- বিনোদন
- 'রবিবারে জন্ম নিয়েছিলাম বলে সবাই ডাকত রবিবাবু'
'রবিবারে জন্ম নিয়েছিলাম বলে সবাই ডাকত রবিবাবু'

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। খ্যাতিমান অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী। পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্রে। বেতার ও যাত্রা মাধ্যমেও অভিনয় করেছেন। অভিনয় জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা ও অন্যান্য বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন
সুদীর্ঘ মিডিয়া ক্যারিয়ারের এই সফর কেমন ছিল?
ভালো-মন্দ মিলিয়েই অভিনয় জীবনের এই সফর, যা এখনও শেষ হয়নি। ক্যামেরার সামনে অনেক কিছু শিখেছি, এখনও শিখছি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ঘটনাবহুল। নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে দিনরাত একাকার। আর তা করতে গিয়েই কত মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠল বন্ধুত্ব! যারা ছিলেন খুব কাছের। একসঙ্গে যারা পথচলা শুরু করেছি, তাদের অনেকে বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে। তবু এই পথচলা থামেনি। সময়ের সঙ্গে আমিও হেঁটেছি; জানি না কতটা পথ পেরোতে পারব। তবে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে পেয়েছি অগণিত দর্শকের ভালোবাসা, আরও অনেক কিছু।
আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠার কথা বলুন।
আমার জন্ম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে, ১৯৪৬ সালের ২৮ জুলাই। ৯ ভাইবোনের মধ্যে আমি অষ্টম। বাড়িতে সবাই খোকন নামে ডাকত। রবিবার জন্মেছি বলে সবাই ডাকত রবিবাবু। বিরাট আটচালা বাড়ি ছিল আমাদের। তার সামনেই বড় মঞ্চ। বছরে দুটি নাটক আর যাত্রা হতো। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে মঞ্চে উঠেছি। যাত্রাদলের এক শিশু অভিনেতা অসুস্থতার কারণে আসেনি। যাত্রায় বিবেকের চরিত্রে অভিনয় করবেন আমার কাকা। তার সঙ্গে মন্দিরা বাজাবে কে? তাই পরচুলা দিয়ে বাউলের ঝুঁটি আর গেরুয়া লুঙ্গি পরিয়ে আমাকে উঠিয়ে দেওয়া হলো মঞ্চে। আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল নদী। সেখানে হতো নৌকাবাইচ। সব মিলিয়ে গ্রামে সারাবছর উৎসবের আমেজ। এসব কথা মনে হলে হারিয়ে যাই অন্য ভুবনে। ফেলে আসা দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মতো। আগে গ্রামীণ সমাজ অনেক সুসংহত ও মানবিক ছিল; এখন নেই।
সম্প্রতি ৭৬ বছরে পা রেখেছেন। এই সময়ে এসে জীবনকে কীভাবে দেখেন?
জীবনকে জীবনের মতোই দেখি। আমাদের দ্বান্দ্বিক জীবন। দ্বন্দ্ব আছে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই দ্বন্দ্বে ভরা। এর ফলে অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন হয়। তারপর জন্ম নেয় নতুন মুহূর্ত।
অনুদানের ছবি '১৯৭১ সেইসব দিন' ছবিতে অভিনয় করছেন...
অনেক যত্ন নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করছেন হূদি হক। একটি পরিবারের অভিভাবকের ভূমিকায় আমি অভিনয় করেছি। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও হূদি চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছবিটি করছেন। এখনকার দিনে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ভালো ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়। এ টাকায় ভালো ডকুমেন্টারি হয়, কিন্তু ফুল ফিচার ফিল্ম করা সম্ভব নয়। এটি যেহেতু পিরিয়ডিক ছবি; এ ধরনের ছবির জন্য অন্তত এক কোটি টাকা দরকার।
নতুন নির্মাতাদের কাজ কেমন মনে হয়?
নতুন নির্মাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কেবল দর্শক বিনোদন নয়, একটি কাজ কতটা সৃজনশীল হতে পারে, তার নমুনাও তারা তুলে ধরছেন।
নিজের কাজ নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
ছোট বা বড় পর্দা, যেখানেই কাজ করি, সব সময় তা আত্মতৃপ্তি এনে দিতে পারে না। নিজ ইচ্ছায় সবকিছু করাও সম্ভব হয় না। পেশাদারিত্বের কারণে অনেক কাজেই আত্মতৃপ্তির অভাব থেকে যায়। কিন্তু চরিত্র যেমনই হোক, আমি মনোযোগ দিয়ে তা বিকশিত করার চেষ্টা করি।
টিভি নাটকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
এই করোনাকালে টিভি নাটকের চ্যালেঞ্জ প্রকট। ১০-১২ বছর আগ পর্যন্ত টিভি নাটক স্ট্যান্ডার্ড ছিল। এখন তা নেই। হালকা ধরনের নাটকই বেশি হচ্ছে। কমেডি নামে হচ্ছে ভাঁড়ামি। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য চলছে। তাদের রুচিমতো নাটক ও অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। আগে প্রতিটি চ্যানেলে কোয়ালিটি কন্ট্রোল সেল ছিল। এখন সেটা নেই। সব চলে গেছে এজেন্সিদের হাতে। পয়সা কামানোর লক্ষ্যে এজেন্সি যা-তা করছে। চ্যানেলগুলো যতদিন পর্যন্ত নিজেরা রেভিনিউ না পাবে, ততদিন মান উন্নয়ন হবে না।
আবৃত্তিচর্চার কথা বলুন...
আবৃত্তি আমার প্রাণের খোরাক। এই একটা কাজ, যা নিয়ে অনেক বেশি ভাবনাচিন্তা বা পরিকল্পনা করি। অভিনয়ের ব্যস্ততায় নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারিনি। এ ছাড়া করোনার কারণে এরই মধ্যে আবৃত্তি নিয়ে নতুন কোনো আয়োজন সম্ভ্ভব হয়নি।
অবসর কাটে কীভাবে?
একজন শিল্পীর জীবনে অবসর বলতে কিছু নেই। তবু সময় পেলে লেখালেখি করি। তিনটি ভলিউমে আত্মজীবনী লিখেছি। বেশিরভাগ সময় ক্লাসিক্যাল গান শুনি; ছবি ও খেলা দেখি।
মন্তব্য করুন