হলিউড
অস্কার না পাওয়া তারকা

--
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
অভিনয়ের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘অস্কার’ বা একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। চলচ্চিত্র শিল্পের জমজমাট এই আসরে যাঁরা জয়ী হন, তাঁরা সাফল্যের হাসি হাসেন। যাঁরা একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েও বঞ্চিত হন, তাঁদের কী প্রতিক্রিয়া? অস্কার না পাওয়া হলিউডের এমনই কয়েকজন তারকাকে নিয়ে লিখেছেন সাঈদ নিশান
টম ক্রুজ
মার্কিন অভিনেতা টম ক্রুজ তাঁর অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে কয়েক দশক ধরে হলিউড চলচ্চিত্রে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন। ১৯৮১ সালে ‘এন্ডলেস লাভ’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর কমেডি ফিল্ম ‘রিস্কি বিজনেস’ [১৯৮৩] ও অ্যাকশন ফিল্ম ‘টপ গান’ [১৯৮৬]-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি অর্জন করেন। সে বছর ‘টপ গান’ সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ‘দ্য কালার অব মানি’, ‘রেইন ম্যান’ ও ‘বর্ন অন দ্য ফোর্থ অব জুলাই’ ছবিতে তাঁর অভিনয় সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়ে।
নব্বইয়ের দশকে হলিউডের একজন নেতৃস্থানীয় তারকা হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার মধ্যে রয়েছে– ‘এ ফিউ গুড মেন’, ‘দ্য ফার্ম’, ‘ইন্টারভিউ উইথ দ্য ভ্যাম্পায়ার’, ‘জেরি ম্যাগুয়ার’ ও ‘ম্যাগনোলিয়া’। এ ছাড়া তিনি সায়েন্স ফিকশন এবং অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে একজন অ্যাকশন তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ‘মিশন: ইমপসিবল’ চলচ্চিত্রের ছয়টিতেই তিনি ইথান হান্ট চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ঘরানার তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে– ‘ভ্যানিলা স্কাই’, ‘মাইনরিটি রিপোর্ট’, ‘দ্য লাস্ট সামুরাই’, ‘কোলাটারাল’, ‘ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস’, ‘নাইট অ্যান্ড ডে’, ‘জ্যাক রিচার’, ‘এজ অব টুমরো’ ও ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’ [২০২২]। ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’ তাঁর অভিনীত সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র। টম ক্রুজ একটি অনারারি পালমে ডি’অর এবং তিনটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারসহ অসংখ্য প্রশংসা অর্জন করেছেন। টম ক্রুজ দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে সেরা অভিনেতা হিসেবে চারবার একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেলেও ‘অস্কার’ এখনও তাঁর কাছে সোনার হরিণ হয়ে আছে।
জনি ডেপ
জনি ডেপ হলিউড চলচ্চিত্রের একটি অপরিহার্য নাম। ব্যতিক্রমধর্মী অভিনয়ের জন্য তিনি সব সময় সমালোচক ও চলচ্চিত্রামোদীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। আশির দশকে টিভি সিরিজ ‘জাম্প স্ট্রিট’-এর মাধ্যমে ডেপ তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। এরপর ‘নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রিট’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ‘এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস’ [১৯৯০] চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র অভিনয় করে তিনি সবার নজর কাড়েন। জনি ডেপ অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো– ‘স্লিপি হলো’, ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি’, ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘র্যাঙ্গো’, ‘ফ্রম হেল’, ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান [সিরিজ]’, ‘ক্রাই বেবি’, ‘দ্য ট্যুরিস্ট’, ‘দ্য প্রফেসর’, ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মেক্সিকো’ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের পিপল ম্যাগাজিন তাঁকে ২০০৩ এবং ২০০৯ সালে সবচেয়ে আবেদনময় জীবন্ত পুরুষ নির্বাচিত করে। ২০১২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে তিনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তালিকাভুক্ত হন। জনি ডেপ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনবার অস্কার মনোনয়ন পেলেও এখন পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় এ পুরস্কার জয় করতে পারেননি ‘ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো’ খ্যাত এই অভিনেতা।
লরা লিনি
