ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রিয় শখ

শখের সঙ্গী

শখের সঙ্গী

জয়ার শখ পুরোনো জিনিস সংগ্রহ

--

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

ভালো লাগার উপকরণের কমতি নেই। তারপরও কিছু জিনিসের প্রতি তৈরি হয় অমোঘ আকর্ষণ। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকা, স্পর্শের মধ্য দিয়ে আনন্দ খুঁজে নেওয়া, যত্নে সাজিয়ে রাখা, সংগ্রহকালের স্মৃতি হাতড়ে ফেরা– এভাবেই প্রিয় কিছু জিনিস হয়ে ওঠে শখের সঙ্গী। সমকালীন কয়েকজন তারকার শখের সংগ্রহ নিয়ে এ আয়োজন। লিখেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ 


কুমার বিশ্বজিৎ
শুধু গান নয়, প্রকৃতিও দারুণভাবে সম্মোহিত করে রাখে নন্দিত কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎকে। সবুজের দিকে তাকিয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একইভাবে সবুজের মাঝে লাল-নীল-বেগুনি-হলুদ-কমলা-সাদা নানা রঙের বিন্যাস দেখতেও ভীষণ ভালো লাগে এই সংগীত পূজারির। তাই ইট-কাঠের এই শহরে থেকে চেনা-অচেনা বৃক্ষসারিতে ভরিয়ে দিয়েছেন নিজ বাড়ির উঠোন, সিঁড়ি, ঘরের আনাচে-কানাচে থেকে শুরু করে ছাদের প্রতিটি জায়গা। কুমার বিশ্বজিৎ জানান, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে যাচ্ছেন নানা জাতের ফল ও ফুলের গাছ। যেগুলো স্থান পেয়েছে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে রাখা বাহারি টবে। ছাদবাগানের সিঁড়িতেও রেখেছেন সবুজগালিচা। বারান্দার গ্রিলে ঝুলন্ত টবে রাখা হয়েছে অসংখ্য চারাগাছ; যার কোনো কোনোটি বর্ণিল ফুলের শোভায় ছেয়ে আছে। একই সঙ্গে মৌসুমি ফলের অনেক গাছও আছে তাঁর বাগানে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-দাদাসহ বংশের অনেকের দুর্বলতা ছিল ফুল-ফলের বাগানের প্রতি। তাঁদের মতো আমিও যে প্রকৃতিঘেঁষা হয়ে উঠব– এটাই শুধু জানা ছিল না। কিন্তু অনুভব করি, গাছপালা, সবুজ বনানীর প্রতি কতটা দুর্বলতা আছে। তাই দেরিতে হলেও একটু একটু করে বাড়িয়ে যাচ্ছি সবুজের সংগ্রহ। বাসার ছাদ থেকে শুরু করে বারান্দা এমনকি ঘরও সাজিয়েছি নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে, যার সবুজ আলোয় কাটানোর সময়ে মন ভরে থাকে অন্যরকম এক ভালো লাগায়।’

