
ঈদ মানে অনাবিল আনন্দ। শৈশবে বুদ্ধি হবার পর থেকেই ঈদের আনন্দে অংশীদার হওয়া– বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আনন্দ নানা মাত্রায় পল্লবিত হয়। তারপরও উৎসবে শৈশবের আনন্দ কখনও ম্লান হবার নয়। তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জানাচ্ছেন ঈদ নিয়ে তাঁদের স্মৃতি...
ফুলেল ঈদ
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
যখন থেকে ঈদের কথা মনে আছে, সেটা প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময়। বাবার সরকারি চাকরিসূত্রে তাঁর বদলির সঙ্গে আমাদেরও বদলি হয়েছে। রায়পুরে ছিলাম প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। আমি প্যান্ট পরতাম। তবে ঈদের সময় আমাকে পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনে দেওয়া হতো। তখনকার দিনে মুচি ছিল। তাঁরা জুতা তৈরি এবং জুতা মেরামতের কাজ করতেন। বাসায় এসে জুতার মাপ নিয়ে যেতেন। জুতা তো যে কোনো সময়ই কেনা যায়। তবে ঈদের সময় বিশেষ করে জুতা বানানো হতো– চামড়ার জুতা– ফিতাওয়ালা বা স্যান্ডেল শু। তখন তো মেশিনে বানানো হতো না; পুরোটা হাতেই বানানো হতো। জুতা তৈরি হয়ে গেলে মুচি তা বাড়িতে দিয়ে যেতেন।
ঈদে ফুল দেওয়ার প্রচলন ছিল বেশ। রায়পুরে স্থানীয় এক ধনাঢ্য ভদ্রলোক ছিলেন। শহরের অদূরেই তাঁর বিশাল বাড়ি। সেখানে ছিল হরেক রকমের ফুলের বিশাল বাগান। একেক মৌসুমে একেক রকমের ফুলে ভরে থাকত বাগান। তিনি বাবার কাছে বিভিন্ন উৎসবে গোলাপ, রঙ্গন বা গন্ধরাজের তোড়া নিয়ে আসতেন শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। রায়পুরে শহর থেকে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে ছিল এক জমিদার বাড়ি। ওই জমিদারের সঙ্গে আমাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। জমিদারের ভাই ছিলেন বিলেত পড়ুয়া ব্যারিস্টার। দেখতে সুদর্শন ওই ভদ্রলোকের স্ত্রী ছিলেন মেমসাহেব। মূল জমিদার বাড়ির পাশে একটি বাংলোতে তিনি থাকতেন। সেখানেও ছিল বিশাল এক বাগান। বিলেত থেকে মেমসাহেব হরেক রকমের ফুলগাছের বীজ নিয়ে এসে ওই বাগানকে করে তুলেছিলেন মোহনীয়। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তখন তাঁর বয়স হয়তো ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে। তাঁর একটা কুকুর ছিল। তা নিয়ে একাই থাকতেন। ওই মেমসাহেবও ফুল নিয়ে আসতেন ঈদ বা অন্যান্য উৎসবে। রায়পুরে একটি জামে মসজিদ আছে। খুবই সুন্দর– রায়পুরের ল্যান্ডমার্ক। এ মসজিদ ছিল আমাদের বাসা থেকে আধা মাইল দূরে। ঈদে পাওয়া নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে আমরা ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। তখন বাড়িতে বাড়িতে দু-তিন রকমের সেমাই রান্না হতো। সঙ্গে থাকত লুচি।
লক্ষ্মীপুরে ছিলাম চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। আমাদের বাড়ির পাশেই ছিলেন দু’জন মুন্সেফ। তাঁদের বাড়িটি ছিল খুবই পরিপাটি, গোছানো। আমি সেখানে গেলে ড্রইংরুমে বসিয়ে সেমাই দেওয়া হতো। খুব আদর করতেন আমাকে। সেখানে আমার এক বন্ধু ছিল। পরে নামকরা আইনজীবী হয়েছিল। তাদের বাড়িটা ছিল বিশাল এক দোতলা ভবন। ঈদের দিন সেখানে যেতাম। লক্ষ্মীপুরে আমাদের বাসার ঠিক উল্টোদিকেই ছিল মাদ্রাসার মসজিদ। সেখানেই ঈদের নামাজ পড়তাম।
