ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভিনদেশি গল্পের ছায়ায় চলছে দেশি ধারবাহিক

ভিনদেশি গল্পের ছায়ায় চলছে দেশি ধারবাহিক

এমদাদুল হক মিলটন

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩ | ১২:০৬

ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালগুলোর কাহিনি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কোনো কোনো সিরিয়ালে অবাস্তব গল্প দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা হয়। যদিও সাধারণ দর্শক তা দেখে মজা পান। তারা অতটা বিচার-বিশ্লেষণে যান না। ধীরে ধীরে সিরিয়ালগুলোর গল্প এতটাই উদ্ভট হচ্ছে, তাতে হতবাক দর্শক। আমাদের দেশের অনেক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে কলকাতার আদলে সিরিয়াল। অনেক সিরিয়াল নির্মাণের দায়িত্বও থাকে কলকাতার নির্মাতাদের। ফলে দেশি ধারাবাহিকে ভিনদেশি ছায়া সহজেই চোখে পড়ে। পরকীয়া, নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক, বউ-শাশুড়ির ঝগড়া, পারিবারিক কলহ, কোন্দল– এ বিষয়গুলোকে উপজীব্য করে দর্শককে টানার খুবই কৃত্রিম ও বিকৃতির চেষ্টা চলছে। দেখা যায়, পাত্রপাত্রীর শুধু সেই সেটের ভেতরেই একে অপরের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত। দর্শককে আকর্ষণ করার জন্য নেতিবাচক কিছু বিষয়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানেই শেষ নয়, দেশের অনেক সিরিয়ালের গল্প আনা হচ্ছে কলকাতা থেকে। গ্লোবাল টিভির জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৫০০ পর্বের ডেইলি সোপ ‘আনারকলি’। এরই মধ্যে এর প্রমো প্রচার শুরু হয়েছে। আগামী মাসে এর প্রচার শুরু হবে। এ দীর্ঘ ধারাবাহিকের গল্প লিখেছেন ভারতের নির্মাতা রশীদ ইকবাল। পরিচালনা করেছেন এ দেশের নির্মাতা ইসমত আরা চৌধুরী শান্তি। তিনি বলেন, ‘চারটি পরিবারের গল্প নিয়ে এ ধারাবাহিকের কাহিনি। লিখছেন ভারতীয় এক লেখক। আমার কালচারে এর সংলাপ সংশোধন করেছি। ভারতীয় সিরিয়ালের মতো যাতে না হয় এ কারণে সেট ফেলে কাজ করিনি। ব্যবহার করেনি কোনো হাউসের ফার্নিচার।’