শাফিন আহমেদ
‘‘নব্বই দশকের শুরুতে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর শুরু হয় মাইলসের প্রথম বাংলা অ্যালবামের কাজ। ১৯৯১ সালে প্রকাশ পায় ব্যান্ডের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’। এই অ্যালবামের ফটোশুটের সূত্র ধরে ফ্যাশনে নতুন ট্রেন্ড নিয়ে আশার পরিকল্পনা করি। যদিও অ্যালবাম কাভারের ছবিতে আমার মাথায় হ্যাট ছিল না। তবে সে সময়ের কনসার্টগুলোয় হ্যাট পরে গান গাওয়া শুরু করি। সেই যে শুরু এরপর আর হ্যাট ছাড়া স্টেজে ওঠা হয়ে ওঠেনি। শুধু তাই নয়, আমার ফ্যাশনে অনেকেই প্রভাবিত হয়েছেন। যে কারণে পরবর্তী সময়ে অনেক ব্যান্ড সদস্যকে হ্যাট বা ক্যাপ করে কনসার্ট শুরু করতে দেখা গেছে। এখনও তা চোখে পড়ে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, হ্যাট ছাড়া শাফিন আহমেদের চেহারা এখন কেউ কল্পনাও করতে চায় না।’’ নিজের পোশাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে হ্যাট যোগ করা এ কথাগুলো বলেছেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সংগীতায়োজক শাফিন আহমেদ। এও জানালেন, এখনও ব্যবহার উপযোগী ৭২টি হ্যাট আছে তাঁর আলমারিতে। বিভিন্ন দেশ চষে বেড়িয়ে সংগ্রহ করেছেন নানা ধরনের হ্যাট। এই হ্যাট এখন আইকন হয়ে উঠেছে তাঁর। যে জন্য নিজের ইউটিউব চ্যানেলের লোগোও তৈরি করেছেন হ্যাটের ছবি দিয়ে।
হ্যাট ছাড়াও ঘড়ি ও চশমার প্রতি দুর্বলতা আছে শাফিন আহমেদের। সংগ্রহ করেছেন নানা ধরনের ঘড়ি ও চশমা। হ্যাটের মতো এগুলো বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও তার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে সেগুলো ব্যবহার করেন। এই শিল্পীর সংগ্রহশালায় আরও আছে শত শত কনসার্টের টিকিট। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই নিজের একক বা ব্যান্ডের কনসার্টের নয়। সংগৃহীত টিকিটগুলোর সবই মাইকেল জ্যাকসন, এরিক ক্ল্যাপটন, রোলিং স্টোন, পুলিশ, স্ট্রিং, বন জোভিসহ বিশ্বনন্দিত সব শিল্পী ও বিভিন্ন ব্যান্ডের।     

জয়া আহসান
জয়া আহসানের দুর্বলতা পুরোনো জিনিসের প্রতি। শুনলে অবাক হবেন, তাঁর মায়ের পুরোনো হাঁড়ি-পাতিল এখনও আগলে রেখেছেন। আরও আছে পুরোনো শাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক। জয়া জানান, এক সময় পোশাকের প্রতি দুর্বলতা ছিল। এখন শখ করে নানা ধরনের পোশাক কিনে থাকেন। তবে পুরোনো জিনিসগুলো শোপিস হিসেবে সংগ্রহে রাখতে ভালো লাগে জয়ার। যেখানেই ভিন্ন ধরনের জিনিস দেখেন, সেটা মাটি-কাঁসা-পিতল-টিন-কাঠ যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন, নিজের করে রাখার ইচ্ছা জাগে তাঁর। সুযোগ পেলেই তা সংগ্রহ করেন। এসব পুরোনো জিনিস হাতড়ে একেকটা কাল মনের পর্দায় তুলে আনার ভেতর অন্যরকম এক আনন্দ আছে। শখের যে কোনো জিনিস স্পর্শ করলেও আলাদা এক ধরনের অনুভূতি কাজ করে তাঁর। শুধু জড় বস্তু নয়, প্রাণ এবং প্রাণীর প্রতিও জয়ার ভালোবাসা এতটুকু কম নয়। পথকুকুর থেকে শুরু করে গাছপালার প্রতি আছে তাঁর গভীর মমতা। বাড়ির ছাদটা তাই ভরিয়ে রেখেছেন দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা ফুল-ফল আর বুনোগাছে।  

মাহিয়া মাহি
মাহিয়া মাহির শখের সংগ্রহটা একটু অন্যরকম। এখনও মনের মধ্যে যে একজন শিশু বাস করে, তার প্রমাণ মেলে এই অভিনেত্রীর মিনিয়নের সংখ্যা থেকে। মিনিয়ন হলো ‘ডিসপেকেবল মি’ অ্যানিমেশন ছবির এক আলোচিত চরিত্র; যা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা আকৃতির খেলনা। আর সেই খেলনা মিনিয়ন একটি-দুটি নয়, মাহির সংগ্রহে আছে পাঁচশর বেশি! তাও আবার নানা আকৃতির, নানা অঙ্গভঙ্গির। এ ছাড়াও মাহির আছে মিনিয়নের আদলে তৈরি পানির পট ও মিনিয়ন ব্যাগ। মাহি বলেন, ‘মিনিয়নগুলো হাতে নিলেই মনে ছেলেমানুষি ভর করে। শৈশবের আনন্দটা নতুন করে ফিরে পাই। তাই দেশের বাইরে যেখানেই যাই মিনিয়ন সংগ্রহ করা চাই-ই চাই।’ মিনিয়ন ছাড়াও মাহির শখ বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্পশেড, মোমের শোপিস, ঝাড়বাতি তৈরি ও সংগ্রহ করা।  

