- বিনোদন
- 'দেশে গুণী নির্মাতা ও গল্পকারের অভাব নেই, অভাব বাজেটের'
'দেশে গুণী নির্মাতা ও গল্পকারের অভাব নেই, অভাব বাজেটের'

'দর্শকের কাছে যখন একটি ইমেজ তৈরি হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। অনেকে আবার ইচ্ছা করেই সেই ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসতে চান। আমিও সেই দলের একজন। এমন নয় যে, শুরু থেকেই এই ভাবনা নিয়ে অভিনয় শুরু করেছিলাম। আমার প্রথম দুটি ছবি 'আয়না' ও 'খেলাঘর' দর্শক প্রশংসা পাওয়ায় মূলত আমার ভাবনার জগৎ বদলে গিয়েছিল। দুর্বলতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল এমনসব ছবির প্রতি, যার চরিত্রগুলো দর্শক মনে নাড়া দেবে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে সংশয় ছিল, সেসব ছবিতে আমাকে কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, তা নিয়ে। কারণ দর্শকও অন্যসব ছবির অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে আমার তুলনা করেননি। সেসব দেখেই বুঝেছি, দর্শকহৃদয় জয় করতে সংখ্যা নয়, কাজের মান নিয়েই ভাবতে হবে। এদিক থেকে আমি ভাগ্যবান, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে গুণী কিছু নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তাদের কাছে যা কিছু শিখেছি, তা আমাকে পথচলার দিকনির্দেশনা তৈরি করে দিয়েছে।' এক নিঃশ্বাসে বলে যাওয়া সোহানা সাবার এ কথা থেকে বোঝা যায়- কেন তিনি অন্যান্য শিল্পীর মতো স্রোতের জোয়ারে গা ভাসাতে চাননি।
এতে অবশ্য একদিকে সাবাকে লাভবান বলা যায়। কেননা তিনি গৎবাঁধা গল্পের ছবির বদলে যেসব কাজ নির্বাচন করেছেন, সেখানে নিজেকে ভেঙে প্রতিবার নতুনভাবে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। প্রথম দুটি ছবির সূত্র ধরে 'প্রিয়তমেষু', 'চন্দ্রগ্রহণ', 'বৃহন্নলা' থেকে শুরু করে কলকাতার 'ষড়রিপু'সহ বেশ কিছু ছবিতে ভিন্ন ধাঁচের অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে। শুধু চলচ্চিত্র নয়, টিভি নাটকে অভিনয়ের বিষয়ে আলাদা বাছ-বিচার আছে সাবার। এদিক থেকে তাকে একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের বললেও ভুল হবে না। সাবা নিজেও সে কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, 'অনেক কাজের ভিড়ে যদি দর্শকের মনে ছাপ ফেলার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে কাজের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কী? কোনো লাভ নেই। অভিনয় ক্যারিয়ারে আমি এটাই বুঝেছি যে, দিনশেষে দর্শক ভালো কাজের কথাই মনে রাখে। তাই সে কাজগুলোই করতে চাই, যেগুলো আমার শিল্পীসত্তাকে খুশি করবে।'
সাবার এ কথায় স্পষ্ট যে, ভালো কাজের মধ্য দিয়েই তিনি শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে চান। এখন প্রশ্ন হলো, চলচ্চিত্রের মতো টিভি নাটকে কি ভালো গল্প, চরিত্র ও নির্মাতার অভাব আছে, যেজন্য এই মাধ্যমে তাকে কম দেখা যায়? এর জবাবে সাবা বলেন, 'এদেশে গুণী নির্মাতা ও গল্পকারের মোটেও অভাব নেই। অভাব ভালো বাজেটের। আমি অবাক হই এটা দেখে যে, শিল্পী সম্মানী দেওয়ার পর যা থাকে, তা দিয়ে কীভাবে নাটক নির্মাণ করছেন নির্মাতারা। এ এক বিস্ময়কর কাজ, জানি