নায়কের পাশাপাশি সিনেমার প্রাণ হচ্ছে খলনায়ক। যার উপর ভর করে এগোয় সিনেমা। গল্প বাঁক নেয় নানা দিকে। তবে সিনেমার পর্দায় নায়কের ভাগ্যে দর্শকদের তালি জোটলেও  খলনায়কের ভাগ্যে প্রতি মুহূর্তে জোটে গালি। অবশ্য পর্দায় যে যত বেশি গালি খাবে ধরে নিতে হবে, সে তত সফল খলনায়ক। ঢাকায় ছবিতে এমন অনেক খলনায়ক ছিলেন যারা খালি খাওয়ার পথ ছেড়ে বেছে নিয়েছিলেন তালি পাওয়ার পথ। মান খলনায়ক থেকে হয়ে উঠেন নায়ক। এমন ক'জন তারকা নিয়েই আজকের আয়োজন। যারা খলনায়ক দিয়ে শুরু কররেও পরবর্তীতে নায়ক হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন দর্শকদের কাছে

জসিম

জসিমকে  সব দর্শকরা নায়ক হিসেবেই চিনেন। ঢাকাই ছবির এক সময়ের সুপারস্টার নায়ক ছিলেন তিনি। সত্তরের দশকে তার নাম শুনেই দর্শকরা সিনেমা হলে ছুটে যেতেন। কিন্তু পর্দায় তার যাত্রা হয় খলনায়ক হিসেব। তার সময়ে তিনি দাপুটে ভিলেনই ছিলেন। সিনেমায় নায়কের বরাবর ছিলেন তিনি। তাই তো পোস্টারে নায়কের সমানে সমান তার ছবিটিও শোভা পেতো। জসিমের এই দাপটের পেছনে ছিলো অসাধারণ অভিনয়।  জমিস যখন ভয়ংকর অভিনয় করতেন তখন মনে হতো তার চেয়ে ভয়ংকর কেউ আর হতে পারেনা।  হুট করেই ভয়ংকর জসিমকে নতুন জীবন দিলেন সুভাষ দত্ত। ‘সকাল সন্ধ্যা’ মাধ্যমে শুরু হয় নতুন জসিমের যাত্রা। এরপর দেলোয়ার জাহান ঝন্টু জসিমকে নিয়ে শুরু করেন মিশন। একের পর এক ছবি বানাতে থাকেন তিনি। নিজের ব্যানারে আগে ভিলেন হলেও পরে নায়ক হয়ে অভিনয় করতে থাকেন জসীম। ভিলেন পরিচয়ের মতো নায়ক পরিচয়ে দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেন। অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য তার জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে উঠে। যা আজও অম্লান।

ড্যানি সিডাক

মার্শাল আর্টের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ড্যানি সিডাক। পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের হাত ধরেই ভিলেন হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ভিলেন হিসেবে কুংফু কারাতির জন্যই জনপ্রিয়তা পান খল অভিনেতা হিসেবে। আরেক কুংফু কিং নায়ক রুবেলের সঙ্গে তার খল ও নায়কের দারুন একটা জুটিও গড়ে উঠে। হুট করেই এ অভিনেতার পর্দার জীবন বদলে যায়। পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু তাকে নায়ক হিসেব সামনে দাঁড় করান। ‘বনের রাজা টারজান’ ছবিতে পেশিবহুল শরীর প্রদর্শন করে হয়ে উঠেন জনপ্রিয় নায়ক। এরপর একে একে ‘গরীবের রাজা রবিন হুড’, ‘চাকরানি’, ‘শক্তির লড়াই’ ইত্যাদি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। 

ডিপজল

মনোয়ার হোসেন ডিপজল শুরুতে নায়কই হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে। বার  বার চেষ্টা করেও নায়ক হিসেবে পরিচিতি পাননি শুরুতে। পরে কাজী কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘তেজী’ ছবির মাধ্যমে হয়ে উঠেন কুখ্যাত ভিলেন। এবার তিনি পরিচিত হন। পুরো দেশ তাকে চেনে নেয় নতুন ভিলেন হিসেবে। সে সময় ডিপজলের চাহিদা তৈরি হয়ে তুঙ্গে। ভিলেন হিসেবে এতো চাহিদার নজির আগেও দেখা যায়নি। ডিপজলের নামেই মুক্তি পায় ছবি। ব্যবসাও করে। তবে সে সময়টা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ভর করে। ডিপজলও হয়ে উঠেন অশ্লীল সিনেমার ভিলেন। হতে থাকেন সমালোচিত। কিছুদিন আবার চলার রাস্তা মোড় নেয় ডিপজলের। শুরু করেন ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয়। একে একে ‘কাজের মানুষ’, ‘রিক্সাওয়ালার ছেলে’, ‘গরীবের বোন’, ‘আমার পৃথিবী তুমি’, ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ নেতিবাচক চরিত্রে তথা নায়ক হিসেবেই দেখা যায় তাকে।  

তাসকিন রহমান

এই প্রজন্মের অভিনেতা তাসকিন রহমান। তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি দীপংকর দীপন পরিচালিত  ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ছবিটির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হলেও প্রথম ছবিটিতে ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হন। এ ছবিতে সন্ত্রাসীর চরিত্রে অভিনয় রাতারাতি তারকা পরিচিতি এনে তাসকিনকে। সেই শুরু। কিন্তু সিনেমা ক্যারিয়ার শুরু হয় তাসকিনের নায়ক হিসেবেই।  ভাই তানিম রহমান অংশুর ‘আদি’ ছবিতে নায়ক হয়েই ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। ছবিটি আটকে যাওয়ার পর ঢাকা অ্যাটাকে খল অভিনেতা হিসেবেই অভিষেক হয়।তবে তিনি সেই  ভিলেন পরিচয়ে আটকে নেই। উত্তম আকাশ পরিচালিত 'বয়ফ্রেন্ড' ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিষেক হয় তার। মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘যদি একদিনে’ তিনি দুই নায়কের একজন হয়েই অভিনয় করেন তাসকিন। এখন নায়ক এবং খলনায়ক দুই ভূমিকাতেই দেখা যায় তাকে।