি গ্রন্থ আমার এক বড় প্রাপ্তি।
বিষয়টি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও দৃশ্যমান। সাহিত্যবিষয়ক প্রজ্ঞা তথা জ্ঞানের পরিধি আর অনেক ক্ষেত্রেই কবিতা রচনায় এর প্রয়োগ-সংক্রান্ত ব্যর্থতা নিয়ে লেখা একটি ইংরেজি বইতে (নাম মনে নেই) খুব মজার একটি কৌতুক পড়েছিলাম, যার উল্লেখ এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করছি :
একজন গলফ খেলোয়াড় তার খেলা বিষয়ে এতই জ্ঞানী যে, গলফবিষয়ক কোনো আলোচনা সভায় তিনি হন প্রধান অতিথি কিংবা সভাপতি; গলফবিষয়ক কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যও তার ডাক পড়ে কিন্তু 'ইন প্র্যাকটিস, হোয়েন হি হিটস দ্য বল, ইট সিমস অ্যাজ দো হি ইজ বিটিং অ্যা স্নেইক'- মানে 'বাস্তবে গলফ খেলতে গিয়ে তিনি যখন স্টিক দিয়ে বলে আঘাত করেন, তখন মনে হয় একটা সাপকে পেটাচ্ছেন।' গুরুর কাছে বিদ্যা শিখে কবিতা লেখার কৌশল আয়ত্ত করা যায় না- এ সত্যটি প্রকাশ করতে আমারও একটি পদ্যের একাংশে লিখেছিলাম:
পালের বাতাস, বৈঠা জানে না গলুইয়ের মতিগতি;
ভেড়া ও কুকুর মেনে চলে তার মনিবের ব্যাকরণ-
প্রকৃত নবীন মানে না কখনও প্রবীণের ইমামতি,
কবিদের কোনো গুরু নেই, আছে নিজেদেরই শ্রীচরণ
[রাজাহীন রাজধানী, আটকে আছি মধ্যনীলিমায়]
কিন্তু না, আধুনিক কালের কবিতায় সৃজনের সঙ্গে মননের যে সমন্বয় ঘটাতে হয় এবং নিজস্ব একটি কণ্ঠস্বর অর্জন করতে হয়, তাতে অগ্রজদের রচনার ব্যাপক পঠন-পাঠন হয়ে ওঠে অবশ্যম্ভাবী এবং এ-অর্থে তারাও 'পরোক্ষ গুরু'র ভূমিকাই পালন করেন। আমার নিজ পরিবারে সাহিত্য বিষয়ে অতটা আগ্রহী কেউ ছিলেন না যে, আমাকে হাত ধরে কবিতার জগতে নিয়ে আসবেন; বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে একাডেমিক অঙ্গনেও এমন কেউ ছিলেন না যিনি এ বিষয়ে আমাকে সহায়তা করবেন। নিজের ভেতরেই সৃষ্ট এক তাগিদ আমার বাল্যকালেই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে কবিতার দিকে :প্রথমত, রবীন্দ্র-নজরুল-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত-জসীম উদ্দীনের কবিতা পড়তে। রবীন্দ্রনাথের সাবলীল প্রকাশভঙ্গির কারণে দুয়েকবার পড়লেই তার কোনো কবিতা মুখস্থ হয়ে যেত অবিশ্বাস্যভাবে; এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার বহু কবিতা আমি মুখস্থ আওড়াতে পারি।
