ঢাকা রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

দেখা থেকে লেখা

তাহাদের কিছু কথা

তাহাদের কিছু কথা

ধ্রুব এষ

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

কাজী আনোয়ার হোসেন

ওবায়দুল গনি চন্দন ছড়ার পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছে। খুবই পছন্দ হলো কাজীদার। বই প্রকাশ করবেন। আমার ডাক পড়ল তিনতলায়।
রহস্যপত্রিকার অফিস দুইতলায়। কাজীদা বসেন তিনতলায়। চন্দনের পাণ্ডুলিপির কথা বললেন, ‘খুব ভালো লিখেছে ছেলেটা। প্রজাপতি থেকে বই করব। এই বইমেলায়, ফেব্রুয়ারিতে। প্রচ্ছদ তুমি মার্চের এক দুই তারিখে দিলেই হবে।’
আমি প্রথম বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারলে কী, কাজীদার সামনে তো আর হো হো করে হেসে উঠতে পারি না।
প্রচ্ছদটা পরদিনই বানিয়ে কাজীদাকে দেখিয়েছিলাম।
বইয়ের নাম ‘আজ নয় কাল।’
আমাদের চন্দন বড় অকালে প্রয়াত হয়েছে।
 
বুলবুল চৌধুরী

বুলবুল ভাইয়ের হাতের লেখা অতি বিখ্যাত। প্রায় হিব্রু হরফে লেখা বাংলা। বোঝে কার সাধ্য? রুদ্রাক্ষ রহমান একবার খেপেছিল, সেই কম্পোজিটরের ইন্টারভিউ করবে− বুলবুল ভাইয়ের লেখা কম্পোজ করে যে।
পুরানা পল্টন এলাকায় আমি বহু বছর ধরে আছি। তখন থাকি ২৪ পুরানা পল্টন লাইনে। আমি বাসায় নাই এক সন্ধ্যায়, বুলবুল ভাই এসে চলে গেছেন। দরজার নিচ দিয়ে স্লিপ রেখে গেছেন। পড়ে এক বুবুচৌ ছাড়া আর কিছু উদ্ধার করতে পারলাম না।
দুই দিন পর দেখা, স্লিপটা লেখক সাহেবের হাতে দিয়ে বললাম, ‘কী লিখে গেছেন?’
বুলবুল ভাই তার ভাষায় ‘নিরিখ’ করে দেখলেন স্লিপটা। চার ছয় সেকেন্ড দেখে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বললেন, ‘বুঝতারি না মিয়া।’
 
মোহাম্মদ কিবরিয়া ও কাজী আবদুল বাসেত

চারুকলা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। গ্যালারিতে দুই প্রবীণ শিল্পী শিক্ষক বাসেত স্যার এবং কিবরিয়া স্যার ঢুকেছেন।
আর গ্যালারিতে আছে এক সুনীল। আমাদের সুনীল হাওলাদার। দুই প্রবীণ তাকে খেয়াল করেনি। পেইন্টিং দেখছেন ছাত্রদের। ইট ভাঙা শ্রমিকদের নিয়ে এক ছাত্র পেইন্টিং করেছে, পেইন্টিংয়ের শিরোনাম দিয়েছে ‘ওরা কাজ করে’। দেখে দুই প্রবীণের কথোপকথন :
‘দেখেছ ওরা কাজ করে!’
‘এঁ-এ-এ। ওরা কাজ করে। আর আমরা … ছিঁড়ি।’

মাসুক হেলাল ও উত্তম সেন

২৪ পুরানা পল্টন লাইনের ঘটনা।
সন্ধ্যায় আমরা ছাদে আড্ডা দিতাম। দশজন, তেরোজন, উনিশজন, একুশজন। সেই সন্ধ্যা মাত্র হয়েছে। মাসুক ভাই আর উত্তমদা ছাড়া আর কেউ ছাদে অবতীর্ণ হয়নি। বিখ্যাত প্রতিকৃতি শিল্পী মাসুক হেলাল, প্রচ্ছদ শিল্পী তরল সে ... ইয়ে উত্তম সেন। আমি সব সময় মনে করি আমি এদের লোকাল গার্ডিয়ান। এরা যাতে বেপথু না হন দেখেশুনে রাখার দায়িত্ব আমার। কিন্তু এরা কি আমাকে ভয় পান?
‘মাসুক ভাই!’
‘কও ধ্রুব।’
‘আপনি কি আমারে ভয় পান?’
‘তোমারে? হ্যাঁ ভয় পাই।’
‘কেন বলেন তো?’
‘এই যে ধরো কাজ নিয়া তুমি কী কও না কও।’
গ্রহণযোগ্য জবাব।
‘তরলদা আপনি?’
তরলদা কথা না বলে নিঃশব্দে মাথা দোলালেন। হ্যাঁ, ভয় পান। তাই বলে এত! কেন আর জিজ্ঞেস করতে গেলাম না।
উত্তমদাকে আমরা ডাকি তরলদা।
 