লক্ষ্মীপুরের পর আমরা চলে যাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে আমরা থাকতাম মুন্সেফ পাড়ায়। ঈদগাহে যেতে দুটি প্রেক্ষাগৃহ রূপশ্রী ও চিত্রালয় পড়ত। ঈদ উপলক্ষে নতুন ভালো চলচ্চিত্র আনা হতো। আর তখন ভালো চলচ্চিত্র মানেই ছিল কলকাতায় চলচ্চিত্র। একবার এসেছিল ‘পথে হলো দেরী’।
তখন ঈদে আমরা বন্ধু, পরিচিত, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়াতাম। মেয়েরাও এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ঘুরে বেড়াত। এটা ঢাকা শহরে নেই। ঢাকায় আগেও আত্মীয়দের বাড়িতেই বেড়ানো হতো। আর কিছু অফিশিয়াল দেখাসাক্ষাৎ হতো। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টা মফস্বল শহরে হয়তো এখনও আছে।
তবে আগেকার ঈদের সঙ্গে এখনকার ঈদের একটা বড় পার্থক্য হলো– এখন ঈদ মানেই যেন নতুন কাপড়-জুতা। মফস্বল শহরই শুধু নয়, ঢাকায়ও আগে এমনটা ছিল না। তখন ঈদে আয়োজন করে সেমাই, ছোলা বা অন্য খাদ্যসামগ্রী কেনা হতো। কারণ মেহমান আসবে। আমার যখন খুব অল্প বয়স, তখন পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনে দেওয়া হতো। তবে একটু বড় হওয়ার পর কিন্তু এটি প্রতি ঈদের ঘটনা ছিল না। ঈদে নতুন কাপড়ের বিষয়টা তখন এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো না। করোনাকালে মানুষের আর্থিক অবস্থা যখন শোচনীয় হয়ে পড়ল, তখনও ঈদে কেনাকাটা কম হয়নি। নতুন কাপড়ের এ বাধ্যবাধকতা তখন সেভাবে ছিল না। আমি নিজেও ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটা করিনি।
আমার মেয়ের বয়স তখন তিন অথবা চার বছর। এলিফ্যান্ট রোডে মার্কেটে গিয়েছি। সেখান থেকে ফিরে এলাম। ওর এক জোড়া লাল জুতা পছন্দ হলো। কিন্তু কিছু বলেনি তখন। বাসায় ফিরে কান্না শুরু করল। পরে আমি একাই ওই দোকানে গিয়ে জুতা নিয়ে এসেছিলাম। আমার এই মেয়ে এখন বিদেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ওই ঘটনা নিয়ে আমরা পরে অনেক হাসাহাসি করেছি। এ ঘটনাটি ব্যতিক্রম বলেই মনে আছে। তখন এ বিষয়গুলো এখনকার মতো ছিল না যে, ঈদের সময় সন্তানের নতুন জামা কিনে দেওয়াটা বাধ্যবাধকতা। গত কয়েক দশকে ঈদের সামাজিক ভিত্তির বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। বাজার অর্থনীতির প্রভাবটা পড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর। ঈদের কেনাকাটা একটি নতুন বাণিজ্যিকীকরণ বাস্তবতা। একটা সামাজিক চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাজার অর্থনীতি ও সামাজিক চাহিদা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এটা গরিবদের জন্য এক বিশাল চাপ। ছোটবেলায় আমরা দেখেছি– ফুল দেওয়া হতো, ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হতো। কয়েক রকমের সেমাই খাওয়া হতো। এটাই ছিল ঈদ। আজ ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, বাজারে ভিড় পড়ে যাবে– এমনটা আমি সে সময়ে দেখিনি।
গ্রামের স্মৃতি
রওনক জাহান