মফস্বল (কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ) থেকে ১৯৬৬-৬৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা কলেজে পড়তে আসা আমি শিক্ষক হিসেবে যে দু'জন কবি-সাহিত্যিককে পেয়েছিলাম, তারা হলেন শওকত ওসমান ও আশরাফ সিদ্দিকী। লেখক হিসেবে পরিচিত ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে আরও ছিলেন জনাব নজীবুর রহমান, নয়ন রহমান এবং রওশন আরা ম্যাডাম; ক্লাসের বাইরে তাদের সঙ্গেও তেমন কোনো সখ্য গড়ে ওঠেনি যে, আমার কবিতাচর্চায় সহায়তার হাত বাড়াবেন। তবে শওকত ওসমান ও আশরাফ সিদ্দিকীর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত কলেজ ম্যাগাজিনে আমার একটি কবিতা মুদ্রিত হলে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম দারুণভাবে। আমাদের প্রিন্সিপাল জালাল উদ্দিন আহমেদ, যিনি আমাদের ক্লাসে ইংরেজি পড়াতেন, তার কাছে কবিতার অনেক কিছু শিখেছি; যা কাজে লেগেছে পরবর্তীকালেও। সময়টা ছিল ঢাকা কলেজের জন্য স্বর্ণযুগ; মেধাবী ছাত্রদের প্রথম পছন্দের কলেজ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যেত মেধাতালিকার প্রথম ২০ জনের প্রায় সবাই ঢাকা কলেজের; সে তালিকায় কদাচিৎ ঢুকে পড়ত নটর ডেম কলেজ বা ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের দুয়েকজন। এর পেছনে কাজ করেছে ছাত্রভর্তির কঠোরতার সঙ্গে জালাল স্যারের দক্ষ প্রশাসন এবং শিক্ষকতা। আমাদের সময়ে ঢাকা কলেজে শিক্ষকদের সংখ্যা ছিল প্রয়োজনের চেয়েও বেশি। ফলে একটি কি দুটি কবিতা বা গল্প পড়ানোর দায়িত্ব পড়ত একেকজন শিক্ষকের ওপর। প্রিন্সিপাল জালাল স্যার আমাদের পড়িয়েছেন আলফ্রেড টেনিসনের 'ইউলিসেস' নামের একটি কবিতা। এই একটিমাত্র কবিতা পড়ানোর সূত্রে তিনি আমাদের পরিচিত করিয়েছিলেন হোমারের সমগ্র ইলিয়াড-ওডিসির সঙ্গে; বুঝিয়েছেন মহাকাব্য ও আধুনিক গীতিকাব্য- এ দুই ধারার কবিতার মধ্যে পার্থক্য কী, গ্রিক ভাষায় রচিত ইলিয়াড-ওডিসি ইংরেজি ভাষায় কতটা প্রভাব রেখেছে; বুঝিয়েছেন এর সঙ্গে বাল্মিকীর 'রামায়ণ' এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাধ বধ' কাব্যের মিল ও অমিলের কথা; ট্রয় ও লঙ্কা, হেলেন ও সীতার মিল ও অমিলের কথা; রবীন্দ্র-নজরুলের যুগ পেরিয়ে বাংলা কবিতা কী করে বিশ শতকীয় তিরিশের দশকে এসে ইংরেজি ভাষার কবিদের মাধ্যমে ফরাসি কবি বোদলেয়ারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নবতর আধুনিকতাকে আলিঙ্গন করল তার কথা। অথচ তার পড়ানোর বিষয় ছিল কেবল আলফ্রেড টেনিসনের 'ইউলিসেস' কবিতাটি। হয়তো একেই বলা যায় 'আদর্শ শিক্ষক', যিনি পাঠ্যসূচির বাইরে গিয়েও শিক্ষার্থীর পাঠতৃষ্ণাকে উস্কে দেন। জালাল স্যারের শিক্ষকতায় বুঝলাম :ভালো কবিতা লিখতে হলে এ বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে। মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি :'পড়াশুনা আমি করিতে পারি নাই কারণ পড়াশুনা করিতে যতটা কম পড়াশুনা করিতে হয় ততটা কম পড়াশুনা আমি করিতে পারি নাই!"