হুমায়ূন আহমেদ

‘তুমি কি পিঁপড়া আঁকতে পারো?’
হুমায়ূন স্যার বললেন।
পারি।
‘আলমগীর তো বলল এখনকার আর্টিস্টরা ভালো ড্রয়িং করতে পারে না।’
আলমগীর মানে আলমগীর রহমান। আমাদের আলমগীর ভাই। বিখ্যাত প্রকাশক এবং সজ্জন ব্যক্তি। − যা বলেছেন হয়তো অভিজ্ঞতা থেকে। কিন্তু পিঁপড়া আঁকতে হবে কেন?
স্যার একটা বই লিখেছেন। ছোটদের উপন্যাস ‘পিপলি বেগম।’ পিঁপড়াদের গল্প।
পিঁপড়া আঁকব! আমি আঁকার দিকেই গেলাম না। ডিম রং করে পিঁপড়া বানিয়ে ছবি তুলে প্রচ্ছদটা করলাম। স্যারের খুবই পছন্দ হলো।
তবে আমি পিঁপড়া আঁকতে পারি না।
 
শওকত ওসমান

শওকত দাদার বাসায় গেছি বহুবার। শওকত দাদা তখন ‘দৈনিক আজকের কাগজ’-এ ‘শেখের সম্বরা’ লিখতেন। পড়তাম। সেদিন পড়িনি। পত্রিকাই দেখিনি। প্রচ্ছদ দেখাতে গেছি শওকত দাদাকে।
‘ভ্রাত আজকের সম্বরা পড়েছো?’
‘না দাদা পড়তে পারিনি। পত্রিকা দেখি নাই।’
‘আমি তবে তোমাকে দিচ্ছি। ফটোকপি করে রেখেছি বুঝেছ!’
ফটোকপি দিতে গিয়েও দিলেন না।
‘আমি তোমাকে পড়ে শোনাই ভ্রাত।’
‘জি দাদা।’
‘শোনো−
প্রশ্ন করি ধা ...।’
পস।
‘প্রশ্ন করি ধা।’
রিপিট। পস।
‘তিলকে তাল করে
তালকে তিল করে
এর নাম−।’
পস।
তিলকে তাল করে, তালকে তিলকে তাল করে, কী?
‘এর নাম ব্রা।’ বলে শওকত দাদা খুব একজন পাজি বাচ্চার মতো হাসতে থাকলেন।
 
আহসান হাবীব

কৌতুক কারা বানায়?
প্রথম কেউ একজন তো বানায়।
সেরকম একজন মানুষকে দেখার আশা ছিল।
কৌতুকের দেবতা (!) আশা পূরণ করেছেন।
‘উন্মাদ’-সম্পাদক কার্টুনিস্ট, লেখক আহসান হাবীব, আমাদের শাহীন ভাই। পাবলিক লাইব্রেরির সিঁড়িতে একদিন তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি আমরা কয়েকজন, দেখা গেল মোকারম আসছে। আমাদের প্রকৃতিবিদ বন্ধু মোকারম হোসেন।
শাহীন ভাই হঠাৎ বললেন, ‘মোকারমের বৈজ্ঞানিক নাম কী বলো তো?’
আমরা তবদা, হতচকিত। মোকারমের বৈজ্ঞানিক নাম!
শাহীন ভাই ‘সিরিয়াসলি’ বললেন ‘দ্বিজেন শর্মা।’
মোকারমের বৈজ্ঞানিক নাম দ্বিজেন শর্মা।

আরও পড়ুন