হলিউড অভিনেত্রী লরা লিনি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়। থিয়েটার পরিবারে জন্ম নেওয়া লরা লিনি ব্রডওয়ে মঞ্চে টনি পুরস্কারের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচটি মনোনয়ন পেয়েছেন। সেরা টিভি অভিনেত্রী হিসেবে পাঁচবার মনোনয়নসহ চারবার এমি পুরস্কার জিতেছেন। লরা লিনি ১৯৯২ সালে ‘লরেঞ্জোস অয়েল’ চলচ্চিত্র দিয়ে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো– ‘প্রাইমাল ফিয়ার’, ‘দ্য ট্রুম্যান শো’, ‘মিস্টিক রিভার’, ‘লাভ অ্যাকচুয়ালি’, ‘দ্য স্কুইড অ্যান্ড দ্য হোয়েল’, ‘দ্য ন্যানি ডায়েরিজ’, ‘সালি’, ‘টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টলস : আউট অব দ্য শ্যাডোস’, ‘লাভ লেটারস’ ইত্যাদি। চলচ্চিত্রেও লরা লিনি অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে দু’বার গোল্ডেন গ্লোব ও একবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। এ ছাড়া সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার মনোনীত হয়েও ভাগ্য সহায় হয়নি। লরা লিনি ‘অস্কার’-এর দ্বারপ্রান্তে গিয়েও খালি হাতে ফিরে এসেছেন।
মিশেল ফাইফার
১৯৮০ সালে ‘দ্য হলিউড নাইটস’-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মার্কিন অভিনেত্রী মিশেল ফাইফারের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ‘গ্রিস ২’ তাঁর ক্যারিয়ার নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ‘দ্য উইচস অব ইস্টউইক’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি তারকা হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া মিশেল ফাইফার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হলো– ‘স্কারফেস’, ‘ব্যাটম্যান রিটার্নস’, ‘নিউ ইয়ার্স ইভ’, ‘স্টারডাস্ট’, ‘ওয়ান ফাইন ডে’, ‘আই অ্যাম স্যাম’, ‘ফ্র্যাঙ্কি অ্যান্ড জনি’, ‘মাদার’, ‘দ্য এজ অব ইনোসেন্স’, ‘লাভ ফিল্ড’, ‘চেরি’ ইত্যাদি। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একটি গোল্ডেন গ্লোব, একটি বাফটা, একটি রৌপ্য ভল্লুক ও একাধিক ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এ ছাড়া সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থেকেও সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। যার জন্য ‘অস্কার’ এখনও মিশেল ফাইফারের কাছে অধরাই রয়ে গেছে।
এডওয়ার্ড নর্টন
এডওয়ার্ড নর্টন অভিষেক ছবি ‘প্রাইমাল ফিয়ার’ দিয়েই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন এবং তাবৎ সিনেমাপ্রেমীর দৃষ্টি কাড়েন। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে অ্যারন স্ট্যাম্পলার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে অস্কার পুরস্কারের মনোনয়নসহ গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটা পুরস্কার অর্জন করেন। এডওয়ার্ড নর্টন অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ছবি হলো– ‘ফাইট ক্লাব’, ‘আমেরিকান হিস্ট্রি এক্স’, ‘দি ইনক্রেডিবল হাল্ক’, ‘বার্ডম্যান’, ‘কিংডম অব হেভেন’, ‘দি অ্যাভেঞ্জার্স’, ‘ফ্রিদা’, ‘স্টোন’, ‘ব্যান্ডো’ ইত্যাদি।
তিনি অভিষেক ছবি ‘প্রাইমার ফিয়ার’ ছাড়াও ‘আমেরিকান হিস্ট্রি এক্স’ ও ‘বার্ডম্যান’ ছবির জন্য সর্বমোট তিনবার অস্কার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
রবার্ট ডাউনি
‘আয়রন ম্যান’ খ্যাত রবার্ট ডাউনি জুনিয়র আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শিল্পে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রবল প্রতাপে অভিনয় করে চলেছেন। তাঁকে হলিউডের অন্যতম প্রতিভাধর এবং বহুমুখী অভিনয়শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে ফোর্বস সাময়িকী তালিকায় শীর্ষস্থানে মর্যাদা পেয়েছেন। ১৯৭০ সালে বাবার পরিচালিত ‘পাউন্ড’ ছবিতে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে ডাউনির আবির্ভাব ঘটে। ১৯৯২ সালে ‘চ্যাপলিন’ ছবির মাধ্যমে তাঁর পেশাদার অভিনয় জীবনের শুরু হয়। এই ছবিতে কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য প্রথমবার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে [অস্কার] মনোনীত হন এবং সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে বাফটা পুরস্কার অর্জন করেন। রবার্ট ডাউনির উল্লেখযোগ্য ছবি হলো– ‘চ্যাপলিন’, ‘জোডিয়াক’, ‘আয়রন ম্যান’, ‘ট্রপিক থান্ডার’, ‘শার্লক হোমস’, ‘শার্লক হোমস : আ গেম অব শ্যাডোস’, ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’, ‘আয়রন ম্যান ৩’, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা : সিভিল ওয়ার’ ইত্যাদি। রবার্ট ডাউনি তাঁর সুঅভিনয়ের জন্য দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে দু’বার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছেন।
- বিষয় :
- হলিউড