সাহিত্য বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় পাঠ্যসূূচির জন্য প্রয়োজনীয় 'কম পড়াশোনা' নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম দু'বছর, কারণ ভালো রেজাল্ট ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো কোনো বিষয়ে ভর্তি হওয়া যাবে না। তবুও আধুনিক কবিতা বিষয়ে বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধগুলো পড়ে এই উপলব্ধি জাগ্রত হলো যে, আধুনিক কবিতা কোনো উন্নাসিকতার ফসল নয় [আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতো অনেকেই যা ভাবতেন ও বলতেন]; ছন্দসহ কবিতার চিরন্তন উপাদানের সবকিছুই এতে রয়েছে, বদলে গেছে কেবল ভাষা ব্যবহার- কেতাবি শব্দের বদলে আটপৌরে মৌখিক শব্দের ব্যবহার। ফরাসিরা একে বললেন 'ভার্স লিব্র্' আর ইংরেজ কবিরা বললেন 'ল্যাঙ্গুয়েজ অব এভ্রি ডে'। বুদ্ধদেব বসুকে ড. হুমায়ুন আজাদ তার একটি বই উৎসর্গ করতে গিয়ে তাকে বলেছেন 'বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক'। কথাটি সর্বাংশে সত্য। অন্য সবার মতো তিনি আমারও পরোক্ষ শিক্ষক। তিরিশি আধুনিকতার আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোহিতের ভূমিকায়। সেই সূত্রে তার নিজের গুরু বোদলেয়ার,র্ যাঁবো, মালার্মে, টিএস এলিয়ট, ডব্লিউ বি ইয়েটস, এজরা পাউন্ড প্রমুখ পাশ্চাত্যের কবি-লেখকও আমাদের গুরু, অন্তত আমার গুরু।
আমার কলেজজীবনে একটি বিভ্রান্তি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। প্রভাবশালী তরুণ অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দের প্ররোচনায় নবীনদের প্রায় সবাই গদ্যরীতিতে কবিতা লিখতেন, কারণ তার প্রথম বইয়ের সব কবিতাই গদ্যরীতিতে লেখা। কিন্তু বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধাবলি পড়ে জানতে পারি, আধুনিক কবিতায়ও ছন্দ এক অপরিহার্য শিল্প-উপাদান। তিরিশি আধুনিক কবিরা কেবল ছিটেফোঁটা গদ্যকবিতা লিখেছেন বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত একটিও গদ্যকবিতা লিখেননি। আমারও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে গেল যখন দেখলাম আবদুল মান্নান সৈয়দ দ্রুতই ছন্দে নিবিষ্ট হয়েছেন। বুঝলাম :প্রবেশলগ্নে তার গদ্যরীতির চর্চা ছিল অজ্ঞতার ফসল, কারণ প্রথম গ্রন্থের পর তিনি আর কেবল গদ্যকবিতা লিখেননি।
ছন্দজ্ঞানকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য পড়তে হলো ছন্দগুরু প্রবোধচন্দ্র সেনের বইগুলো। পড়ে আনন্দ পেলাম এই দেখে যে, ছন্দ আমার অস্থিমজ্জায় আগেই আসন গেড়ে বসেছিল। প্রবোধচন্দ্র সেনের বই পড়ে কেবল ছন্দের শাস্ত্রীয় নামগুলো শিখলাম। দেখলাম :ইতোমধ্যে যা লিখেছি, তাতে ছন্দের কোনো পতন নেই, অতিরেক নেই; সব ধরনের ছন্দের কবিতাই লিখে বসে আছি। জানতাম না কেবল ছন্দের শাস্ত্রীয় নামগুলো। বুঝলাম :রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সত্যেন্দ্রনাথ-জসীম উদ্দীন-জীবনানন্দ-সুধীন্দ্রনাথ-বুদ্ধদেব বসু-শামসুর রাহমান-আল মাহমুদের কবিতা পাঠের প্রক্রিয়ায় আমার নিজের কানই কখন ছন্দ বিষয়ে আমার শিক্ষাগুরুর কাজটি সেরে ফেলেছে!