গুলশান এভিনিউ ধারবাহিক নাটকের একটি দৃশ্য

 দুই মায়ের জীবন, তাদের বোঝা-পড়া, মান-অভিমানের লড়াই নিয়ে গ্রিন টিভিতে শিগগিরই প্রচার শুরু হবে ধারাবাহিক নাটক ‘বালিঘর’। সততা আর আদর্শ নাকি অন্যায় আর মিথ্যার মায়াজাল? মধুর ভালোবাসা নাকি হিংসা আর প্রতিশোধের আগুন? কার হবে জয়– এমন স্লোগানে এর প্রমো প্রচার চলছে এখন। এটি পরিচালনা করছেন কলকাতার নির্মাতা বিজয় জানা। লিখেছেন কলকাতার এক লেখক। এদিকে দীপ্ত টিভিতে চলছে দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘জবা’। বৈশাখী টিভিতে প্রচার হচ্ছে ‘বউ-শাশুড়ি’। অনেকেই বলছেন, ধারাবাহিক দুটিতে কলকাতার সিরিয়ালের ছায়া রয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি চ্যানেলে কলকাতার লেখকের লেখা নাটক নিয়ে সিরিয়াল নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এ দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী বলেন, ‘ইদানীং ডেইলি সোপে দেখছি, স্টার জলসা টাইপের মেকিং। বিষয়টি নিয়ে খুবই হতাশ। আমি যে দুই-তিনটি ডেইলি সোপে কাজ করছি প্রতিটির গল্প কলকাতা থেকে এসেছে। এটি কেন? আমাদের দেশের লেখকরা কী করছেন বুঝতে পারছি না। এ দেশের লেখকেরই বা কী কাজ? দেশের বাইরে থেকে স্ক্রিপ্ট আনতে হবে কেন? বাইরে স্ক্রিপ্টের নাটকগুলো প্রচারের ফলে আমাদের জনজীবনে এর প্রভাব পড়ছে। বাইরের ক্রিপ্ট আমাদের সামাজিকতার নয়। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আরেকজনের জামাইয়ের পেছনে লেলিয়ে দেওয়া, বউ-শাশুড়ির তুমুল ঝগড়া– এসব ভালো লাগে না। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। এমনও দেখা যায়, হিন্দি গল্পের বাংলা ভার্সন হচ্ছে। শুধু ট্রান্সলেট। বাংলা নাট্যরূপ না দেওয়ার কারণে আমাদের শিল্পীদের সংলাপ দিতে অসুবিধা হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের মতো করে আমরা সংলাপ দিই; যা বিরক্তিকর। সংলাপ বলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। চরিত্র নিয়ে ভাবার সময় কমে যাচ্ছে।’

বাংলাভিশনে গুলশান অ্যাভিনিউ নাটকটি প্রচার হয়েছে বহু বছর। একই চ্যানেলে ২০২১ সালের শেষের দিকে শুরু হয় ‘গুলশান অ্যাভিনিউ-সিজন টু’। দর্শকের সাড়া না পাওয়ায় ২০০ পর্বের পরই এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। জানা গেছে, দীপ্ত টিভিতে ‘দেনা পাওনা’ নামে শিগগিরই নতুন একটি সিরিয়াল পরিচালনা করতে যাচ্ছেন কলকাতার একজন নির্মাতা। নাম না প্রকাশ শর্তে এক নির্মাতা বলেন, ‘ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা ইন্ডিয়ার স্ক্রিপ্ট আনি। এ সিরিয়ালের প্রতি দর্শকদের আলাদা মোহ আছে। আমরা মনে করি, সেই ধাঁচের সিরিয়াল করলে দর্শক বেশি পাওয়া যাবে। এটি সম্পর্ণ ভুল ধারণা। ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসা স্ক্রিপ্টের নাটক দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ইন্ডিয়ার সিরিয়ালগুলোর স্ক্রিপ্ট একেবারে প্রফেশনালি করা হয়। একটু খেয়াল করে দেখবেন সেখানের নাটকে বাইরের কোনো দৃশ্য নেই। সেট ফেলে বছরের পর বছর একটি সিরিয়ালের দীর্ঘ গল্প চলে যাচ্ছে।’ নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘বিদেশি নির্মাতা ও লেখক এ দেশের নাটক নির্মাণ ও বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। শিগগিরই সংগঠন থেকে এ নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কথা ভাবছি। বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর নিজেদের অবস্থাই নাজুক। তারা এখন চেষ্টা করছে কত কম টাকায় একটি প্রডাকশন তৈরি করা যায়। এ দেশের প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা ও লেখককে দিয়ে তাদের নাটক বানাতে গেলে অনেক টাকা খরচ পড়ে। যে জন্য তারা বিদেশি নির্মাতা ও লেখকদের দিকে ঝুঁকছেন। বিদেশি নির্মাতা এসে কাজ করতেই পারেন। নিয়মমাফিক আসতে হবে। তাতে আমাদের সমস্যা নেই। তাঁকে আমাদের সমিতিতে এসে মেম্বারশিপ নেওয়া উচিত। তাঁর ওয়ার্কপারমিট থাকতে হবে।’ 

আরও পড়ুন

×