- বিনোদন
- 'আমাকে কাঁদানোর জন্য মা সত্যি সত্যি চড় মেরেছিলেন'
'আমাকে কাঁদানোর জন্য মা সত্যি সত্যি চড় মেরেছিলেন'

ইয়াশ রোহান ছবি ::নাজমুল হোসাইন হিমেল
'তখন আমার বয়স চার কি পাঁচ। বাবার একটি নাটকে আমাকে কাঁদতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই কাঁদতে পারছিলাম না। তখন আমাকে কাঁদানোর জন্য মা সত্যি সত্যি চড় মেরেছিলেন। মায়ের চড় খেয়ে কান্না চলে আসে এবং সেই দৃশ্যটি চিত্রায়ণ করা হয়- এভাবেই নিজের অভিনয় নিয়ে বলছিলেন এ সময়ের তরুণ অভিনেতা ইয়াশ রোহান।
অভিনয়ের মাধ্যমেই বাস্ততার চিত্র ফুটে ওঠে আর বাস্তব জীবনের একটা অংশই অভিনয়। এটা ইয়াশ বুঝতে পেরেছিলেন ছোট বেলাতেই। বাবা অভিনেতা ও লেখক নরেশ ভূঁইয়া এবং মা অভিনেত্রী শিল্পী সরকার অপু। দু'জনেই দেশের স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী। তাই পারিবারিক সূত্রে অভিনয়ের সঙ্গেই বেড়ে ওঠেন ইয়াশ। ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার অভিনয় দেখে বড় হয়েছেন। তাই তো তার অভিনীত প্রতিটি কাজের মধ্যে রয়েছে নিজস্বতা। যার কারণে খুব অল্প সময়ে অর্জন করেছেন দর্শকপ্রিয়তা; যা ঈর্ষণীয়। এরই মধ্যে ইয়াশ তার ভক্তদের উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় নাটক, বিজ্ঞাপন, ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা।
ইয়াশ বলেন, 'আমি সাংস্কৃতিক মণ্ডলে বেড়ে উঠেছি। যে জন্য এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দুর্বলতা ছিল সব সময়। তাই তো সিনেমাটোগ্রাফার, নির্মাতা কিংবা এডিটিংয়ের কাজের বিষয়টি মাথায় রেখেছি। মোট কথা, কোনো না কোনোভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িত থাকতে চেয়েছি সবসময়। তবে অভিনয় করব এটা ভাবিনি। ছোটবেলায় বাবার প্রোডাকশনে কাজ করেছি ঠিকই, তবে কখনও অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। কোকা-কোলার একটা বিজ্ঞাপনে কাজও করেছিলাম। তারপর আরও কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করি। এরপর যখন গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'স্বপ্নজাল' ছবিতে অভিনয় করলাম, তখন থেকে অভিনয় উপভোগ করতে শুরু করি। কেউ গল্প বলছে এবং সেই গল্পের একটা ক্যারেক্টার প্লে করতে পারছি- এ বিষয়টি আমার কাছে খুব ভালো লাগে এবং দর্শকরাও আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তারপর মনে হলো, অভিনয় নিয়মিত করব। আমি আসলে সেই ধরনের কাজই করি, যে কাজগুলো মনে হয় আমি যদি দেখতাম তাহলে আমিই এনজয় করতাম। এখন আমি অভিনেতার পাশাপাশি নির্মাতাও হতে চাই। নির্মাণের ইচ্ছা আছে, প্রস্তুতিও আছে।'
ইয়াশ সম্প্রতি অভিনয় করেছেন মফস্বল শহরের ক্রিকেটারের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত 'ম্যাচ উইনার' নামের ওয়েব সিরিজে। এটি পরিচালনা করেছেন আবু হায়াত মাহমুদ। এতে তাকে দেখা যাবে রকিবুল নামের এক ছেলের ভূমিকায়। যে ভালো ক্রিকেট খেলে। একদিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেট কোচের চোখে পড়ে, ঢাকায় আসে। ঢাকা আসার পর নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। এই সিরিজটি নিয়ে ইয়াশ বলেন, 'বর্তমানে ওটিটিতে যেসব কাজ হচ্ছে এগুলো ৮ থেকে ১০ পর্বের। কিন্তু ম্যাচ উইনার ২৬ পর্বের। সে ক্ষেত্রে গল্পের পরিধিও অনেক বেশি। অনেক দিন পর এত বড় একটা গল্প নিয়ে কাজ করছি। এত বড় গল্প আমরা সচরাচর সিনেমা ছাড়া করি না। ম্যাচ উইনার গল্পের সঙ্গে মানুষ অনেক বেশি কানেক্ট করতে পারবে। এখনকার যে ধরনের কাজ ওটিটিতে দেখি, সেগুলো মূলত থ্রিলার বেইজড। এ সিরিজটি গতানুগতিক গল্প থেকে ভিন্ন স্বাদের। রয়েছে পারিবারিক, সামাজিক ও আনুষঙ্গিক বিষয়। এটি আমাদের আশপাশের ক্রিকেটের গল্প। ক্রিকেট খেলার সঙ্গে জীবনকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে গল্পে ও সংলাপে ভিন্নতা আনা হয়েছে। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। গল্প ও চরিত্র মিলে আশা করছি ওয়েব সিরিজটি দর্শকদের ভালো লাগবে। যে কোনো কাজে নির্মাতা যদি শিল্পীকে সঠিকভাবে গাইড দেন, তাহলে সেই কাজের আউটপুট অনেক ভালো আসে। ওই ওয়েব সিরিজের নির্মাতার কথা বলতেই হবে। অসাধারণ একজন নির্মাতা তিনি। আমাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন।'
পেশার বাইরে সবারই কমবেশি শখ থাকে। ইয়াশ রোহান রান্না করতে এবং ঘুরতে খুব পছন্দ করেন, ফুটবলের প্রতি রয়েছে অসম্ভব দুর্বলতা। ভবিষ্যতে সময়-সুযোগ হলে ক্রস কান্ট্রি ট্রিপ দেওয়ার খুব ইচ্ছা তার। সেটি দেশে হতে পারে, দেশের বাইরেও হতে পারে। শিক্ষকতা পেশাও খুব পছন্দ করেন। ছয় বছর এই পেশায় ছিলেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং অভিনয়ের ব্যস্ততার কারণে ছাড়তে হয়েছে। ঈদে টেলিভিশনের বেশ কিছু কাজ করছেন। আড্ডা টাইমসের জন্য তানিম পারভেজের একটি ওয়েব সিরিজ সম্প্রতি শেষ করেছেন। পাশাপাশি 'নেটওয়ার্কের বাইরে' নামে একটি ওয়েব সিরিজ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আপাতত অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওয়েব সিরিজে মনোযোগ তার। ভালো গল্পে কাজ করতে চান সব সময়।
মন্তব্য করুন