ঈদে ছোটবেলার যে স্মৃতিটা সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়, সেটা হলো– গ্রামে যাওয়া। ঈদের সময়ে নানাবাড়ি ও দাদাবাড়ি যেতাম। দাদাবাড়ি নোয়াখালীর মাইজদীর কাছে, আর নানাবাড়ি চৌমুহনী। ঈদের দিন সকালটা আমরা দাদাবাড়িতে থাকতাম। ঈদের নামাজের পর নানাবাড়িতে যেতাম। নানাবাড়িতে গিয়েই আমরা সাধারণত দুপুরের খাবারটা খেতাম। গ্রামের অনেক দূরসম্পর্কের আত্মীয়স্বজন, যাঁদের সঙ্গে সবসময় দেখা হতো না, এ সময়টাতেই তাঁদের সান্নিধ্য পেতাম।
নানাবাড়ি ও দাদাবাড়ির মধ্যে দূরত্ব ছিল চার মাইলের মতো। বর্ষাকালে যেতে হতো নৌকায়। তখন প্রচুর কচুরিপানা হতো। এটুকু দূরত্ব যেতেই কখনও কখনও চার ঘণ্টা লেগে যেত। আবার কখনও গরুর গাড়িতেও যেতাম। তখনও কয়েক ঘণ্টা লেগে যেত। আমার মনে আছে– ছোটবেলায় আমার মায়ের সঙ্গে পালকিতে করে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে গিয়েছি। তখন আমার বয়স অনেক অল্প, হয়তো পাঁচ বছর। তবে আমি যেহেতু মেয়ে, সেহেতু আমাকেও মায়ের সঙ্গে পালকিতে চড়তে হয়েছে। পালকি ছিল ভীষণ রকম গরম। পালকিতে ঢোকার পর তা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হতো। তখন গ্রামে যত রকম পরিবহন ব্যবস্থা ছিল, সেগুলোতে চড়ার সুযোগটা হয়েছে ঈদের সময়টাতেই।
শহর ছেড়ে কয়েকটা দিনের জন্য গ্রামে যাওয়া, প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া– এটাই ছিল আমার কাছে ঈদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। তখন গ্রামে অনেক পুকুর ছিল, দিঘি ছিল। গ্রামজুড়ে ছিল নারকেল গাছ, সুপারি গাছ, তাল গাছ। ঈদ মানেই ছিল গ্রামে যাওয়া; আর আমরা গ্রামে যাওয়ার মানেই হরেক রকমের পিঠা। গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই ছিল হাঁস-মুরগি। অনেক বাড়িতে গরু-ছাগল ছিল। এই কয়েকটা দিন আমরা বড় খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারতাম। সে সময় গ্রামে যে খাল ছিল, সেটা এখনকার অনেক নদীর চেয়েও বড়। তবে আগেকার গ্রাম আর এখনকার গ্রামের চিত্র এক নয়। অনেক কিছুই বদলে গেছে।
ঈদের দিনটা শুধু নয়; ঈদ উপলক্ষে আমাদের গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হতো, এ গ্রামীণ পরিবেশটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দময়। বড় হওয়ার পর নানান ব্যস্ততায় সেভাবে গ্রামে যাওয়া হয়নি। আমার কাছে এখনও গ্রামের কথা বললে কল্পনায় যে ছবিটা ভেসে ওঠে, তা ছোটবেলার ঈদের সময়টা– যখন নানাবাড়ি ও দাদাবাড়ি যাওয়ার সুযোগ হতো। ছোটবেলার ঈদ মানেই আমার কাছে গ্রামের স্মৃতি।
ঈদের চাঁদ, টুকরো বিষণ্নতা ও বারুয়া মাঝি
সেলিনা হোসেন
আমার যখন পাঁচ-সাত বছর বয়স, বাবার চাকরি ছিল বগুড়ায়। আমরা থাকতাম সেরিকালচার নার্সারি, রেশম শিল্প এলাকার ভেতরে। গ্রামটির নাম ছিল গণ্ডগ্রাম, আর আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরেই ছিল করতোয়া নদী। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা ছিল ওটা। কারণ তখন তো ঘনবসতি অতটা ছিল না ওখানে। ঘন গাছপালা ছিল, পাখিরা ছিল। আব্বার কলিগরাসহ আমরা নয়-দশ-এগারো বছরের আট-দশজন ছেলেমেয়ে একসঙ্গে এখানে ওখানে বেড়াতাম। একটা সুন্দর মাঠ ছিল। ঈদের চাঁদ ওঠা দেখার জন্য আমরা একসঙ্গে সেই মাঠে বসে থাকতাম। কী যে অপূর্ব সেই মুহূর্ত! সবাই একটা ব্যাকুলতা নিয়ে চাঁদ ওঠা দেখার জন্য বসে থাকতাম। আর যখন চাঁদ দেখতে পেতাম– সে কী আনন্দ। একে অপরকে দেখাতাম আর হাততালি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে ছুট! এটা ঈদ নিয়ে আমার শৈশবের একটা অন্যরকম আনন্দের স্মৃতি। চাঁদ দেখার জন্য ওই যে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা– আমার স্মৃতিপটে এ এক অন্যরকম দিগন্তরেখা।
