- বিনোদন
- যে ৫সিনেমা দেখার পরামর্শ দিলেন ‘মনপুরার’ পরিচালক
যে ৫সিনেমা দেখার পরামর্শ দিলেন ‘মনপুরার’ পরিচালক

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা পৃথিবীর মতো আমাদের দেশেও জনজীবনে নেমে এসেছে এক ধরনের স্থবিরতা। ঘরে বসে থেকে অনেকেই হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছেন। তারা এমন দিনে দেখতে পারেন ক্লাসিক সিনেমা। আজ ৫টি সিনেমার কথা বলেছেন নন্দিত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম
১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'পথের পাঁচালী'। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'পথের পাঁচালী' অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। অপু ত্রয়ী চলচ্চিত্র-সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীর মুখ্য চরিত্র অপুর শৈশবকে কেন্দ্র করে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের জীবনধারা চিত্রায়িত করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে নিশ্চিন্দিপুর নামক বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপু [সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়] ও তার পরিবারের জীবনযাত্রার কথাই পথের পাঁচালী ছবির মুখ্য বিষয়।
সুবর্ণরেখা
ঋত্বিক ঘটকের অমর সৃষ্টি 'সুবর্ণরেখা' ১৯৬২ সালের শেষ দিকে নির্মিত হলেও তা মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালে। জে জে ফিল্মস্ করপোরেশন প্রযোজিত এই ছবিটির গল্পকার যৌথভাবে ঋত্বিক ঘটক এবং তার বন্ধু রাধেশ্যাম ঝুনঝুনওয়ালা। সাতচল্লিশ সালের দেশভাগের পটভূমিকায় গ্রন্থিত পূর্ব পাকিস্তান থেকে উঠে আসা হিন্দু উদ্বাস্তু সমাজের দুঃখ দুর্দশা ও তাদের জীবন সংগ্রামের নানা ওঠাপড়ার ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় 'সুবর্ণরেখা'। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অভি ভট্টাচার্য, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য, বিজন ভট্টাচার্য, পীতাম্বর, ইন্দ্রানী চক্রবর্তী, শ্রীমান তরুণ প্রমুখ।
জীবন থেকে নেয়া
১৯৭০ সালে মুক্তি পায় জহির রায়হান পরিচালিত 'জীবন থেকে নেয়া'। এটি শুধু সাধারণ কোনো সিনেমা নয়। এ সিনেমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের কথা। বাংলার মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা। 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে বাংলার অতি সাধারণ এক পরিবারকে কেন্দ্র করে। দুই ভাই আনিস [শওকত আকবর] ও ফারুক [রাজ্জাক], বড়বোন রওশন জামিল এবং বোনের স্বামী খান আতাউর রহমান। বড়বোন রওশন জামিল বিবাহিত হলে কী হবে? তিনি থাকেন বাবার বাসাতেই। তার স্বামীও অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। সংসারের সব ক্ষমতা রওশন জামিলের হাতেই। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তিনি তার স্বামীসহ নিজের দুই ভাইয়ের ওপর এক রকম নির্যাতনই চালিয়ে থাকেন। আঁচলে চাবির গোছা নিয়ে ঘোরেন তিনি। পেছনে পেছনে পানের বাটা নিয়ে ঘোরে বাড়ির গৃহপরিচারিকা। তার দোর্দণ্ড প্রতাপে অস্থির সবাই। এ ছবিতে মূলত সাধারণ এক পারিবারিক গল্পের আড়ালে এক রাষ্ট্রের গল্প বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার এবং সংগ্রামের কথা। তাই এ সিমেটিকে সবাই আমাদের মুক্তির আন্দোলনেরই একটা বড় অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এই সিনেমাতেই অমর একুশের 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' গানটি যেমন ছিল ঠিক তেমনি কাজী নজরুল ইসলামে 'কারার এ লৌহ কপাট' গানটিও ব্যবহার করা হয়েছিল।
সুজন সখী
'সুজন সখী' মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালের ৬ অক্টোবর। 'প্রমোদ কর' ছদ্মনামে ছবিটি পরিচালনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। ছবির কাহিনি ও সংলাপ লিখেছেন আমজাদ হোসেন, চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক নিজেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে দুই ভাইয়ের আলাদা হয়ে যাওয়া এবং তাদের মিলনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। অভিনয় করেন ফারুক, কবরী, খান আতাউর রহমান, ইনাম আহমেদ, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, টেলিসামাদ প্রমুখ।
গোলাপী এখন ট্রেনে
১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় আমজাদ হোসেন পরিচালিত 'গোলাপী এখন ট্রেনে'। গাঁয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি মণ্ডল। তার ছেলে মিলন পছন্দ করে দরিদ্র গায়েনের মেয়ে গোলাপীকে। একদিন মণ্ডলই গোলাপীর বিয়ের জন্য খোঁজ দেয় এক পাত্রের। কিন্তু বিয়েতে সাইকেল দিতে হবে। নিজের মনকে বশ করে গোপনে সাইকেলের টাকাটা দেয় মিলন। তবে শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় বিয়ে। এ কারণে আত্মহত্যা করে গোলাপীর বাবা। দারুণ অভাবের মধ্যে পড়ে সংসার। এর হাল ধরতেই ট্রেনে চড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে গোলাপী। গাঁয়ের মোড়লরা ভালো চোখে দেখে না গোলাপীর এ কাজ। যারা ট্রেনে কাজ করে গ্রাম থেকে তাদের বের করে দেওয়ার জন্য বসে সালিশ। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা, ফারুক, আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ, আনোয়ারা, রওশন জামিল, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন