
সাবিনা ইয়াসমিন
সাবিনা ইয়াসমিন। বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী। আজ বিশ্ব সংগীত দিবস। এ দিন, বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তার সঙ্গে-
ভিন্ন এক পরিবেশে আজ বিশ্ব সংগীত দিবস পালিত হচ্ছে। এ দিনের আয়োজন নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
নিজে আলাদা করে কিছু ভাবিনি। করোনাভাইরাসের কারণে গোটা পৃথিবী এখন স্থবির। কয়েক মাস ধরে গানবাজনা বন্ধ। সংগীতের মানুষদের দুঃসময় চলছে। যেজন্য এবার দিবসটি নিয়ে তেমন আয়োজন নেই বললেই চলে। তবে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে অনলাইনে পাঁচ দিনের একটি আয়োজনের কথা শুনেছি। সবকিছুই হবে ঘরে বসে। সাদামাটাভাবে দিবস পালন করা হলেও তাদের আয়োজনের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা আছে। প্রতি বছরের মতো বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের গান শোনানো হচ্ছে না এবার। তারপরও বিশ্ব সংগীত দিবসের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে পেশাদার মিউজিশিয়ানদের জীবনে কতটা প্রভাব পড়বে বলে আপনি মনে করেন ?
গানবাজনা বন্ধ থাকায় মিউজিশিয়ানদের দুর্দিন যাচ্ছে। শো থাকলে তাদের আয় হয়। শো না থাকলেও শিল্পীরা হয়তো আরও কিছুদিন চলতে পারবেন। কিন্তু করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে মিউজিশিয়ানদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এরই মধ্যে শুনেছি, অনেকের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, অনেকেই বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না। আমি বিশ্বাস করি, দুর্যোগ একসময় কেটে যাবে। কিন্তু এটা ভেবে তো হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। এ দুঃসময়ে সবারই উচিত যেসব মিউজিশিয়ান অসহায় অবস্থায় আছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো।
ক্যারিয়ারে অসংখ্য গান করেছেন। নিজের গাওয়া সবচেয়ে পছন্দের গান কোনগুলো?
এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার গান করেছি। এর মধ্যে পছন্দের গান আলাদা করা খুবই মুশকিল। তবে 'জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো', 'সবকটা জানালা', 'এই মন তোমাকে দিলাম', 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো', 'একি সোনায় আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে' গানগুলো বারবার গাইতে ইচ্ছা করে।
দেশে শুদ্ধ সংগীত. চর্চা কেমন হচ্ছে বলে মনে করেন?
অসংখ্য খ্যাতিমান শিল্পী, সংগীত সাধকের জন্ম এদেশে; তারপরও শুদ্ধ সংগীতের চর্চা ও আসর খুব একটা চোখে পড়ে না। মাঝে মাঝে উৎসবের কথা শোনা যায়। ক্ল্যাসিকালের ওস্তাদও তেমন নেই। শিল্পীরা শিখবে কীভাবে। এ ব্যাপারে শিল্পকলারও কোনো ভূমিকা দেখছি না। একজন সংগীতশিল্পীর ভিত তৈরি হয় ক্ল্যাসিকাল দিয়ে। সেটা যদি পাকাপোক্ত না হয় তাহলে শিল্পী হিসেবে তার টিকে থাকা কঠিন হবে।
সংগীতাঙ্গনে তরুণদের কাজ কেমন বলে মনে হয়?
তরুণ প্রজন্ম অনেক ভালো করছে। আজ যারা তরুণ, কাল তারা তারকা হবে না- এমন তো কোন কথা নেই। আমি সব সময় তরুণদের সাহস দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে টিকে থাকতে হলে সাধনা করতেই হবে। মৌলিক গানের ওপর আরও জোর দিতে হবে। কারণ নিজের গান না থাকলে টিকে থাকা যায় না। জোর দিতে হবে ভালো কথা ও সুরের দিকে।
কবরীর 'এই তুমি সেই তুমি' ছবিতে প্রথমবার সংগীত পরিচালনা করছেন। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
হঠাৎই সংগীত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া। অনেকদিন থেকে কবরী বলছিলেন, আমি যেন তার ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব নিই। কবরী আমার পুরোনো বন্ধু। তাই তার অনুরোধ ফেলতে পারিনি। তাছাড়া ছবির পরিচালক যেহেতু কবরী, তাই স্বাধীনভাবেই কাজের সুযোগ থাকছে। আমার সুর ও সংগীতে অন্য শিল্পীরা গাইবেন, এটা ভেবেও এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছিল। এরই মধ্যে গানের কাজ শুরু করেও ছিলাম; কিন্তু করোনার কারণে ছবির শুটিংসহ সব কাজই স্থগিত রাখতে হয়েছে।
সংগীত জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কখনও ভেবেছেন?
গান গেয়ে অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা ও অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছি। একজন শিল্পীর এর বেশি আর কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না। আমিও কোনো প্রাপ্তির আশায় কখনও গান করিনি। যতদিন বেঁচে থাকি মন-প্রাণ উজাড় করে গাইতে চাই। তারপরও একটা আক্ষেপ আছে, রয়্যালিটি নিয়ে। যারা আমাদের গান নিয়ে ব্যবসা করে টাকার পাহাড় গড়েছে, তারা কখনও শিল্পীদের প্রাপ্য রয়্যালিটি দেয়নি। আমরা তো কিছু পেলামই না, পরবর্তী প্রজন্ম কতটুকু পাবে এটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমাদের সময় যদি রয়্যালিটি চালু হতো তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীরাও পেত।
মন্তব্য করুন