ভাবনা
অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা তাঁর সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন নানা রকম হাতি দিয়ে। কী চমকে গেলেন! জ্যান্ত হাতি নয়, খেলনা হাতির প্রতিই এই অভিনেত্রীর আছে ভীষণ ভালো লাগা। পাথর থেকে শুরু করে মাটি, কাঠ ও কাপড়ের তৈরি অসংখ্য হাতি আছে তাঁর সংগ্রহে। ভাবনা বলেন, ‘কবে, কীভাবে হাতির প্রতি এই দুর্বলতা তৈরি হয়েছে ঠিক বলতে পারব না। শুধু বলতে পারি, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, হাতি নামক প্রাণীটি আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। তাই শুধু খেলনা নয়, হাতির ভাস্কর্য, মূর্তি খুঁজে খুঁজে ঘর ভরিয়ে ফেলেছি।’ হাতির পাশাপাশি চিত্রকলার প্রতিও এক ধরনের আকর্ষণ আছে ভাবনার। ভিনসেন্ট ভ্যান ঘগ, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো বিশ্বনন্দিত চিত্রশিল্পী থেকে শুরু করে গণেশ পাইন, মানজিৎ বাওয়াসহ আরও বেশ কিছু শিল্পীর কপি ও আসল পেইন্টিং নিজ সংগ্রহে রেখে দিয়েছেন এই মডেল ও অভিনেত্রী।

তানজিন তিশা
তানজিন তিশার মোবাইল ফোনপ্রীতি চোখে পড়ার মতো। তবে মোবাইল ফোন নয়, তিনি ছবি তুলতে ও সংগ্রহে রাখতে ভালোবাসেন। বেড়ানো তাঁর নেশা। সে সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে যে প্রান্তেই ছুটে যান, সেলফি ও ক্যামেরায় ফটো তোলা তাঁর চাই-ই চাই। তিশার কথায়, ‘সময় মুঠো গলিয়ে বেরিয়ে যায়। ধরে রাখার সুযোগ নেই। তাই হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো ধরে রাখতেই যখন-তখন ছবি তুলি। সেগুলো জমিয়ে রাখা আর বারবার দেখার মধ্যে যে আনন্দ তা অন্য কিছুতে খুঁজে পাই না। ডিজিটাল ছাড়াও ছবি প্রিন্ট করে রাখতেও ভালো লাগে। কারণ একটি ছবি জীবনের একটি অধ্যায় সামনে তুলে আনে। হারিয়ে ফেলা সময়টা নতুন করে চলচ্চিত্রের মতো মনের পর্দায় তুলে আনা যায় এসব ছবির মধ্য দিয়েই।’   

সজল
অডিও ক্যাসেট পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। চাইলেও খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু অভিনেতা আবদুর নূর সজলের শেলফের দিকে তাকালে, কথা সত্যি বলে মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ তাঁর সংগ্রহশালায় যে সংখ্যক অডিও ক্যাসেট চোখে পড়ে, তা অনেক দোকানেও দেখা যায় না। সজল বলেন, ‘আমি অন্য জগতের মানুষ হলেও সংগীতের প্রতি আছে অন্যরকম এক ভালো লাগা। তবে গান সংগ্রহের জন্য ক্যাসেট বেছে নিয়েছি সবসময়। ছোটবেলা থেকেই অডিও ক্যাসেটের প্রতি অন্যরকম এক আকর্ষণ আমার। তাই যখনই প্রিয় কোনো শিল্পীর ক্যাসেটে চোখে পড়েছে, তা কিনে রেখেছি। এভাবেই ক্যাসেটে ভরে গেছে আমার শেলফ। এখন অডিও ক্যাসেট পাওয়া যায় না, তারপরও কোথাও চোখে পড়লে তা সংগ্রহ করি। কেউ বিক্রি করতে না চাইলেও চেয়ে নিতেও সংকোচ করি না।’

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×