যখন আমরা একটু বড় হয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন আর ছোটবেলার মতো অবাধে বের হতে পারতাম না। বাবা-মায়ের শাসন ছিল। একটা বড় উঠান ছিল আমাদের বাড়িতে। বড় হওয়ার পর চাঁদ দেখার জন্য উঠানে দাঁড়াতাম। উঠানে সীমাবদ্ধ আকাশ। সেখান থেকে কিন্তু ভালো দেখতে পেতাম না। মন খারাপ হতো। ঈদের চাঁদ দেখার সেই দুকূল ছাপানো আনন্দটা আমার একটু একটু করে হারিয়ে গেল। ওই বয়সে, যখন একটু-আধটু বুঝতে শিখেছি, কিছু বিষণ্নতা ভর করত। ঈদের জামাটা ছিল আরেক আনন্দের উপলক্ষ। ঈদের নতুন জামা নিয়ে আমরা অনেক মজা করতাম। তবে অনেক কিছুই তখন লক্ষ্য করতে শিখছি। ভীষণ কষ্ট নিয়ে দেখতাম, অনেকেরই ঈদের জামা নেই। এলাকার গরিব বাবা-মা ছিলেন যাঁরা, তাঁদের সন্তানরা কোনো নতুন জামা পায়নি। আমাদের ভেতর ঈদ যে আনন্দটা বয়ে নিয়ে আসত, সেটা ওদের জন্য নিয়ে আসত না। ওরা বিষণ্ন থাকত। ওদের কাতর চোখের সামনে নতুন জামা পরে বেড়াতে আমার ভীষণ সংকোচ হতো। আমার মনটাও বিষণ্ন হয়ে থাকত।
ঈদের স্মৃতির খোঁজে পেছনে তাকালে এই দুটোর পাশাপাশি আরেকটা স্মৃতি মনে পড়ে, সেটি শৈশবের। ঈদের দিন আমরা বাড়ির কাছের সেই করতোয়া নদীর তীরে যেতাম। সেখানে খেয়াঘাটে নৌকা নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন বারুয়া মাঝি। আমরা তাঁকে ডাকতাম কাকু। দশ-বারোজন শিশু বেড়াতে বেরিয়েছি। ঘাটে গিয়ে তাঁকে বলতাম– ‘কাকু, আমাদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াবেন?’ বারুয়া মাঝি তো খেয়া নিয়ে যাত্রী এপার-ওপার করতেন। এপারে এসে একসময় আমাদের তুলে নিতেন। কূলে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা বড়রা বলতেন, ‘বারুয়া, তুমি করছ কী! ওরা তো তোমাকে পয়সা দেবে না। আমরা তোমাকে পয়সা দেব। তুমি ওদের নিয়ে ঘুরছ কেন?’ শুনে বারুয়া মাঝি হাসতেন। বলতেন, ‘কী যে বলেন বাবা, ওরাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ।’ এমন করেই বলতেন বারুই মাঝি। বলতেন, ‘ওরাই কিন্তু বড় হলে আমাদেরকে দেখবে। দেশটা সুন্দর করবে, তাই না!’ শুনে সবাই হাসত। ‘আমি ওদেরকে দেশের মাটি দেখাব। এইটাই তো ওরা দেখতে চায়। নৌকায় করে একটু ঘুরতে চায়, ওই পারে যেতে চায়।’ বারুয়া মাঝি একটু অন্যরকম ছিলেন। তিনি এমন করেই ভাবতেন। আমরা ওপারে গিয়ে গাছে উঠতে চাইতাম, ফল-ফুল পাড়তে চাইতাম। ছোটখাটো কালো মানুষটা আমাদের সঙ্গ দিতেন। আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভীষণ আনন্দ পেতেন তিনি।
ঈদের দিন আমি মাকে বলতাম– ‘মা, গরুর মাংস রাঁধবে না? বারুয়া মাঝি খাবে না?’ মা বলতেন, ‘ও হিন্দু তো, গরুর মাংস খাবে না।’ আমি বলতাম, ‘তাহলে তুমি তাঁর জন্য মুরগি রেঁধো।’ মা আমার কথা রাখতেন। বারুয়া মাঝির জন্য আমি আমার বন্ধুরাসহ থালাভর্তি পোলাও, মুরগির মাংস নিয়ে যেতাম; সঙ্গে সেমাই, জর্দাসহ আরও যা যা হতো। আমার জীবনে বারুয়া মাঝির প্রভাব অসামান্য। তিনি আসলে আমার প্রথম জীবনের শিক্ষকদের একজন। আমি এই তিয়াত্তর বছর বয়সেও, আজও তাঁকে স্মরণ করি।
মন্তব্য করুন