প্রতিষ্ঠিত কবিদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বৃদ্ধি পায় ১৯৬৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের টিকিটে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হলে বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশের জন্য অগ্রজদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, লেখা সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের জন্য সেই যোগাযোগের মাত্রা বেড়ে যায়; প্রায় নিয়মিত যেতে শুরু করি মধুর ক্যান্টিনে কবিদের বৈকালিক/ সান্ধ্য আড্ডায়। নিয়মিত আসতেন নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, গোলাম সাবদার সিদ্দিকী, ফিউরি খোন্দকার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ; কখনও-সখনও তাদের চেয়েও নামজাদা অগ্রজদের কেউ কেউ। আলাপে-প্রলাপে মুখরিত মধুর ক্যান্টিন তখন ছিল কবিতা বিষয়ে অনেক শিক্ষার এবং একাধারে বহু বিভ্রান্তির আঁতুড়ঘর।
রসায়ন বিভাগে লেখক-বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে, যিনি ছিলেন আমার এক বছরের সিনিয়র। আমাদের শিক্ষক ড. আলী নওয়াব ছিলেন অত্যন্ত সাহিত্যামোদী। প্রায়ই অবসর পেলে হুমায়ূন ভাই ও আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আড্ডা মারতেন। মাঝেমধ্যে শুনতে চাইতেন আমার সদ্যলেখা পদ্য। হুমায়ূন ভাই শোনাতেন মজার মজার কৌতুক। তখন তিনি তার প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'র পাণ্ডুলিপি বগলে নিয়ে ঘুরছেন সম্পাদকদের দপ্তরে দপ্তরে। কিন্তু উপন্যাস ছাপা হতো কেবল ঈদসংখ্যায়, যেখানে নবীন লেখকরা ছিলেন অযাচিত। সে নিয়ে হুমায়ূন ভাইয়ের আক্ষেপের শেষ ছিল না। হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে আমি অনেক কৌতুক ও ম্যাজিক শিখেছি। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে কার্জন হলে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান পড়তেন হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আমার তিন বছরের জুনিয়র উঠতি লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তখন তার সঙ্গে তেমন সখ্য গড়ে না উঠলেও তার একটি গল্প নিয়ে আমার সম্পাদিত ফজলুল হক হল বার্ষিকীতে ছেপেছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কবিতার চিন্তা মাথা থেকে উবে গিয়েছিল; সেইসঙ্গে পঠন-পাঠনের চিন্তাও কিন্তু কবিতা একবার যাকে পেয়ে বসে, তাকে কি আর ছেড়ে যায়? যায় না, এ কথা প্রমাণের জন্য প্রসঙ্গ একটু ভিন্ন হলেও নিল্ফেম্নাক্ত তথ্য দিতে চাই :
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য আমি এবং ফজলুল হক হলের আরেক আবাসিক ছাত্র, রসায়ন বিভাগে আমার এক বছরের সিনিয়র আলাউদ্দিন আহমেদ একসঙ্গে ভারতে যাই [জনাব আলাউদ্দিন পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সাংসদ এবং সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন]। তার বাড়িও আমাদের পাশের গ্রামে। তার সঙ্গে পলাশীর নৌ কমান্ডো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কিছুদিন প্রশিক্ষণের পর পানির নিচে এক মিনিট দম ধরে রাখতে না পারায় সিগারোটখোর আমি অন্য অনেকের সঙ্গে ডুবসাঁতারে অযোগ্য ঘোষিত হই। আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিহারের চাকুলিয়া স্পেশাল ক্যাম্পে স্থল-কমান্ডো হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য। পলাশী ক্যাম্পের ব্যর্থতা ভুলে যাই যখন দেখলাম চাকুলিয়া ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ আরও বেশি উন্নত পর্যায়ের; পলাশী ক্যাম্পে ডুবসাঁতারে ব্যর্থতা আমার জন্য শাপে বর হয়েছিল। কেন সে কথা, এখানে বলব না। আগামী থেকে প্রকাশিত 'আমার মুক্তিযুদ্ধ :রাজপথ থেকে রণাঙ্গন' বইতে বিস্তারিত লেখা আছে। এ লেখার বিবেচ্য বিষয় আমার কাব্যচর্চা এবং এ বিষয়ক পঠন-পাঠন। তাই কবিতার কথায় ফিরে যাই।