না, দিনের পর দিন কীভাবে এত অল্প বাজেটে নাটক নির্মিত হচ্ছে। এই বাজেট স্বল্পতার কারণে ভালো কাজের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এদেশে তো প্রতিভাবান নির্মাতা, নাট্যকার, শিল্পীর অভাব নেই। তারপরও বাজেট কমিয়ে ভালো কাজের প্রত্যাশাই বা কেন? এসব দেখেই টিভিতে কাজ করার ইচ্ছা হয় না। তার পরও কাজ যে একেবারেই করছি না, তা নয়। করছি, যেখানে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ হচ্ছে, দর্শককে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা আছে- সেসব কাজ করছি।'
এ তো গেল অভিনেত্রী সাবার কথা, এবার আসা যাক নাট্যকার, প্রযোজক ও নির্মাতা সাবা প্রসঙ্গে। নাটক রচয়িতা হিসেবে সাবার নাম অনেক আগেই টিভি পর্দায় ভেসে উঠেছে। এবার দেখা মিলেছে প্রযোজক ও নির্মাতা সাবার। সম্প্রতি 'টুইন রিটার্নস' নামের একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছেন। এটি মুক্তি পেয়েছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জ-এ। কাজের বিষয়ে সাবার ভাবনা কী, সেটা বলাই হয়েছে। তাই এবার তার কাছে প্রশ্ন ছিল প্রযোজক ও নির্মাতা হিসেবে অনলাইনকে কেন প্রাধান্য দিচ্ছেন? এর জবাবে তিনি বলেন, 'ভালো কিছু করে দেখাতে চাইলে সেই মাধ্যমই বেছে নেওয়া উচিত, যেখানে ভালো কাজের জন্য নিয়মিত প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্বজুড়ে এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরীক্ষাধর্মী কাজও থেমে নেই। সেখানে দর্শক টাকা খরচ করে সিনেমা, সিরিজসহ বিভিন্ন আয়োজন দেখছেন। তাই কেউ চাইবেন না, টাকা খরচ করে সাধারণ মানের কাজ দেখতে। এ জন্য বড় বাজেটে বেশির ভাগ কাজ হচ্ছে। এতে কাজের মান যেমন বাড়ছে, তেমনি সম্ভাবনার পথও তৈরি হয়েছে। আমিও তাই নির্মাণ বিষয়ে এই মাধ্যমকে প্রাধান্য দিচ্ছি।'
প্রযোজক সাবার কথা হলো, এবার আসি সেই সোহানা সাবা প্রসঙ্গে যিনি 'সাবা'স কনফেশন বক্স' অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের নানা ধরনের সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গ তুলতেই সাবা হেসে বলেন, 'আমি আসলে একসঙ্গে অনেকের কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পারি না। মাঝে 'টুইন রিটার্নস' নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় 'সাবা'স কনফেশন বক্স' অনুষ্ঠানটি নিয়মিত করতে পারিনি। শুধু তাই নয়, আরও যেসব ভালো লাগা ডিজাইনের কাজ, লেখালেখি- অনেক কিছুই থেমে ছিল। আর এখন যেহেতু অভিনয় ও নতুন বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা করছি, অন্য বিষয়ে একদমই ভাবতে পারছি না।' অনেক কিছুর পর যখন কোনো একটি কাজকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়, তাহলে কোনটি বেছে নেবেন? এর উত্তরে সাবা বলেন, 'অভিনয়ের কথাই সবার আগে বলব। কারণ মিডিয়ায় পা রাখার আগেই আভিনয় নিয়ে ভাবতাম। অভিনেত্রী হওয়ার জন্য নয়, আমাকে ভাবাত একজন মানুষ কীভাবে একেক সময় একটি চরিত্র হয়ে দর্শককে ভাবিয়ে তোলে, আনন্দ দেয়, কাঁদায়, হাসায়- এসব বিষয়। আর অভিনয়ে আসার পর যখন এই বিষয় নিজের কাছে স্পষ্ট হলো, তখনই অভিনয়ের মাঝে ডুবে থাকার বাসনা প্রবল হয়ে উঠেছে।'
মন্তব্য করুন