পলাশী ক্যাম্পে যেদিন শুনেছিলাম ডুবসাঁতারে আমার ব্যর্থতার কথা, তখন এতটাই মুষড়ে পড়েছিলাম যে মনের দুঃখে বহুদিন পর একটা কবিতা এসে ভর করল। লিখে আলাউদ্দিন ভাইকে পড়ে শোনালাম। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধুর বন্দিত্ব এবং শত্রুকবলিত দেশে ফেলে যাওয়া প্রেমিকার চিন্তা বিবৃত হয়েছিল কবিতাটিতে :এটি প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল স্বাধীনতার পর আবুল হাসনাত সম্পাদিত সন্ধানী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত 'মুক্তিযুদ্ধের কবিতা' গ্রন্থে :
আমার নীলিমা ছিঁড়ে গেছে ক্রুর শকুনের চিৎকারে:
কবলিত চাঁদে বুটের প্রতাপ,
বেয়নেট-বেঁধা নিহত তারার শব পড়ে আছে বধ্যভূমিতে;
নীহারিকা নিজে রাহুর কবলে বন্দী-
এখন হবে না কারো সাথে কোনো সন্ধি।
ছায়াপথে দোলে প্রেয়সীর মুখ,
দিগন্তে ওড়ে রঞ্জিত তার শাড়ি,
পিষ্ট কাঁচুলি দানবের করতলে-
শত্রুকে তবু ফিরতে দেয়া কি চলে?
বিলের কিনারে কিরিচের ঢঙে ঠোঁট ঘষে কানিবগা;
গোখরোর মতো ফণা তুলে আসে মনসার মেয়ে
লকলকে লাউডগা!
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আধুনিক কবিতায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানের সন্ধানে ইউসিস এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে গিয়ে যেসব ইংরেজি বই পড়তাম, তাতে 'শব্দবাহী চিত্রকল্প' নামে একটি কাব্যোপাদান সম্পর্কে জেনেছিলাম। এই কবিতার প্রথম পঙ্ক্তিতেই ব্যবহূত হয়েছে তেমন একটি শব্দবাহী চিত্রকল্প, যাতে যুদ্ধকবলিত বাংলাদেশের করুণ চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, 'প্রতিরোধ ৭১' শিরোনামে এই কবিতায় 'নীহারিকা' শব্দটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামান্তর, যিনি বন্দি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ডাইরেক্টরেট অব রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনে যোগদান করি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে। কিছুদিন পরই একে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমাদের কাজকর্ম খুবই কম। হাতে অফুরন্ত সময়। সে সুযোগে দুই-হাতে লিখছি কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া ও গান। ১৯৭৬ সালে বদলি হয়ে টাঙ্গাইল শহরে এলে একদল কবির সাক্ষাৎ পাই, যাদের গুরু ছিলেন মাহবুব সাদিক; তিনি তখন করটিয়া কলেজের বাংলার অধ্যাপক। আগেই জানতাম :শুধু কবি হিসেবে নন, কবিতার নানা বিষয়ে অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তি তিনি। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে সময় লাগেনি আমার। একপর্যায়ে তিনি আমাকে আমার কবিতা নিয়ে 'দৈনিক বাংলা'র সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীবের কাছে যেতে বলেন। আমি ভয়ে এত দিন তার কাছে যাইনি, কারণ শুনেছিলাম তিনি খুব কড়া সম্পাদক। নিজের বস (দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদক) কবি শামসুর রাহমানের কবিতাও নাকি মাঝেমধ্যে ফেরত দিয়ে নতুন কবিতা চাইতেন। আমার কবিতা অমনোনীত হলে দুঃখ পাব এবং এতে কবিতা লেখার 'শখ' চিরতরে উবে যেতে পারে- সেই ভয়ে যাইনি। কারও কবিতা পছন্দ না হলে তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু করতে উপদেশ দিতেন। সৌভাগ্য আমার :তিনি আমার কবিতা পড়ে প্রথম দিনেই জানালেন একে একে সবগুলোই ছাপা হবে। একমুহূর্তে বন্ধুর মতো আপন করে নিলেন আমাকে। আমার ভয় কেটে গেল। কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে আমার পরিচিতি অর্জনে আমাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যে সম্পাদক সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি কবি আহসান হাবীব। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি আমাকে দিয়ে তার পাতায় নিয়মিত পাক্ষিক কিস্তিতে 'মধ্যদিনের জানালা' নামের একটি কলামও লিখিয়েছিলেন।
আমার পরিচিতি অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন এমন আরেকজন সম্পাদকের কথা না বললেই নয়, যিনি সংবাদ সাময়িকী এবং পরে কালি ও কলম-এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি জনাব আবুল হাসনাত, যিনি 'মাহমুদ আল জামান' কলমি-নামে কবিতা ও প্রবন্ধ, বিশেষ করে শিল্প-সমালোচনা লিখতেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনিও তার সংবাদ সাময়িকীর পাতায় অনিয়মিত কিস্তিতে 'বাংলা কবিতার আধুনিকায়ন' নামে আমাকে একটা কলাম লেখার সুযোগ দিয়েছিলেন। তার ফরমায়েশে লেখা আমার অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা তিনি সযত্নে ছেপেছেন তার কালি ও কলম নামে ম্যাগাজিনে।
আমার রচনাকর্মের প্রতি আরও অনেক সম্পাদকের ভালোবাসাও স্মরণযোগ্য। তাদের মধ্যে প্রধান কয়েকজন কবি আবদুস সাত্তার, রফিক আজাদ, বেলাল চৌধুরী, আল মুজাহিদী, নাসির আহমেদ, মঈনুল আহসান সাবের, মোহিত কামাল, সাজ্জাদ শরিফ, আনিসুল হক, মাহবুব আজীজ, নাসরীন জাহান, জুন্নু রাইন প্রমুখ। ইংরেজি পত্রিকার মধ্যে বাংলাদেশ টাইমস, বাংলাদেশ ইলাস্ট্রেটেড উইকলি, ডেইলি অবজারভার, ডেইলি স্টার, ঢাকা টুডে ইত্যাদির বিভাগীয় সম্পাদকবৃন্দ।
আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে, যারা অকুণ্ঠচিত্তে আমার সামান্য রচনাকর্মকেও উচ্চমূল্য দিয়েছেন। তারা হলেন- সাহিত্যিক শওকত ওসমান, সৈয়দ আলী আহসান, শামসুর রাহমান, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, ড. হুমায়ুন আজাদ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. মাহবুব সাদিক, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, অসীম সাহা, এ ইউ এম ফখরুদ্দিন, ড. রফিকউল্লাহ খান, শেখর ইমতিয়াজ, আনিসুল হক, রহিমা আখতার কল্পনা, ড. মাসুদুল হক, ড. তারেক রেজা, ড. শ্যামল কান্তি দত্ত, জুনাইদুল হক, মনি হায়দার, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, শ্যামসুন্দর সিকদার, মোহাম্মদ নূরুল হক, সুমন সরদার, শাকিল রিয়াজ, ভারতের কৌশিক গুড়িয়া এবং বাসুদেব মণ্ডল থেকে বর্তমান প্রজন্মের অনেক মেধাবী কবি-লেখক। তাদের লেখা নিয়ে সম্প্রতি আগামী প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে ড. তপন বাগচীর সম্পাদনায় 'বহুমুখি আবিদ আনোয়ার' নামে ২২৪ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ। জীবদ্দশায় প্রকাশিত এমন একটি গ্রন্থ আমার এক বড় প্রাপ্তি।
বিষয় : প্রচ্ছদ আবিদ আনোয়ার
মন্তব্য করুন